অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Monday, June 25, 2018

যখন তখন-গল্প-শম্পা সান্যাল


ঙে  ঙে ছোঁয়া 

শম্পা সান্যাল
সংখ্যা-১৪, (২৫ শে জুন,২০১৮)


তুমুল হৈচৈ-এর মাঝে পর্ণার জোরালো গলা হাই গাইস 
আরে, আপনার চেয়ে আপন যে জন! কোথায় ছিলি ?? 
পর্ণা, নামটা পর না, আপনার ইত‍্যাদি নানাভাবে ব‍্যাখ‍্যায় জাড়িত বন্ধু মহলে।
দ‍্যাখ্, কাকে ধরে এনেছি!
দ্রুত চোদ্দ জোড়া চোখ যার উপরে এসে পড়ে, সামান্য অস্বস্তি কাটিয়ে বলে আমি নন্দা, মানে অভিনন্দা চ‍্যাটার্জি।
আজ তোদের সাথে আলাপ করিয়ে দেবো বলে আমার মামাতো বোনকে ধরে এনেছি।
ভালো, ভালো করেছিস
সব তো হা হয়ে গেছিস, আরে হাই, হ‍্যালো কিছু তো বল্ বলে পর্ণা হাসতে থাকে।
ধ‍্যাত্, কোনো সিরিয়াস আলোচনায় ডিস্টার্ব করলাম মনে হচ্ছে!
সিরিয়াস! এরা! 
এই  নারে, মাদল একটা প্ল‍্যান বলছিল আরকি!
মাদলের প্ল‍্যান!! চ রে নন্দা। প্ল‍্যানটা কি?
কেন! চলে যাচ্ছিলি, যা না এবার কথা বলে মাদল।
আরে, তোর তো সব বিরাট ভাবনা, তাই বলছিলাম বাবু!! বলো বলো 
ফাঁকা হয়ে যা
ধ‍্যাত্, বলতো তোরা, বেশি বেশি!!
মাদল নিজের লেখা নাটক সোশ‍্যালে করবে বলছে, কমলিনী বলে।
বাঃ, দারুণ ব‍্যাপার!
গান‌ও লিখবে, আর একজনের ফুটনোট
এবং ধ‍্যাড়াবে 
হাসিতে ফেটে পড়ে সবাই। নন্দা একটু ইতস্তত করে বলে কে মাদল?
ওহো! তোর সাথে তো কারো আলাপ‌ই করাইনি। ঐ যে, উনি, ঢ‍্যাঙা, উনি হলেন মাদল, আমাদের নেতা। আর ও কমলিনী, ও ....
আপনি
এই , এই আপনি কিরে! তুই , তুই বল্।
ওকে, তুমি নাটক লেখো ? 
ঐ আর কি! বন্ধুরা উৎসাহ দেবে, দেখছো সব কেমন 
আরে, রবিবাবুকে আর ভালো লাগছে না
মোটেও আমি সেকথা বলিনি, আমি রবীন্দ্রনাথকে আমাদের জীবন থেকে চাইলেও কি পারবো বাদ দিতে!
অনেক ভাট্ বকেছিস, চল্ তো 
আমার যাওয়া হবে না রে 
আমিও রে 
অবশেষে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক জনা সাতের সাথে নন্দা সহ ব‌ইমেলায় যাওয়া ; ক্রমশঃ মাদল -অভিনন্দা পরস্পর পরস্পরের কাছে বড়ো আপনার হয়ে গেল।


         ‌‌         আজও কমনরুমে মিটিং। টিফিন সেশন, অত‌এব তুমুল কলরব। তার‌ই মাঝে প্রতিবার‌ই কেন সোশ‍্যালে রবীন্দ্রনাথ! আর কেউই কি কিছু লিখে যাননি?
আরে, এতো অল্প সময়ে আর কার কথা ভাবা যায় বল্ তো 
নাচ, গান
ছাড়তো! নাচ- গান মাস্ট নাকি!
সেকি! কেবল অভিনয়!
তাহলে আর দেখবে না কেউ।
সমবেত হাসির রোল।
শোন্ মাদল, তোর প্রস্তাবটা একদমই ভুল না তবে তার জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন সেটা তো নেই আর দোয়েল, মধু ওরা এতো ভালো গান করে, ওরা তাহলে কি করবে! কলেজের জি.এস. শৌনক বয়স-সহ সবেতেই বড়ো তবে ওদের উপর কর্তৃত্ব ফলালেও মর্যাদা দেয়।
নাচ, গান যারা করবে করুক না, নাটকের সাথে কি সম্পর্ক ওদের? টোটাল প্রোগ্রাম- এর সময় কতোটুকু সেটা তো মাথায় রাখ্।
তাহলে 
আমার তো 'রাজা ও রানী' এতো ভালো লাগে !
সে তুই রানীর পার্ট পাবি তো তাই
মোটেও না 
এই চল্, চল্ , চললাম রে বলতে বলতে দ্রুত সব নিজ নিজ ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলে গেল। বেড়িয়ে এলো আলাপন, মাদল, বিতানুরা কয়েকজন।তুই নিজে লিখে নাটক করবি?
কেনো? লিখতে পারি না!!
না পারবি না কেন! তোর সে ক্ষমতা আছে কিন্তু কলেজে তোর লেখা নাটক মর্যাদা পাবে?
আমি তো জানি সেটা, সেই বুঝেই তো 
বেশ, লিখবি, রিহার্স দিয়ে সময়ে নামাতে পারবি?
হু, সেটা আমাকেও ভাবাচ্ছে তাই তো ভাবছি!!
আর আমাদের প্রোগ্ৰাম দেখার জন্য তো আমরাই থাকবো বলে হো হো করে হাসে বিতানু। 
কেন!!
সব তো ঐ ইকা-মিকা-ডিকা-র সময় আসবেন!
একদম, এটা ঠিক বলেছিস। সত‍্যিরে, মাদল এখানে ভালো কিছু করে লাভ নেই!
তোরা আছিস তো! আমার আনন্দ যদি তোদের ভালো লাগে!

     ‌         অভিনন্দা হাজারটা গালাগাল মনে মনে দিয়ে যাচ্ছে সাথে মোবাইল-এ ট্রাইগেল কোথায় ছেলেটা! না, ঠেকে আসেনি, সে খবর পেয়েছে। বাবা-মায়ের সজাগ দৃষ্টি এড়িয়ে কতবার ট্রাই করবে। হোয়াট অ‍্যাপস থেকে মেসেঞ্জারে কোনো রেসপন্স করছে না। পরীক্ষা সামনে, পড়াতে মন বসছে না, উফফ্ !!
ডোনা পড়া হয়ে গেছে?
হ‍্যাঁ, কেন?
তোদের গানের স্কুলের প্রোগ্রামে তোর কোন্ কোন্ গান? বলতে বলতে মা চা-মুড়িমাখা নিয়ে ঢোকেন।
আহা, দারুণ মেখেছো মা। তুমি নাও 
নাঃ, তুই খা।
এবারে তো কেবল বসন্তোৎসব আর তার মানেই "ঝরে ঝরে......বলে হাসতে থাকে নন্দা, যার বাড়ির নাম ডোনা।
সত‍্যিরে, বসন্ত মানেই দোল । বাঙালি দোল- দুর্গোৎসব একসাথে হামেশাই বলে।
মাস্টারমশাই দুটো সোলো রেখেছেন আর সব কোরাস।
পড়া হয়ে গেলে রেওয়াজে বস্।
হু, বসবো তবে তারজন‍্য একটা মন লাগে তো!
বাবা! তোমার মন এখন কোথায়!
আচ্ছা,মা তোমাদের বসন্তকাল কেমন ছিল?
কেমন আবার! তবে, হ‍্যাঁ  "কাল"-টা বোঝা যেতো বুঝলি! এখনতো হেমন্তকাল হারিয়েই গেছে প্রায়। আর বসন্ত! শীতের অবসানে গ্ৰীষ্মের আগমনের মাঝে অনেকটা সন্ধিপুজোর মতোন। কত সুন্দরমা নিজ-জগতে লীন হয়ে যান। দোলের দিন বাবা-মাকে পাড়ার অনেকেই আসতেন প্রণাম করতে, ছেলেরাই বেশী জানিস। আমরা লুকিয়ে দেখতাম
সেকি ! খেলতে না?
এই , তুই খেলিস?
আমাদের এখানে কি সেই পরিবেশ আর কি না কি রঙের মধ‍্যে থাকে!
না, ইচ্ছে যে হতো না তাও না কিন্তু ঐ ! জানলা দিয়ে দেখতাম কালো পিচের রাস্তাটা নানা রঙের  আলিঙ্গনে রঙিন, পাল্ট পাল্টে যাচ্ছে নতুনের ছোঁয়ায়। অনেক জিলিপি এনে রাখতেন বাবা, যারা প্রণাম করতে আসতো তাদের মুখে তুলে দিতে হতো।
হা,হা,হা খাইয়ে দিতে নাকি!
হ‍্যাঁরে, হাতে তো রঙ মাখা তাই বলতে বলতে মা যেন আনমনা হয়ে যান।
মা, কি হলো 
নাঃ, কিছু না। কত কথা, কত স্মৃতি
বলো না মা, বলো বলো প্লিজ 
থামবি! হয় পড়্ নাহলে হারমোনিয়াম নিয়ে বোস বলে মা কাপ-বাটি গুছিয়ে চলে যান।
অন‍্যসময় হলে হয়তো মা-কে জোরাজুরি করতো, এখন নিজের জ্বালায় অস্থির। আবারও চেষ্টা
বল্ 
ব‌অঅল!! তুই দেখেছিস কটা মিসড্ কল?
দেখেছি
দেখেও! তাহলে এখন ধরলি কেন?
আরে বল্ না
কি, কি হয়েছেটা কি ? 
কিছুনা, শোন্ রাতে কথা বলবো, এখন রাখছি।
ওকে, জো হুকুম।
মিতালি দ্রুত মেয়ের কাছ থেকে সরে আসতে পারে, পারে না অতীত থেকে। আজো ফেব্রুয়ারি মাস এলে মনে আসে ; বসন্ত সমাগত। বাবা-মাকে প্রণাম করতে এসে ওদের দুই বোনের প্রতি অনেকেরই মনোযোগ আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা  দুইবোনের হাসি, ঠাট্টার খোরাক হতো। "একটা টিপ, একটা টিপ কেবল" বলতে বলতে ওরা এগোতো আর সভয়ে দুজনে সঙ্কুচিত ; বাবা বা মা সরলমনে বলতেন " ওকি! নিতে হয়, তোমরাও দাও। এটাই তো উৎসব! আর তারপর মায়ের হাত জোড়া থাকলে মুখে.....। এরকমই একটা সময়  যখন মন আর বয়সের গলাগলি সম্পর্কে বাস, এলো বসন্ত, এলো প্রেম। নতুন পরিবার পাড়ায় এসেছে, মায়েদের সামান্য আলাপ‌ও হয়েছে। ছেলেটিকে দেখে, আজ বন্ধুদের সাথে ওকে দেখে বুকটা এমন হলো কেন! বাবা-মা স্পেশাল খাতির করে দুটো কথাও বল্লেন, এর‌ই মাঝে কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে, কিছু কি বলছে ওর চোখ! 
মিতা, মা ওদের একটু মিষ্টি দেতো রে!
যথারীতি টিপ-পর্বে বন্ধুদের সঙ্গে ও এগিয়ে এলো না, হাসছে ওর ভয় দেখে।
শুধু টিপ কিন্তু! তোমরা আগেরবার মাথায় দিয়ে দিয়েছিলে
হা করো, হা করো হ‍্যাংলারা 
এই এসব কি কথা! বাবা উবাচ।
হাসতে হাসতে সবাই খাচ্ছে, ও চুপচাপ।
একি! তুমি নাও! মা, হার্দিককে দাও। 
আমার হাতে ..... দিতে গিয়ে মৃদু স্পর্শ, অদ্ভুত অনুভূতি!
সবাই যাওয়ার পর ঋতু বলছে হারুটা কেমন ক‍্যাবলা মার্কা 
হারু!! 
আরে ঐ নতুন ছেলেটা 
এবার হাসে তবে একটু একটু রাগ‌ও হচ্ছে। 
ওর নামটা একদম আনকমন।
দেখবি ঐ নামে কেউ ডাকবে না, ঐ হারু, হাড়ি এসব‌ই জুটবে বলে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি।
ওরা তো বাইরে থাকতো, তাই হয়তো! এতে হাসার কি হলো শুনি! 
এ‍্যাঁ!!! দিদিই
এভাবেই কেটে গেছে দুটো বছর। না, সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি, তবে পছন্দটা দুজনেই বোঝে। এখন কতো সহজ! কি সাবলীল ভাবে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব, ভালোও লাগে।
শুনলি তো সব, বল্ এবার।
কি বলবো!
আরে, আমরা কি পারি না নিজেরা নাটক লিখে মঞ্চস্থ করতে?  এতে তো আলাদা একটা তৃপ্তিও মেলে! কিরে! হ‍্যালো!
বলে যা 
মানে!
মানের কিছু নেই, বুঝতে পারছি পোকাটা আবার .....
ছাড়্, কেন যে বলতে গেলাম!
এই, শোন্ প্লিজ ফোন কাটিস না আমি শুনছি তো, বল্ না
ধুত্, মুড অফ হয়ে গেল। আচ্ছা তুই তো বুঝবি!
কাল বিকেলে ফ্রি আছি, আসবি?
এখন বলতে পারছি না
ডোনা, এই দরজা দিয়েছিস কেন ?
মা, ছেড়ে দিলাম। 
তুমি আবার উঠে এসেছো?
দরজা বন্ধ করেছিস কেন?
আরে, মশার জন্য
মশারির মধ‍্যে বসে....
এই তো সবে টাঙালাম। উফফ্, তুমি যাও তো!
দ‍্যাখো, দেখেছো ঠিক মাথার দিকে জানলা খোলা বলতে বলতে বন্ধ করতে উদ্যত
মা,দমবন্ধ লাগে, বন্ধ করো না
দরজা খোলা থাকলে আবার দমবন্ধ লাগবে কেন? এখন সময়টা ভালো নয়, চারিদিকে জ্বর- জারি আর তোমার তো সারাবছর 
আমি কুড়ি পেরোতে যাচ্ছি মা 
ধন‍্য করছো 
তুমি যাবে !
তুই কি আর পড়বি? না হলে শুয়ে পড়্, আমি লাইট অফ করে দিয়ে যাচ্ছি।
বাবারে বাবা! দ্দাও।
সেই, কি যে জ্বালা!
আস্তে আস্তে আবছা আলোয় ঝুল-বারান্দায় এসে দাঁড়ায় মিতা।এই সময় চেনা পাড়াটাও কেমন অচেনা লাগে! রাস্তার আলোয় অদ্ভুত এক নিঃসঙ্গতা ; সেও যেন সারাদিনের পর ক্লান্তিতে মোড়া, নৈঃশব্দ্যের ব‍্যাঘাত ঘটায় কোন দ্রুত ধাবমান চক্রযান, নিশাচর প্রাণীরা। আগে বারান্দায় হাফ- রেলিং ছিল, একটু ঝুঁকে দু-পাশে দেখা যেতো, এখন নিরাপত্তার খাতিরে এখানে নিজেকে কেমন বন্দিনী মনে হয়। একটু দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ঘর-মুখী হতেই হয়। ঘড়ির কাঁটা পরের দিনের সূচক -রূপী। শুরু হবে আরো একটি......হ‍্যালো 
ধুর্, মা-র একবার আসতেই হবে!
কালকে সময় হবে না রে 
ভালো, কি কাজ আছে শুনি? আমারো সময় হবে না, যা আমি শুয়ে পড়ছি , গুড নাইট।
পরশু আয় 
হবে না, শুক্রবার আমার পড়া থাকে না!
তোমার তো সারা সপ্তাহ ব‍্যাপী কিছু না কিছু
বেশ, আমার তাই তো তাই। তোর! তোর তো কোন কাজ নেই তাহলে কাল সময় হবে না কেন?
ওকে, দেখছি । সকালে হোয়াটসঅ্যাপ করে দেবোওকে, টাটা 
দ্রুত ফোন বালিশের তলায়। মা- র পায়ের আওয়াজ মনে হলো! শোয়নি!!
মিতালি পর্দা সরিয়ে মেয়েকে দেখে চলে যায়।
        মা, পর্ণাদের কলেজের সোশ‍্যালে যাবো।
হ‍্যা, ঐ করে বেড়াও।
এই করে বেড়াই !
আর কয়দিন আছে, সারাক্ষণ এক মোবাইল... বলতে বলতে টেবিলে বাবার জন্য খাবার জোগাড়ের মধ্যে বাবাক‌ই, দিয়েছো
কি রে কখন বের হবি?
আজ দেরী করে যাবো বাবা।
কেন?
সেরকম ক্লাস নেই তাই সেকেন্ড হাফে যাবো।
ঢাহা মিথ্যে বলতে যে কি  অস্বস্তি লাগে! বাবু দয়া করে জানিয়েছেন তিনটের সময় তিনি অপেক্ষায় থাকবেন। মিতালি কিছুদিন ধরে মেয়েকে লক্ষ্য করছে। ভয় করে ওর মতো কষ্ট না পায়। প্রথম প্রথম মনে হতো সুজয়কে ঠকাচ্ছে না তো! ক্রমে ফিকে হয়ে গেছে, হৃদয়াসনে সুজয় বিরাজিত তবু কেন! অদ্ভুত একটা না পাওয়ার অনুভূতি মাঝে মাঝে আসে! পাড়ার ছোট-বড় অনুষ্ঠানে মিতালিরা দুই বোন থাকেই। 
 দোলের পর একদিন সবাই একসাথে হয়, সারাদিন বিচিত্রানুষ্ঠান, একসাথে খাওয়া কি সুন্দর ছিল সেসব দিন। পাড়ার সকলে একসাথে হতো, মায়েদের ছুটি মিলতো, তবে দেখেছে মায়েরা যেন কেমন! বসতে দিলেও বসে না, বারবার রান্নার দিকে যাবেই যাবে, বাবারা ধমকাবে, হাসবে শেষমেশ সবশেষে কি থাকলো, বাসনপত্র কার কোনটা এসব করতে মায়েদের আসরে নামতেই হতো। হাসি-গল্পে এক বৃহৎ পরিবারের ছবি আঁকা হয়ে যেতো। সেবার‌ও জোর রিহার্সাল চলছে, সকালে নয়, এবার সন্ধ‍্যে বেলায় অনুষ্ঠান, এবার গীতিনাট‍্য শ‍্যামা। নাচের জন্য, গানের জন্য বড়োদের ব‍্যবস্থাপনায় বাইরে থেকে এসেছেন শিক্ষিকারা। এরকমই এক দিন গলা গেল কেঁপে,সুর গেল ভুলে উত্তীয় সে!
কি হলো মিতা, থেমে গেলে কেন!
"ধরা সে যে দেয় নাই, দেয় নাই......"
এতো সুন্দর গান করে! উত্তীয় ফিরে যাও, কেন ফিরে ফিরে যাও....... সারাক্ষণ মন জুড়ে থাকে। সবার প্রশংসা বিশেষ করে ওদের দুজনের। হ‍্যা, কাছাকাছি, কথা বলাও আর এভাবেই একটু একটু করে নিজেদের মেলে ধরা। ধরা পড়ে গেল। একদিন, মাত্র একদিন একান্তে দুজনের নিভৃতে আলাপচারিতার সুযোগ এসেছিল।   কোনো অজুহাত‌ই চললো না, সুজয়ের গৃহিণী হয়ে চলে এলো। ভেবে ছিল সত‍্যটা সুজয়কে জানাবে কিন্তু সাহসে কুলায়নি আর সরে যেতে যেতে  'সে'  রয়ে গেছে এককোণে, বাকিটা সুজয়ের দখলে। আচ্ছা, তাঁর‌ও কি মনে পড়ে! ডোনা, খোঁজ করে জেনেছি ছেলেটা ভালো। আমি আছি রে তোর পাশে। মিতালিচোখের জলে স্নাত, লম্বা বেনুনী ঝোলানো যুবতীতে রূপান্তরিত ; ক্ষণিকের তরে।
রবীন্দ্রনাথের 'রাজা ও রানী' এক অসামান্য প্রেম-কথা। ' প্রেম' যা অন্ধকারকে সরিয়ে নিয়ে আসে আলোর বৃত্তে। এই নাটকের বড় ব‍্যঞ্জনা তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা যার প্রধান অবলম্বন রাজা যিনি থাকেন আড়ালে, রানীর সাথে মিলিত হন অন্ধকারে। আড়ালে থেকেই হয়েছেন প্রজাদের সর্বজন গ্ৰাহ‍্য।  রানীর ভ্রান্তিমোচনে আসে আলোর দিশা, উপলব্ধির পথ বেয়ে সত‍্যিই  রানী স্বরূপা, রাজার যোগ‍্যা হয়ে ওঠাবোঝা গেল!
হুউউ, বুঝলাম।
সবদিক ভেবে নিজের লেখা নাটক বাদ দিতে যখন হলো, ভাবলাম এই নাটকটা তো অন্তর্নিহিত অর্থ ধরে পরিবেশন করা যায়, তাই
ক'জন বুঝবে!!
না বুঝুকগে। নতুনের মোড়কে চেনা- জানা লেখা বোঝে ভালো, না বোঝে আরো ভালো।
বি.বি.
কিইইই 
বাসব বাসু মানে বি.বি. সোশ‍্যালে নতুনের ছোঁয়া আনবেন‌ই। 
বল্ যা ইচ্ছে।
বিবি, না বি.বি.! 
তোরাই, হুল ফোটাতে ওস্তাদ।
অন্ধকারে আস্তে করে হাতটা টেনে নেয়।
পাগল, একটা।
পাগল‌ই তো, তোর জন্য।
এবার মাথা ঠান্ডা!!
শান্তি পেলাম না রে! আমার নাটক লিখতে ইচ্ছে করে, আমি লিখবোও দেখিস
লিখবি তো! আমিও তো চাই।
এবার সময় কম, তবু একটু অন্য আঙ্গিকে চিরনতুন রবিকে আরো একটু নতুনত্বের ছোঁয়া দিয়েছি আর কি! বন্ধুরা তো খুশী, এখন















Tuesday, June 19, 2018

যখন তখন-গল্প-শম্পা সান্যাল


নতুন জন্ম 

শম্পা সান্যাল
সংখ্যা-১৩, (২০ শে জুন,২০১৮)




বিজন অফিসে বেরোবার সময় অতসীকে সমস্ত রেডি করে হাতের কাছে এগিয়ে দিতে হয়, আজ‌ও তার ব‍্যতিক্রম নেই, তার‌ই ফাঁকে বললো"আমাকে কিছু টাকা দিয়ে যেও"।
কেন, টাকার দরকার কিজন‍্য ?
কাল গুড ফ্রাইডে পড়াতে বুয়াদের তিনদিন ছুটি, আজ ওদের নিয়ে বাবা-মাকে দেখতে যাবো।
বাঃ, এখন বলছো! একেবারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ?
মাকে বলেছি, মা মত দিয়েছেন তো।
আর আমার সুবিধা অসুবিধা সেগুলো কে দেখবে ?
সব তো গুছিয়ে রেখে যাই, এবার‌ও যাবো আর ছুটি আছে তো তোমার‌ও।
না, আমার ছুটি নেই। বাদ দাও, ভাবতে হবে না।
অনেকদিন যাই না, ছুটি ছোট হয়েও ওঁদের দেখাশোনা করে,আমি তো ফোন করে....
হ‍্যাঁ, কর্তব্য মানে তো গুচ্ছের টাকা....
কি বলছো!টাকা ধ্বংস করে আসি! কি করেছি ওদের প্রয়োজনে ? এভাবে কথা বলো না, যাতায়াতের জন্য যেটুকু লাগে সেটা কি অন‍্য কারো কাছে চাইবো?  
থামো, অফিস যাওয়ার সময় যত ঝামেলা।
বড় জামাই হয়ে কতটুকু কর্তব্য করো! মা-বাবা তো তাই নিয়ে
থাকলো, চললাম। লেকচার থামাও, হুঃ, টাকা যেন....
আজ যদি তুমি না থাকতে বড়দি ছোড়দি মা-কে দেখতো না
আমার মা যা পেনশন পায় তাতে কারোর পরোয়া করার দরকার পড়ে না বুঝেছো!!
অপমানে আজ‌ও জ্বালা ধরে মনে। বাক্-রুদ্ধ হয়ে বিছানায় বিজনের ছুঁড়ে ফেলা টাকার দিকে তাকিয়ে থাকে অতসী। নিজের উপরেই ঘেন্না ঝরে পড়ে অসহায় অতসীর।
           দুই মেয়ে পর পর, বাবা বেসরকারি চাকুরীজীবি, বিজনের সাথে অতসীর সম্বন্ধ আসলে বাবা-মা হাতে চাঁদ পেলেন যেন। রূপের জন্য বাধা এলো না কিন্তু বিয়ের পর যত সময় গড়িয়েছে অতসী অসম পরিবারে বিয়ের মর্ম বুঝেছে, বুঝতে পারছে। স্কুল থেকে ফিরেই ছেলেমেয়ের আব্দার কতক্ষণে দিদান বাড়ি যাবো! ছুটি‌ও আসবে, কতদিন পর দু-বোনে একসাথে থাকবে! বিকাল বিকাল যতটা পারলো সংসারের কাজ সেরে শ্বাশুড়ির অনুমতি নিয়ে বেরোলো। শ্বাশুড়ি ওকে সেভাবে দেখেন না, এটাই স্বান্তনা। ছুটি মা-কে মোবাইল কিনে দেওয়াতে এই সুবিধা, খবর দিতে পেরেছে। আগে আগে বুথ থেকে বাবাকে ফোন করতে হতো, দুটো বেশি কথাও বলতে পারতো না। এতক্ষণে তাঁরাও নিশ্চয়ই অস্থির, ঘর-বার করছে। আজকেও বাবা নির্ঘাৎ গলির মুখে দাঁড়িয়ে, এইসব ভাবতে ভাবতে অবশেষে বাড়ির কাছে এসে দ‍্যাখে সত‍্যিই বাবা দাঁড়িয়ে।রিক্সা থেকে নেমেই বাচ্চারা দাদুন দাদুন বলে ছুট্ লাগালো।মনে এলো ছোটবেলার কথা বাবার অফিস থেকে ফেরার সময় হলে মা-ও ঘরে-বাইরে করছেন আর দেখতে পেলেই দুই বোনের ছুট্, কে আগে যাবে। নিত‍্যদিন বাবার হাতে বাজারের থলে, পিছনে মায়ের চিৎকার" পড়ে যাবি, আরে মানুষটাকে আসতে দে তোরা", গলায় প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ের সুর আর বাবার সারাদিনের গ্লানি নিমেষে উধাও কি করছিলে, মা-র কথা শুনছো না!! পড়া হয়ে গেছে জানো বাবা আজকে না......কত কথা!কলকল করে দুজনে বলে যেত, শেষে মায়ের ধমক।মজা এটাই এখন বাড়িতে এলে খানিক বাদে বাবা মার নামে আর মা, রাজ‍্যের অভিযোগ মেয়ের কাছে।
      মায়ের চোখে জল, জড়িয়ে ধরে মাকে।বাবা-মা কি করবে আনন্দে, কাকে ছেড়ে কাকে আদর করবে, কি খাওয়াবে, তার‌ই সাথে কত কথা। কথা তো অতসীর বুকেও জমা, পারেনা বলতে। বাপের বাড়ি পা দিলেই যেন কেমন আলস‍্য। সকালে সাত তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়ার তাড়া নেই, শুয়ে বসে মাকে টুকটাক সাহায্য, দু-বোনের গল্পে কেটে যায় বরাদ্দ সময়। অদ্ভুত! দুই চরিত্রে দুই বাড়িতে অবস্থান করে একটি মেয়ে।
           প্রকৃতির নিয়মে সময় গড়িয়ে গেছে অনেকটাই।বাচ্চারা আজ তাদের বাচ্চাদের নিয়ে দারুণ ব‍্যস্ত। কর্মব‍্যস্ত জীবনে এসেছে অবসর। বিজন ছেড়ে গেছে ওদেরকে।কত কথা, কত স্মৃতি! আজ বিজনের সৌজন্যেই হাত পাততে হয় না কারো কাছে। টিয়া-রজত এসেছে, বুয়াদের সাথে জমিয়ে আড্ডার আওয়াজ আসছে, এই টুকু ভাইবোনের মধ্যে থাকুক অতসীর একান্ত কামনা এটাই। নাতি নাতনিদের হুটোপাটি আজ বোঝে বাবা মায়ের আনন্দের অনুভূতিকে। অন‍্যমনস্কতা কাটে সোমার ডাকেমা, একা কি করছো, ওঘরে চলো না
ছিলাম তো, এই একটু টান হলাম, বল্।
পনেরো- কুড়িজনের জন্য পোলাও বানাতে কি কি কতটা পরিমাণে লাগবে বলোনা!
এতজনকে জোগাড় করলি কি করে, কেন ?
মামনি, দেখো না কালকে কতজন আসবে!
কেন রে, কালকে কি ??
ঐ গেট টুগেদার আর কি, বলো না
সে ভালো তবে এতজনের হ‍্যাপা নিতে গেলি কেন, আমাদের ঐ ক‍্যাটারারকে বললেই পারতি!
না ,না আমি একা না। দিদিভাই, মাসীমনি সবাই মিলে করবো।
ও বাবা! ছুটিও আসছে?
মামনি, আমার বাপী-মাও আসছেন।
এবার আমার ভারি রাগ হচ্ছে, আমি কিছু জানিনা
সোমা হাসতে হাসতে বলে " মামনি, ছেলেরা বলেছে ওরা নাকি পরিবেশন করবে।"
বাঃ, আর আমাকে কি দায়িত্ব নিতে হবে শুনি!
সবার সাথে আনন্দ করে সবাইকে দেখাশোনা করো, কেমন! আর পোলাও! ওটা তো তোমাকেই করতে হবে।
             রাতে বুঝতে পারে কাল কিছু একটা হচ্ছে, ওকে বাচ্চাগুলোও বলছে না, হেসে দৌড় মারছে। সকালে পুজো সেরে উঠতে উঠতেই এক এক করে সবাই আসতে লাগলো। কতদিন পর ছুটি এলো, দিদি বলে জড়িয়ে ধরলো যেন মাকে জড়িয়ে ধরেছে এমন‌ই অনুভূতি দুজন দুজনকে জড়িয়ে। এক‌ই সাথে হতচকিত সবার হাতে ফুল-মিষ্টি ইত‍্যাদি দেখে অতসী এসব কি!! সমস্বরে সকলে বলে ওঠে " হ‍্যাপি বার্থডে টু ইউ, শুভ জন্মদিন....
নীরবে, অশ্রুসজল চোখে মনের মাঝে বেদনার ভার বহনকারী অতসী সবার মনে আসন পেয়েছে, দারিদ্র্য,অল্প শিক্ষিত পরিচয়ের উপরে ভালোবাসার পরশে আপন করে নেওয়া ফিরিয়ে দিল সুদে-আসলে সত্তোরোর্ধ্ব বয়স। আনন্দাশ্রু গড়িয়ে এলো চিবুক ছুঁয়ে।




















Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান