অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Thursday, April 15, 2021

পরমাণু - প্রিয়-নায়ক-কবি-নাসিরা খাতুন

 

 প্রিয়-নায়ক-কবি

নাসিরা খাতুন



প্রিয়

মেঠো পথেই দেখেছিলাম

সরল কচি মুখ।

আজও তারই ছবি দেখে

পাই যে সর্ব সুখ ।।


নায়ক

শুধাও যদি আমায় তুমি

তোমার গল্পের নায়ক কে ?

অমনি হেসে বলবো আমি

যার সাথে মোর জীবন চলা ।।

 

কবি

কবিতা আমার কবিতা তোমার

কবি মোরা সবাই ভাই ।

যদি ভাবনা দিয়ে দু-চার লাইন

লিখতে মোরা পাই ।।

Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP

। নববর্ষ-১৪২৮| Aleekpata.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|Bengali New Year Issue, 2021 | April -July 2021| 
| Fifth Year  First  Issue |27 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |


 

কবিতা-ক্লান্তির ঘুম -ইরান মন্ডল

 

ক্লান্তির ঘুম

ইরান মন্ডল

 

ক্লান্ত শরীর, ক্লান্ত মন -

কী করি বলো এখন?

চোখ যেন অনন্ত সুখ দেখতে চায়;

মন যেন হারানো সুর ফিরে পেতে চায়।

কোথায় পাবো এমন চিরন্তন সুখ, এ বিশ্বভুবনে?

কোথায় আছে বলো ?

আমার শুধু চাই একটু শান্তি,

তার বদলে দেবো আমি ভালোবাসা, অগুনতি!

ঘুম-ই যে এখন আমার একমাত্র সঙ্গী।

কিন্তু সে যে কোথায় গেলো, কে হয়েছে তার সঙ্গী?

জানিনা।

আমি হাঁদার মতো তার অপেক্ষায় আছি...

আর বলি-

ঘুম চলে আয়।

-তোরে কেন এতো ডাকতে হয়?

বুঝিনা!

এ শরীরের ক্লান্তি দূরীকরণে, তোকে যে একান্তই প্রয়োজন।

কে বুঝবে কি চায় আমার মন-

প্রিয় মানুষ তো নেই, যে করিবে তার নিরূপণ।

তাই অসহায় মনে, ক্লান্তি দূরীকরনে-

তোর কাছে নিতে হয় আমার আশ্রয়।

তাই বলি- তুই থেকে যাস্ না হয়,

কয়েকটা দিন, প্রিয় ঘুম।"

Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP

। নববর্ষ-১৪২৮| Aleekpata.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|Bengali New Year Issue, 2021 | April -July 2021| 
| Fifth Year  First  Issue |27 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |


অলৌকিক- আনন্দস্বরূপা - শ্যামাপ্রসাদ সরকার

 

আনন্দস্বরূপা

শ্যামাপ্রসাদ সরকার

 

আর একদিন পর থেকেই এ বৎসরের মতো কার্তিকী কৃষ্ণপক্ষের শুরু। আর সেই রোরুদ্যমানা ভয়াল অন্ধকারেই আসন্ন বহুকাঙ্খিত দীপাবলির মহাপূজার ক্ষণটি।

 

এর একটি মাস আগে থেকেই পিতৃলোকের আরাধ্য দেহাত্মাগণ তাঁদের বংশজদের উত্তরণ ঘটাতে এই মর্ত্যভূমিতে অবতরণ করেন আর তাদের হাতে তিলাঞ্জলির পিপাসা নিবারণের পর বংশধরদের ইহজীবনটি ধন্য করেন। এবারে কিন্তু মাসাধিককালের অন্তে তাঁদের উন্মার্গগমনের সেই পরম সময়টি ক্রমেই যে উপস্থিত তা তো আর কারো অজানা নয়!

 

মধ্যরাত এখন অতিক্রান্ত। বাতাসে কার্তিকের ঈষৎ শৈত্য মৃদুমন্দ আভাসে জানিয়ে দিচ্ছে এবারে আদিত্যদেবের অতিপরিচিত সেই দক্ষিণায়ণটির ক্রমপ্রাবল্য।

 

এদিকে এক পর্ণকুটিরের সামনে সুরধ্বনিময় গঙ্গার বুকে কান পাতলে ক্রমে আবার যেমন একটি নতুন জোয়ারস্রোতের কলস্বর শোনা যাচ্ছে বটে আবার সেই গৃহকর্তাটি অন্য রাতগুলির মত এ রাতেও একেবারে বিস্রস্ত, সুপ্তিহীন,বিনিদ্র ও অটলগম্ভীর। মহানিশার এই বিছানায় সুষুপ্ত সব প্রতিবেশী আর পরিবারের লোকজনদের কথা বরং আজ থাক।

 

এখন আমাদের ওই গৃহকর্তা স্বয়ং কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে নিয়েই ক্রমে অগ্রসর হওয়াই ভাল।

 

একদা তিনিও নবদ্বীপরত্ন শ্রীচৈতন্যের সহপাঠী ছিলেন বলে শ্লাঘা বোধ করেন। যদিও সে মহাযুগ এখন ইতিহাসের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে, যখন তিনি, রঘুনন্দন শিরোমণি, রঘুনন্দন ভট্টাচার্য ও শ্রী গৌর একই টোলে নানা জটিল শাস্ত্র অধ্যয়ন করতেন আর বহু তাত্ত্বিক বিতর্ক বাঁধিয়ে তাবড় সব পূর্বতন নৈয়ায়িকদের দর্পচূর্ণ করতেন এই শান্তিপুর-নবদ্বীপে অবস্হান করে। চোখ বুজলে এককালে যে তাঁরও সেই বহ্নিসদৃশ কিশোর গৌরহরির মধ্যে যে একটা প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল তা যেন আজও বিস্মরণে তিনি অক্ষম।

 

পরবর্তীকালে তাঁর সতীর্থটি বৃন্দাবনাশ্রিত সখীভাবে কৃষ্ণভজনের পথে গেলে, দুজনের মধ্যে আদর্শগত মনোমালিন্য হয় ও কৃষ্ণানন্দ তখন শাক্ত পথ অবলম্বন করেন। অবশ্য প্রিয়বন্ধু গৌরের এই নতুন শ্রীচৈতন্যরূপটি যদিও তিনি একদা রামকেলীর আসরে দূর থেকে একবার দেখে অশ্রুমার্জনা করে নীরবে ক্ষমা চেয়ে এসেছেন নিজে, শেষ পর্যন্ত দূরবর্তী দর্শকের আসন থেকেই।

 

***

 

গত নিশাকালটি মনোরম হলেও তিনি এখন বড়ো উতলা। তিনি আসলে মনের মধ্যে কেবল খুঁজে চলেছেন নিভৃত সমর্পণের আদর্শ সেই পরমআরাধ্যা অতিগূহ্য চিন্ময়ীর মাতৃস্বরূপটি।

যা বহু কঠিন শাস্ত্রমন্থনেও সেই রূপটি যে এখনো তাঁর নিজেরই অধরা।

 

আসলে চৈতন্য-পরবর্তী যুগে, যখন ধীরে-ধীরে বৈষ্ণব-আধিপত্য কমে আসছে স্বয়ং ভিত্তিভূমি নবদ্বীপে, তেমনই এক সময়ে সাধক হিসাবে আত্মবিকাশ "আগমবাগীশ কৃষ্ণানন্দে"র।

 

বাংলায় শক্তিচর্চাও তখন বিক্ষিপ্ত, অধোগামী। হাল ধরতে এলেন আগম-নির্গম সব তন্ত্রের সারাৎসার যাঁর ধমনীর মধ্যে সেই তিনিই। বিভিন্ন তন্ত্রশাস্ত্র ঘেঁটে, রচনা করলেন ‘তন্ত্রসার’। লোকে তখন থেকেই " আগমবাগীশ" বলে তাঁর কাছে গুরুজ্ঞানে প্রণত হয়।

 

কিন্তু মেজাজটি আর সাধকোচিত বশে নেই। থেকে থেকেই অকারণ অস্হির লাগছে বড়োই।স্বয়ং চিদানন্দস্বরূপা রূপপ্রকাশের খেলাটিতে কি তবে সত্যিই তাঁর প্রতি নিছক অনুদার?

 

মনের মধ্যে গুঞ্জরিত হয় এযাবৎ চর্চিত সেই শাস্ত্রবাক্যগুলি। আজ অজানিতেই সেগুলিকে সর্বতঃ ব্যর্থ বলেই তবে কেন মনে হচ্ছে কৃষ্ণানন্দের?

 

একটু ধীরগতিতে এসে তিনি সেই পূণ্যসলিলা গঙ্গোদকে পাদস্পর্শ করলেন। তারপর কিঞ্চিৎ স্বচ্ছতোয়ার ধারা হাতে তুলে এবার যেন নিজের মাথায় ছিটিয়ে আত্মশুদ্ধি করলেন।

 

নাহ্ ! তাঁর যে আর আজকাল নিদ্রাই যে আর আসেনা। অথচ স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী ব্রাহ্মপ্রত্যূষে নিদ্রাভঙ্গের পরই তো সেই কাঙ্খিত মাতৃমূর্তিটি প্রকট হওয়ার কথা। তারই প্রলোভনে যে কত রাত তিনি বিনিদ্র আর অপেক্ষমান সেটা আর কাকেই বা তিনি বলবেন?

 

শাক্ত তন্ত্রে এখনো পর্যন্ত মহাশক্তিযন্ত্র ও ঘটে আরাধনা হলেও দেবীর মাতৃস্বরূপটি সবারই অজানা। স্বয়ং তিনিও কি পারবেন এতদিনপরে সেই অভ্রংলিহ কারুণিকের দেবীরূপটিকে একবার চাক্ষুষ করতে?

 

পূবদিকে শেষরাতের মায়াময় স্নিগ্ধতা কাটিয়ে এবার অরুণোদয় ক্রমআসন্ন। এ যেন আরও একটি ব্যর্থতম দিনের উদ্ভাস !

 

হায়! আক্ষেপ করে ওঠেন সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। গত পক্ষকালের মত এই রাত্রিটিও বিফল হল তবে!

 

নিরন্তর তন্ত্রসাধনায় তিনি বুঝেছেন যে সাধারণ মানুষ নিরাকারের পূজা ও তার মর্ম সঠিকভাবে বুঝবে না। অতএব মৃণ্ময়ী মূর্তিতেই এবারে হোক দেবীর আরাধ্যা রূপের প্রকাশ।

 

***

 

ঈষৎ মনস্তাপের সাথে তিনি নবোদিত সদ্যোজাত ক্ষীণ রশ্মিসম্পন্ন সূর্যকে অভ্যাস মতো একবার প্রণাম করলেন। তারপর আচমনের জন্য সামান্য জল তাঁর কন্ঠস্পর্শ করল সভক্তিভরেই।

 

তাহলে! সেই ছদ্মরূপা মহাশক্তি আজও তবে তাঁর কাছে ধরা দিলেন না ! আর একপক্ষকাল পরেই তো অমাবস্যা। দেবী ভগবতী কি তার আগে একটুও এই অধমসাধকটির ওপর সদয়া হতে পারেন না?

 

মধ্যবয়স্ক বৃষস্কন্ধ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্থির করলেন এবারে এই ব্যর্থ অসহায় মনুষ্য দেহটিকে তবে না হয় এজন্মের মত সেই মুক্তকেশী করালবদনাকেই নিজের হাতে প্রণামীর জন্য দিয়ে আসবেন আগামী মহাপূজার শেষে, অমাবস্যাটি বিগত হলেই।

 

***

 

 

তন্ময় সাধকের পথে হঠাৎই গোচর হয় এক নিম্নবর্ণীয়া গোপবধূ। তার ডান পা একটি বারান্দার ওপর তোলা, আর বাঁ পা মাটিতে। ডান হাতে তার কিছু গোময়ের স্তুপ আর বাম হাতটি উঁচুতে তুলে ঘুঁটে দিতে সে এখন উদ্যত সীমানার বেড়াটির গায়ে।

 

রমণীটির কুঞ্চিত মেঘকালো চুলটি আলুলায়িত ও একঢাল, যদিও পরণে তার কোনওভাবে পরিধান করা একটি ছোট শাড়ি তবুও সেই শ্যামবর্ণা প্রায় প্রায়উলঙ্গিনী পরমাপ্রকৃতিটি অত ভোরে স্বয়ং কৃষ্ণানন্দকে দেখে লজ্জায় জিভটি কেটে আবার সঙ্গে সঙ্গেই পিছন ফিরে দাঁড়াল।

 

কৃষ্ণানন্দ স্বয়ং এ দৃশ্যে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন।

 

কিন্তু কে যেন অলক্ষ্যে বসে তাঁর প্রতি অট্টহাস্য করে বিদ্রুপ করে বলছে " রে মূর্খ! এই তো সেই আরাধ্যা চিন্ময়ী স্বরূপা রে! যার ধ্যানে বসলে তুই নিজেই মুগ্ধকন্ঠে বলিস্ তো,

 

- ঘোরদ্রংষ্ট্রাং করালাস্যাং পীনোন্নতপয়োধরাম্।।শবানাং করসংঘাতৈঃ কৃতকাঞ্চীং হসন্মুখীম্।সৃক্বদ্বয়-গলদ্রক্ত-ধারা-বিষ্ফুরিতাননাম্।।

ঘোররাবাং মহারৌদ্রীং শ্মশানালয়বাসিনীম্।

বালার্ক মণ্ডলাকার-লোচনত্রিতয়ান্বিতাম্।।

 

দন্তুরাং দক্ষিণব্যাপি-লম্বমান কচোচ্চয়াম্।শবরূপ-মহাদেব-হৃদয়োপরিসংস্থিতাম্।।

শিবাভির্ঘোররাবাভিশ্চতুর্দ্দিক্ষু সমান্বিতাম্।মহাকালেন চ সমং বিপরীত রতাতুরাম্।।সুখপ্রসন্নবদনাং স্মেরানন-সরোরুহাম্।

এবং সঞ্চিন্তয়েৎ কালীং সর্ব্বকাম-সমৃদ্ধিদাম্"

 

 

হঠাৎ তাঁর মনোজগতে এক অসীমপরিবর্তন ধেয়ে আসছে যেন। কৃষ্ণানন্দের মুখের স্মিত হাসিতে এখন বিশ্বজয়ী সাধকপ্রবরের এক নবঅনুরাগের ক্রমউন্মেষ।

 

আহা! এই তো সেই বহুপ্রতীক্ষিত তাঁর মাতৃকার চিন্ময়ী আনন্দস্বরূপার স্বরূপটি। রূপকের আড়ালে যিনি তো সদাই ভক্তকল্পতরু।

 

ধন্য আজ নিশাবসান! আর তদ্বজনিত প্রকাশমানা আজকের পরম ব্রাহ্মমুহূর্তকালটি!

 

তাঁর দুটি চোখে ততোক্ষণে নেমে এসেছে ভক্তির অশ্রুধারা। বিগলিত কন্ঠে সুরধ্বনীর তীরে শুয়ে আভূমি প্রণত হন তিনি, আর মন্দ্রকন্ঠে উচ্চারণ করেন দক্ষিণাকালিকার প্রতি পুষ্পাঞ্জলি প্রদানের সময়ে সেই বহুচর্চিত ও উচ্চারিত মহামন্ত্রটি -

 

"আয়ুর্দ্দেহি যশোদেহি ভাগ্যং ভগবতি দেহিমে।পুত্রান্ দেহি ধনংদেহি সর্ব্বান্ কামাংশ্চ দেহিমে।। দুর্গোত্তারাণি দুর্গে ত্বাং সর্ব্বাশুভ-নিবারিণি।ধর্ম্মার্থমোক্ষদে দেবি নিত্যং মে বরদা ভয়।। কালি কালি মহাকালি কালিকে পাপহারিণি।ধর্ম্মকামপ্রদে দেবি নারায়ণি নমোহস্তুতে।।"

 

বেশ অভাবনীয়ভাবেই স্বয়ং চিন্ময়ীকে আজ প্রত্যক্ষ করেছেন শেষপর্যন্ত। এবারে কালাকালের ভাবতরঙ্গে সেই রূপটিকেই ভবিষ্যতের জন্য মৃন্ময়ী আকার দিয়ে যেতে হবে। তাঁর আয়ুষ্কালটি এবার গত হলেও এই রূপেই দেবী চিরদিন ধরা থাকবেন।

আগমবাগীশের ঐশী সাধনার শেষপর্বটি আজ বড়োই যে মধুর সমাপনে চিরউজ্জ্বল হয়ে রইল।

 

বিগলিত কৃষ্ণানন্দ অবশেষে সানন্দে আজ তাঁর কুটিরের পথে পা বাড়ালেন।


Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP

। নববর্ষ-১৪২৮| Aleekpata.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|Bengali New Year Issue, 2021 | April -July 2021| 
| Fifth Year  First  Issue |27 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |

|a DISHA-The Dreamer Initiative |





 

গল্প-ভালোবাসার ধর্মযুদ্ধ - তপন তরফদার

 ভালোবাসার ধর্মযুদ্ধ

তপন তরফদার

 

বিচার চাই।

ব্যাঙ্কশাল কোর্ট আজকে জমজমাট। মেয়ের বিরুদ্ধে বাবা, ঘুরিয়ে বলা যেতে পারে বাবার বিরুদ্ধে মেয়ে। মেয়েই এখন কাঠগড়ায়। মেয় সাক্ষী দিচ্ছে, দর্শকদের মুখে রসগোল্লা খাওয়ার হাসি। যত বেশি কথা চালাচালি হবে তত বেশি কেচ্ছা শোনা যাবে।

 

খুব দরদি গলায় মেয়েটি বলতে শুরু  করলো। ধর্মাবতার, আমি ও নিরপেক্ষ বিচার চাই।

এই মুহূর্তে আমি আপনার সামনে কাঠগড়ায়। সাক্ষী হিসেবে। আমার কর্তব্য সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা। আমি গীতা ছুঁয়ে শপথ নিয়েছি। একবর্ণও মিথ্যা বলব না। মিথ্যাচার কে আমি ঘৃণা করি।

প্রথমেই আপনার কাছে বিনম্র প্রার্থনা,প্রতিটি ঘটনার সঠিক মূলায়ন করবেন।  লক-আপের মধ্যে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক যুবক! ওঁর সম্পর্কেই সাক্ষ্য দিতে আমাকে ডাকা হয়েছে। ভয়ঙ্কর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। আপনার রায়ের উপর নির্ভর করছে ওর জীবন।

মেয়েটি একটু   দম নেওয়ার জন্য থেমেছে, এই ফাঁকে মেয়েটার একটু  পরিচয় জানা  যাক।

আমার নাম মাধুরী  আমি এক গরিব পূজারি ব্রাহ্মণের কন্যা। শ্যামলারঙা, দোহারা  শুনেছি আমার জন্মে বাবা খুশি হননি। ব্যাজার হয়েছিলেন তাঁর পরিবারের লোকজনও। ওনাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল পুত্রসন্তান। কিন্তু হলাম কন্যা। না। আমার জন্মের পর বাড়িতে শাঁখ বাজেনি। উল্টে, পুত্রসন্তান উপহার দিতে না পারার অপরাধে আমার সদ্যপ্রসূতি মাকেও নাকি বহু গঞ্জনা শুনতে হয়েছিল। যে আর্থ-সামাজিক পরিবেশে আমার পরিবারের অবস্থান, সেখানে ওই পরিস্থিতি একধরনের স্বাভাবিকই বলা চলে।

 

 

ধর্মাবতার, ওই যে যুবকটির কথা প্রথমেই বললাম, এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে তাঁর পরিবারের বৃদ্ধ মা বাবা উপ্স্থিত আছেন।   আপনার এজলাসে এই মুহূর্তে আমার বাবা, কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন ও বাবার শুভানুধ্যায়ীদের দেখতে পাচ্ছি। আমার বাবা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন  আমার স্বামী আব্দুল রেজ্জাক  এবং ওর পরিবারের লোকজন আমাকে জোর করে  কিডন্যাপ করে আটকে রেখেছে। মহামান্য  বিচারপতি এখানে পুলিশের অতিসক্রয়িতা লক্ষ করেছেন। বাবা অনেক টাকা দিয়েছেন পুলিশকে। বাবার সামাজিক সমস্যা হয়েছে  আমি মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে কলঙ্কিত করেছি আমার পরিবারকে। আমি কেন আব্দুলকে বিয়ে করেছি আপনার কাছে  নিবেদন করবো।

তখন আমি  ক্লাস টুয়েলভে পড়ি। টিউশন থেকে ফিরছি। সাইকেল পাংচার হয়ে যায় প্রাইমারি স্কুলের আগে। রাত দশটা প্রায় বাজতে চলেছে। এতরাতে স্কুলের বারান্দায় কারা। কিছু  বোঝার আগেই চারজন ঘিরে ধরে বলে সাইকেল সারিয়ে দেবে। বদলে দেখি আমাকেই টেনে অন্ধকারময় গাছের তলায় টেনে  নিয়ে যাচ্ছে। ওদের মুখ  দেখে আমি চিনতে পারি ওরা  এই গ্রামেরই বর্ধিষ্ণু পরিবারের বখাটে  ছেলে। এখানে মদের আসর বসিয়েছে। আমি  বিপদ বুঝতে পেরে চিৎকার করতে থাকি। আমার ভাগ্য ভালো। আব্দুল  ওই রাস্তা দিয়ে সাইকেল করে যাচ্ছিল। ও এগিয়ে আসে। ওরা ওকে ঘিরে ধরে। বচসা শুরু  হয়। আব্দুল দমবার পাত্র নয়। হাতাহাতি শুরু  হয়ে যায়। আব্দুল বলে মাধুরী তুমি পালিয়ে যাও, এরা তোমার সর্বনাশ করবেই।  একজন শক্ত একটা  গাছের  ডাল দিয়ে সজোরে ওর মাথায় মারে। আব্দুল মাটিতে পড়ে যায়। ওরা চারজন মিলে বেধড়ক মারতে থাকে।  আমি  দৌড়ে বাড়িতে এসে বাবাকে সব বলি। বাবা বলেন, চুপচাপ থাকবি। কথাটা ভুলেও মনে আনবি না বদনাম হয়ে যাবে। সবাই রসিয়ে রসিয়ে গুজব ছড়িয়ে দেবে। আমরা মুখ  দেখাতে পারবোনা।

পরের দিন গ্রামের আলোচনার বিষয় আব্দুল কোনও এক মেয়েকে ফুসলে এনেছিল ফূর্তি করতে। ধরা পড়ে যায়। মেয়ের বাড়ির লোকেরা ওকে মেরে মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। কোন মেয়ে, কারা মেরেছে  খোঁজ করেনা  আমাদের হিন্দু  গ্রামের লোকজন। সবাই খুশি একটা মুসলমানকে মেরে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে।

আব্দুলের অবস্থা ভালো নয়। ওর পরিজনরা কলকাতায় নিয়ে যায়। যমে মানুষে টানাটানি।  অবশেষে বেঁচে যায় কিন্তু  বাঁ পায়ের মালাইচাকি ঠিকমতো সচল হয়না।  ঠিক মত হাঁটতে পারেনা।  আব্দুল  লেখা পড়ায় প্রথম থেকেই ভালো ছিল। দুস্থ পরিবারে জন্ম। পড়াশোনার খরচ চালাতে নিজেই কোচিং সেন্টার  খুলেছে ।  কম পয়সায় পড়ায়।  যেহেতু  কম পয়সায় ভালো পড়ায় তাই হিন্দুদের ছেলে মেয়েরা ও পড়তে আসে।  আবদুল টিউশনি করে আর সরকারি চাকরির প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় বসে।

মাধুরীর চোখে মুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ। আব্দুলের মনে কোনো আক্ষেপ নেই।  একদিন বেশ আগেই পড়তে চলে আসে মাধুরী। নিজেই সে দিনের কথা তুলে কৃতজ্ঞতা জানায়।  আব্দুল বলে  ওসব ভুলে যাও। মাধুরী বলে  আমার জন্যই সারাজীবন আপনার ভোগান্তি। আব্দুল বলে, মানুষের কপালে কখন কি ঘটে  কেউ বলতে পারে না। দুর্ঘটনা  কখন ঘটবে  কেউ বলতে পারেনা। মানুষ কখন কার সঙ্গে প্রেমে পড়ে যায়। আর সেই প্রেম যদি  বিজাতীয় হয় তার বাঁধুনি কতটা মজবুত তা আমরা ইতিহাসে পড়েছি। মাধুরী  আর আব্দুলের বিষয়টি কিছু  পড়ুয়া বুঝতে পারে  মাধুরীর বাবা  ত্রিলোচনের কানে  পৌঁছে যায়। মাধুরীকে আর পড়তে পাঠায়না।

ইশ্বর আছেন  আল্লাহ আছেন। আব্দুল উচ্চ -প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের চাকরি পেয়ে যায় পাশের গ্রাম তক্তাপোলে। ওরা কিভাবে যোগাযোগ রাখে কেউ বুঝতে পারেনা। ডুবে ডুবে  জল খায় শিবের বাবাও টের পায়না। শিবের মাথায় জল ঢেলে শিবরাত্রির দিন মাধুরী কোথায় গেল কেউ খুঁজে পায়না। দুদিন বাদে জানা গেল ওদের দুজনকে দীঘায় দেখা গেছে। ত্রিলোচন চোখে ধুতরো ফুল দেখে, আত্মসন্মান ধুলোয় মিশলো,উপরন্তু যজমানি বাড়িগুলো হাতছাড়া হয়ে যাবে। ওরা আর ডাকবেনা।

পুরোহিতরা জানে মূল্য ধরে  দিলে সাতখুন মাফ। সব পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ত্রিলোচন দারোগাবাবু কে উপযুক্ত নাজরানা দিয়ে ডায়েরি করে দেয় আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে। দারোগাবাবুরা জানে কান টানলেই মাথা চলে আসবে। আব্দুলের বৃদ্ধ্ আব্বাজান ও আম্মাকে সিধে গারদে ঢুকিয়ে দেয়। ম্যজিকের মত কাজ হলো সুড়সুড় করে  আব্দুল থানায়  হাজির হলো। কিন্তু  ত্রিলোচনের কাজের কাজ কিছুই হলোনা। মাধুরীকে ঘরে তোলা তো দুরের কথা ওকে খুঁজেই পাওয়া গেলনা।

পুলিশ কোর্টে চালান করে দিয়েছে। ত্রিলোচন দুঁদে উকিল লাগিয়েছেন এমন কেস সাজিয়েছে যাবজ্জীবন জেল নিশ্চিত। কোনো দিন আর কোনো মুসলিম ছেলে হিন্দু মেয়েদের দিকে তাকাবারই সাহস পাবেনা।  কেসটা এখন আড়াআড়ি ভাবে হিন্দু  -মুসলমানে ভাগ হয়ে  গেছে। যে কোন সময়ে দাঙ্গায় পরিনত হতে পারে।

ধর্মাবতার, আমি  জানতাম আমার পরিবার  আমাকে সর্মথন করবেনা।  তাই বাবার আপত্তিকে আগ্রাহ্য করেই আমরা বিয়ে করলাম। দেশের আইন মেনেই। তারপর একবস্ত্রে চলে গেলাম শ্বশুরবাড়িতে। শ্বশুর-শাশুড়ি আমায় বুকে টেনে নিয়েছেন। কন্যার আদর দিয়েছেন। দিয়েছেন পুত্রবধূর প্রাপ্য মর্যাদা।

ওরা আমার স্বামী এবং বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে।   অপরাধ? শুনলামআমার বাবা থানায় নালিশ ঠুকেছেন। আমার  আব্দুল  নাকি আমাকে অপহরণ করেছে। ফুসলিয়ে বিয়ে করেছেন। শুধু তাই নয়, জোর করে আমার ধর্ম পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এটা নাকি লাভ জেহাদ। আর, স্বামীর বৃদ্ধ বাবা-মা ওই অপকর্মে ছেলেকে সাহায্য করেছেন। সেজন্য তাঁরাও অভিযুক্ত। ওই দেখুন, ওই তিনজনই এই মুহূর্তে আপনার কোর্ট লক-আপে বন্দি।

 

ধর্মাবতার! আপনাকে জানাচ্ছি, কোনও জোর জবরদস্তিতে নয়, আমি স্বেচ্ছায় স্বামীর ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমি নিষ্ঠাবান হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া এক নারী। যে পরিবারে শেখানো হয় স্ত্রীকে প্রকৃত অর্থেই স্বামীর সহধর্মিনী হতে হয়। সহধর্মিনী না হতে চাওয়াটা ক্ষমাহীন অপরাধ, সীমাহীন পাপ। আমি সেই অপরাধ, সেই পাপ করতে রাজি নই। তাছাড়া, স্বামীর সুখ, দুঃখ, আনন্দ বেদনা, স্বাচ্ছন্দ্য, প্রেম, ভালোবাসা সমস্ত কিছু যখন গ্রহণ করছি, তখন তাঁর ধর্মটা গ্রহণ করতে দ্বিধা থাকবে কেন! ধর্মাবতার, বলুন, আমি কি অপরাধ করেছি?

 

আর, লাভ জেহাদের কথা বলছেন? হ্যাঁ ধর্মাবতার। আমরা লাভ জেহাদই করেছি। শুনেছি জেহাদ মানে ধর্মযুদ্ধ। আমরা ধর্মযুদ্ধই করতে চাই। মানবতার পক্ষে ধর্মযুদ্ধ। নারী-পুরুষের পবিত্র প্রেম ভালোবাসা দিয়ে। আমাদের ভালোবাসার ফসল হয়ে সন্তান আসবে। সেই সন্তানের ধর্ম হবে মানবতা। সেই ধর্মের জোরেই সে একসময় পূর্ণ হবে কারও অকৃপণ প্রেম-ভালোবাসায়। বেঁচে থাকুক এই লাভ জেহাদ। ভালোবাসার ধর্মযুদ্ধ।

আর আমার গোপন  কথা সবাইকে জানালাম। যে নিজের জীবন দিয়ে মেয়েদের ইজ্জত বাঁচায় সে সকলের উর্ধ্বে। সে পরম পুরুষ। আমার মনের মানুষ।

Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP

। নববর্ষ-১৪২৮| Aleekpata.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|Bengali New Year Issue, 2021 | April -July 2021| 
| Fifth Year  First  Issue |27 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |


কবিতা- জীবন সফর - মনোরঞ্জন দাস


 জীবন সফর

মনোরঞ্জন দাস


ভুবন মাঝে সঙের সাজে

কীর্তি কলাপ মন্দ

ভালো মন্দে হারায় ছন্দে

জীবন বোধের দ্বন্দ্ব।

 

লিপ্ত পাপে চরম তাপে

তীব্র দহন জ্বালো,

জীবন নষ্ট দুঃখ কষ্ট

মেঘে আড়াল কালো।

 

সময় অল্প জীবন গল্প

বোঁটায় ধরা পাতা,

হিসাব টুকে পাঁজর বুকে

বন্ধ হবে খাতা।

 

সেদিন তুমি মরণ চুমি

চোখের পলক বন্ধ।

দেখলো না'তো হিসাব টা'তো

চোখ থাকিতে অন্ধ।

 

আলোর পথে ন‍্যায়ের রথে

শান্তি লাভের সফর,

নজরকাড়া খুশির ধারা 

সবাই প্রভুর নফর।


Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP

। নববর্ষ-১৪২৮| Aleekpata.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|Bengali New Year Issue, 2021 | April -July 2021| 
| Fifth Year  First  Issue |27 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |



Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান