জানলা
সমাজ
বসু
মোবাইল ক্লিক করল মৌলী,সাতটা
চল্লিশ। আটটার মধ্যে বিজিতের আসার কথা। আড়াই বছরের মেলামেশা। এখনও সে দোলাচলে।
অনেক ভাবে বিজিতকে বোঝার চেষ্টা করেছে। বুঝতে পারেনি বা পারছে না। অথচ বাইরে
যাওয়ার আগে এমন ছিল না। একদিন দেখা না হ'লেই হাঁপিয়ে উঠত।
বিজিত বরাবরই মেধাবী। মেধার
জোরেই ডেনমার্কের একটা কোম্পানিতে সরাসরি সিইও। বিদেশে প্রায় দু'বছর হতে
চলল। বিদেশী আদবকায়দা এখনও রপ্ত করতে পারেনি। মাসখানেকের জন্য এখানে এসে যেন
স্বস্তি পায়। কিন্তু এবার মৌলী একটু দিশেহারা। কেমন অচেনা লাগছে। তার স্বভাবে কোন
গাছের স্তব্ধ ছায়াতল তো সে আগে দেখেনি। ঝরে পড়া পাতার মত মৃদুস্বরে তাকে মানায়
না। তবু মৌলীকে মেনে নিতে হয়। মানুষের জীবন আকাশের মত। কখন কোন্ রঙের প্রলেপ পড়ে
কেউ জানে না।
আর্থিক স্বচ্ছলতা কোনদিন ছিল
না তাদের। বাবার একান্ত ইচ্ছায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে। ইংলিশে এমএ করার পর
কল সেন্টারের চাকরি। চাকরি তো না,গিলেটিন। সারাদিন পিষেই চলেছে। এইরকম নিজের একটা বর্ণহীন
অস্তিত্ব নিয়ে বেশ আছে মৌলী। বিজিতকে সে ভালবাসে। কিন্তু তাকে নিজের জীবনের সঙ্গে
জড়িয়ে রাখবে,এ
এক আকাশকুসুম স্বপ্ন। সে দূরেই থাকতে চায়।
বিজিতই বারবার তার স্বপ্নকে জাগিয়ে দিয়ে যায়। কাল সকালের ফ্লাইট। আবার
আট থেকে দশ মাসের বিরতি। প্রতিবার এমনটাই করে। যাওয়ার আগের দিন দেখা করা চাই। আজও
সেই দিন।
- কী হল কতক্ষণ? চমকে যায়
মৌলী। এ কোন্ বিজিত! এতদিনের চেনা রোদ,আজ যেন উপুড় করে দিচ্ছে আলো।
একদৃষ্টে চেয়ে থাকে সে।
- এই তো আধঘন্টা হবে। কাল চলে
যাচ্ছো,তাই...
- তাই আজ আর অনুযোগের খাতা
খুলবে না তাই তো? ঠিক
আছে, হাতে
সময় কম। চলো,একটু
ক্যাফেতে বসি। বিজিত জোর খাটালো। আজ মৌলীকে সবকিছু মেনে নিতে হবে। অন্তত মন থেকে
সে তাই চায়। বিজিতের হাত ধরে নেয়।
-বিজিত,আজ একটা
জরুরী কথা বলতে চাই। মায়ের চলে যাওয়ার পর বাবা এমনিতেই মনেপ্রাণে নিঃস্ব। এখন
শরীরও ভাল যাচ্ছে না। আমিও তৈরি হচ্ছি। বাবার অবর্তমানে মাঝনদীতে পড়লেও, যেটুকু
সাঁতার জানি ভেসে যাব। কিছু খড়কুটো আঁকড়ে নেব। তোমার সামনে ঝলমলে ভবিষ্যত। আমার
অন্ধকারে নিজেকে ঢেক না।
-তোমার কথা শেষ। এইবার আমি যে মুখ খুলব। তুমি সবসময় মনের
জানলা দুটো বন্ধ করে রেখেছ। তাই জানলার বাইরে অনেক আগাছা জন্ম নিয়েছে। অনেকদিনের
বন্ধ,তাই
বাইরের মানুষ দেখতে পাও না। জানলাটা খুলে দাও,দেখবে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
-আমি তোমাকে কোনদিন কিছু দিতে
পারিনি। পারবও না কোনদিন। তাই...
-তোমায় কিছুই দিতে হবে না।
আমায় শুধু তোমার অনামিকা দাও। এই বলে বিজিত প্যান্টের পকেট থেকে একটা ছোট বাক্স
বের করে আনে। তারপর একটা আংটি মৌলীর অনামিকায় পরিয়ে দেয়। মৌলীর দুচোখে কান্নার
সঙ্গে বিষ্ময়ের মুক্তো ঝরে পড়ে।
কিছু বলার আগেই মেট্রোর লাস্ট
ট্রেনটা ধরার জন্য এগিয়ে যায় বিজিত। মৌলীর মনে হলো, অনেকদিনের
বন্ধ জানলার পাল্লাটা খুলে একটা অবলম্বন রেখে গেল বিজিত। খোলা জানলা দিয়ে মিষ্টি
একটা বাতাস এলো। আর সেই বাতাসে মৌলীও ভেসে চললো...
Download ALEEK PATA Mobile APP
। নববর্ষ-১৪২৮| Aleekpata.com |
|ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|Bengali New Year Issue, 2021 | April -July 2021|
| Fifth Year First Issue |27 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |