অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Saturday, October 1, 2022

গল্প -বড়দাদাদুর ম্যাজিক -প্রতীক কুমার মুখার্জি

 গল্প

বড়দাদাদুর ম্যাজিক

প্রতীক কুমার মুখার্জি

 

দিনকুড়ি জমিয়ে দস্যিপনা করার পর ইলেভেন বুলেটস কাঁদোকাঁদো মুখে নিজের নিজের বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয় প্রতিবার। 'ইলেভেন বুলেটস' ব্যাপারটা বোঝা গেলো না তো? দেশের বাড়িতে জমায়েত হই সকলে -  দাদু, ঠাকুমা, জ্যাঠা, কাকা আর পিসীরা - ফি বছর দুবার করে, গরমের ছুটিতে আর পূজোর ছুটিতে। সাথে আমরা, একেবারে গুনে গেঁথে এগারোজন 'তুতো' ভাইবোন!

পূজোয় আমাদের পোয়াবারো, কারণ ছোট করে হলেও একচালা দুর্গাপ্রতিমায় সেজে ওঠে চল্টা উঠে যাওয়া লাল মেঝের আমাদের আদি বাড়ির নাটমন্দির। বড়োরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন পূজোর জোগাড়ে, আর মায়েরাও রাশে আলগা দেন। ফলে গাছে উঠে নাচানাচি করা থেকে সবলুর দিদার আচার চুরি, নিশাদাদুর পেয়ারাবাগানে ডাকাতি, বুধনকাকুদের ছিপের ফাতনায় ঢিল ফেলে মাছধরার দফারফা করা, আরো অনেক নাশকতামূলক কাজকর্ম চলে, যার সবটা বলে দিলে সবাই আমায় একঘরে করবে।

প্রতিবেশীরা নালিশ করতে এলে, বাবা জ্যাঠারা চোখ পাকিয়ে নড়েচড়ে বসেন চোয়াল শক্ত করে। ছোটকা ফুট কাটে, "আহা, গরুগুলো কতদিন পরে ছাড়া পেয়েছে, মেরো না, বরং ওদের খোয়াড়ে দিয়ে আসা হোক!" আমরা ছোটকার উপর বিশেষভাবে খাপ্পা। আজই যেমন টুম্পি আচার চুরি করতে গিয়ে, জলভরা কলসির উপর পড়ে  বানভাসি জল আর ভাঙা কলসির টুকরোর মধ্যে থেবড়ে বসা অবস্থায় ধরা পড়ে যারপরনাই অপদস্থ। তারপরেও ছোটকা যখন "আচ্ছা, সরকারিভাবে এদেরকে 'রোগ' হিসেবে ঘোষণা করা যায়না?" বলেছে, খণ্ডযুদ্ধ বাধার উপক্রম!

একটা খামচাখামচি কান্ড ঘটেই যেত, যদি না টুকটুকে ফরসা একটা হাত এসে ছোটকার কানে একটা মোলায়েম মোচড় দিতো, "অতু, বুড়ো হতে চললি নিজে, এখনো বাচ্চাদের পিছনে লাগা!" বড়দাদাদু এসে গেছে!! অশান্তির অবসান। দুমিনিটের ভিতরে চারদিক ভোঁ ভা, শুধু ছোটকা আহত কানে হাত বুলোতে বুলোতে, "পাইড পাইপার এসে গেছে, ছুঁচোর কেত্তন এবার বন্ধ", বলেই স্যুট করে স্টাডিতে ঢুকে পড়লো। আর আমরা দাদুকে গার্ড অফ অনার দিয়ে, ব্যাগ ব্যাগেজ কোলেপিঠে করে নিয়ে টং এর ঘরে। বড়দাদাদু এলেই রোজ একখানা করে দুর্দান্ত গল্প আমাদের বরাদ্দ - তাই 'ছুঁচো' অপবাদটা গায়ে মাখলাম না।

দাদুকে ধাতস্থ হবার সময় দিতে আমরা গাড়ি বারান্দার ডান কোণে নীচের ধাপে জমা হলাম। সেখানে তখন ঘুমন্ত ফুলির সারাগায়ে গড়াগড়ি দিচ্ছে তার আট বাচ্চা। আমাদের দেখে মুখ তুলে হাল্কা করে একবার "ভুক" করেই পাশ ফিরে শুতেই চারটে ছানা টপাটপ ডিগবাজী খেয়ে গেল। ও, ফুলির সাথে আলাপ হয়নি বুঝি? আরে, আমাদের ফুলির দুধসাদা গায়ে বাদামীর ছোপ, কানদুটো ঝোলা, আর চোখদুটো কথা বলে। ওর মুখটা এতো মায়াময় যে পল্টনদাদা ওকে এখানেই আশ্রয় দিয়েছে।

আমরা তুলোর বলের মত বাচ্চাগুলোকে চটকাচ্ছিলাম, এমন সময় ধোপদুরস্ত পোষাকে বড়দাদাদু স্নান সেরে হাজির। বাগানের দিকে যেতে যেতে বলে গেলো, "মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু, দ্যাখ কি নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে তোদের হাতে ছানাগুলোকে ছেড়ে দিয়ে! কিন্তু জানিস - কিভাবে কুকুর মানুষের কাছে এসেছিল?"

আমরা ঘুড়ির মাঞ্জার মশলা নিয়ে আলোচনা করছিলাম। দাদুর কথাগুলো কানে ঢুকতে আমরা স্ট্যাচু! তারপরে পংগপালের মত ধেয়ে গেলাম দাদুর পিছনে। বড়দাদাদু যেন এই আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল, সাথে সাথেই বলল, "হবে, হবে বিকেলে হবে। এখন বাড়িটা ঘুরে দেখতে দে।" গাছে পুরুষ্টু ডাব দেখে পল্টনদাকে নিয়ে লেগে পড়ল। কাজেই, আবার আমরা ফুলির কাছে ফিরতে, সে আমাদের দেখে আরেকপ্রস্থ পাশ ফিরলো।

দুপুরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়ার পর দেখা গেলো আকাশ ধীরে ধীরে কালো হতে শুরু করেছে। ক্রমে অন্ধকার হয়ে এলো, প্রবল ঝড়জল শুরু হলো। আমরা সবাই দুদ্দাড় করে নীচে এসে বাচ্চাগুলোকে কোলে তুলে ফেলতেই ফুলি একটা রাগী ডাক ছাড়লো। বড়দাদাদু বলল, "ছানাগুলোকে আমার ঘরে নিয়ে আয়, ওদের মা সাথে সাথেই চলে আসবে।" এসবের পর ঠিক সাড়ে তিনটের সময়, শুরু হলো বড়দাদাদুর গল্প। ঘরের মাঝখানে গুটিসুটি মেরে ঘুমোতে লাগল ফুলির 'ফুল ফ্যামিলি'!!

স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই দাদু শুরু করল, "ভেবে দ্যাখ, এখনি গল্পটা শুনে ফেলবি নাকি সন্ধ্যেবেলায়? এখন তো ভূতের গল্প ভালো?" আমরা প্রবল আপত্তি জানাতে গল্প শুরু করল বড়দাদাদু, "মস্কোর স্মোলেন্সকে থাকতাম, তখন আমাদের বাটলার দিমিত্রি বুড়োর মুখে শোনা 'নেন্টুক' প্রদেশের এই উপকথা। তবে একটা কথা পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার, আগেরবারের হিসেবে আমি দুটো হামি কম পেয়েছিলাম। তাই এবার পারিশ্রমিক আগাম চাই।"

মুখ চাওয়াচাওয়ি করেই চটজলদি বড়দাদাদুর 'পারিশ্রমিক' দাদুর আপেলের মত টুকটুকে গালে আছড়ে পড়তে লাগলো, পাছে অস্বীকার করলে গল্পের কোয়ালিটি পড়ে যায়! ফুলিও উঠে বসে লেজ নাড়াতে শুরু করলো আহ্লাদে।

'বহুকাল আগে কুকুর থাকতো জংগলে, সে কখনো লোকালয়ে আসেনি, মানুষের সাথে থাকা তো দূরের ভাবনা, সে মানুষ দেখেইনি। মানুষের অনেক গল্পগাছা তার বাপ ঠাকুরদাদের কাছ থেকে শুনে মানুষকে সে অন্য গ্রহের প্রাণী ভাবা শুরু করেছিল। কিন্তু একা আর কতদিন থাকা যায়? সব মিলিয়ে সে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছিল।'

'একটা কেউ নেই যার সাথে দুদণ্ড সুখদুঃখের কথা বলে সময় কাটায় সে। সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ায় বেচারা, যা পায় তাই খেয়েই পেট ভরায়, যেদিন খাওয়া জোটে খায়, আর যেদিন পায়না, সেদিন জল খেয়েই রাত কাবার করে। তার যদি একটা বন্ধুও থাকত, তাহলে জীবনটা কতো সুন্দরভাবে কেটে যেতো!'

'ঘুরতে ঘুরতে সে দেখা পেলো ছোট্টছোট্ট, সাদা তুলতুলে লালচোখ খরগোশের। কুকুর আর একবিন্দু সময় নষ্ট না করে খরগোশের কাছে কথাটা পেড়ে ফেললো, "খরগোশ ভাই, চলো না এখন থেকে আমরা দুজন মিলে একসাথে থাকি! খুব মজা হবে, এক বাড়িতে থাকবো, খাবো, গল্প করবো, আর একসাথে সারা জীবনটা কাটিয়ে দেবো!"

'খরগোশ সানন্দে রাজি হয়ে গেলো। না হবার কিছু ছিলোনা, কারণ বন্ধুকে না চায়, আর কুকুর তার সাথে থাকলে, তারও খুবই সুবিধে হবে। সে বলল, "বেশ তো ভাই, চলো আজ থেকে আমরা বন্ধু হলাম, চলো আমার বাড়িতে।"

'এভাবে সারাদিন ওরা দুজনে গল্পসল্প করে কাটালো,' এই বলে বড়দাদাদু কোলবালিশ জড়িয়ে শুয়ে পড়লো! বাইরে তখন ঝড়বৃষ্টিতে কিছু দেখা যাচ্ছেনা! আমরা সদলবলে দাদুর উপর চড়াও হলাম, "কি ব্যাপার দাদু? এটা কি তুমি ঠিক করলে? আগাম 'পারিশ্রমিক' নেওয়া হয়ে গেছে বলে তুমি মীরজাফর হয়ে যাবে?"

দাদু পাশ ফেরা অবস্থাতেই রাগী গলায় বলল, "বটে? বুড়ো হয়েছি, বাইরে ঝড়জল, কোথায় বলবে, দাদু চা খাবে না কফি, কোথায় বাক্স থেকে হাভানার সিগার বার করে হাতে ধরিয়ে দেবে, তা না! তোরা নাতি নাতনী না ভূতপেত্নী! মিথ্যা আমায় দোষ দিচ্ছিস, ওরাও তো গল্প করছে, ততক্ষণে না হয় আমিও একটু জিরিয়ে নিলাম!"

ঠোট টিপে হেসে নিয়ে আমরা ব্যস্ত হলাম বড়দাদাদুর পরিচর্যায়। একবার যদি দাদু হাতছাড়া হয়ে যায়, দেশবিদেশের গল্প শোনার সেখানেই ইতি। সমস্ত ব্যবস্থা করে আবার দাদুকে গল্পে ফেরানো গেলো। অবশ্য তার আগে উনি দলাই মলাই, চুলে বিলি কাটা আর পা টেপানোর ডিউটিগুলো আমাদের দিয়ে করিয়ে ফেললেন! গরম কফি আর সিগার শেষ করে আবার গল্পশুরু হলো।

'সারাদিন কাটিয়ে ওরা দুজনে ঘুমোতে গেলো, কিন্তু মাঝরাতে কোনো একটা শব্দ শুনে কুকুর তারস্বরে ঘেউঘেউ করে ডাকতে শুরু করলো। সেই প্রচন্ড শব্দে বেচারা খরগোশের ঘুমের দফারফা! সে ভয়ে ভয়ে কুকুরকে বলল, "আরে বন্ধু, কি হয়েছে তোমার? রাতের বেলা এভাবে ডাকাডাকি করলে মস্ত বিপদ! নেকড়েবাঘ এসে আমাদের দুজনকেই খেয়ে ফেলবে তো!"

'এই কথা শুনে কুকুর হতবাক! সে ভাবলো, আমি তো ভুল লোকের সাথে বন্ধুত্ব করেছি। খরগোশ তো ভীতু, এর সাথে থাকলে আমার জীবনে কিচ্ছু শেখাই হবেনা। আমার মনে হচ্ছে নেকড়েবাঘ হলো সবচেয়ে সাহসী। সে তখনই কাঁদোকাঁদো অবস্থায় খরগোশকে একা ফেলে নেকড়ের খোজে বেরিয়ে পড়ল।'

'পথ চলতে চলতে কুকুর অনেক দুরের রাস্তা পেরিয়ে এলো। রাস্তায় অনেককে জিগ্যেস করতে করতে ঘুরে ঘুরে সে উপস্থিত হলো নেকড়েবাঘের ডেরায়। প্রথমেই তো নেকড়েবাঘের চেহারা, তার গায়ের বোটকা গন্ধ আর রাগী মুখ দেখে সে ভয় পেয়ে গেল। নেকড়েবাঘ তাকে দেখে আরো রেগে উঠলো, তার মুখ দিয়ে লালা ঝরতে আরম্ভ করলো।'

'ভয় পেলেও কুকুর ভাবলো, "এই একটা বুক বাজিয়ে বলার মতো বন্ধু পেয়েছি। এ আমার বন্ধু হলে, সবার তাক লেগে যাবে।" হাতটাত কচলে নেকড়েবাঘের সামনে বন্ধুত্বের কথাটা পেড়েই ফেলল। নেকড়েবাঘ তেজীয়ান লোক। চিন্তাভাবনা করে সেও মত দিলো। কুকুরের মজা দেখে কে!'

'সারাদিন ধরে নেকড়েবাঘ তার বীরত্ব আর শিকারের প্রচুর গল্প বলে কুকুরকে অবাক করে দিয়েছিলো। কুকুর ভাবলো দুনিয়ার সবচেয়ে সাহসী জানোয়ার তার সহায়। যথারীতি দুই বন্ধু কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমোতে গেলো। কিন্তু আবার গোলমাল বাধলো রাত হতেই।'

'মাঝরাতে আবার কুকুরের প্রাণপণ ঘেউঘেউ শুরু হলো। নেকড়েবাঘের ঘুম সাংঘাতিক, প্রবল নাকডাকা থামিয়ে ঘুম ভেঙে চমকে উঠে বসলো, "আরে আরে, করছো কি? এই শব্দ শুনলে এক্ষুনি কি হবে জানো? ভাল্লুক ঠিক শুনতে পাবে আর আমাদের দুজনকেই নখ দিয়ে ফালাফালা করে চিরে ফেলবে! একদম চুপ, আর একটা আওয়াজ যেন না শুনি!"

'কুকুর ভাবলো, এ কি ফ্যাসাদে পড়লাম রে বাবা! সবাই বলে নেকড়ে নাকি বাঘ, এ তো দেখছি একেবারে রামভীতু। এর সাথে সে যদি থাকি দিন দিন আমিও সাহস হারিয়ে ফেলবো! এ যখন ভাল্লুককে এতো ভয় পাচ্ছে, তখন সে না জানি কি সাংঘাতিক জানোয়ার! গেলে তার কাছেই যাবো, পাতালে তার সাথেই বন্ধুত্ব পাতাবো। '

'সে কায়দা করে নেকড়েবাঘকে বলল, "বন্ধু, আমার বাড়ির চাবি ফেলে এসেছি, এক্ষুনি যেতে হবে, নইলে আমার সব জিনিস চুরি হয়ে যাবে!" এই না বলে পগারপার!! কুকুর সোজা ভাল্লুকের খোজে বেরিয়ে পড়লো। দরকার নেই তার নেকড়েকে সত্যি বলার। বলা যায়না, রেগেমেগে যদি তার মাথাটা কুড়মুড় করে চিবিয়ে দেয় একবার!'

ঝড়বৃষ্টি ধরে এসেছে, বিকেল হয়েছে। দাদু এই অব্দি বলে বিশাল একটা হাই তুলে সশব্দে আড়মোড়া ভাঙতেই রিকু বুদ্ধি করে পরেশদাকে হাক পাড়লো, "পরেশদাআআ, দাদুর পান আনো, আর একটু পরে নারকোল কোরা, ঘি আর চিনি দিয়ে মুড়ি মেখে এনো।"

বড়দাদাদু ভ্রূ নাচিয়ে বলল, "পাক্কা গিন্নীবান্নি হয়েছিস দেখি রিকু, বুড়োকে একটু বিশ্রাম নিতেও দিবি না? তবে আর কিন্তু বেশী বাকি নেই গল্পের, পানটাই দিতে বল। মুড়ি খাবো সন্ধ্যেবেলায়, তার অনেক আগে গল্পের পাখি ফুড়ুৎ হয়ে যাবে।" রিকু লজ্জায় লাল হয়ে দাদুর গলা ধরে ঝুলে পড়লো।

পান মুখে নিয়ে রাঙা ঠোটে আবার গল্প শুরু হলো। 'আবার তো বেরিয়ে পড়লো কুকুর বাবাজী। একেবারে ভাল্লুকমশাইএর খোজে! যাকে জিগ্যেস করে ভাল্লকের বাড়ি, কেউ কিছু বলেনা, ভয়ে সরে পড়ে। মহা মুশকিল! শেষে বুদ্ধি করে মৌমাছিদের বলতে তারা একটা পাহাড় দেখিয়ে বলল, "ওই পাহাড়ের গুহায় শয়তানের বাস। আমরা কষ্ট করে মধু বানাই, আর মাঝে মাঝেই এসে আমাদের চাক ভেঙে, মধু খেয়ে চলে যায়।"

'কুকুর পাহাড় চড়তে শুরু করলো। পেয়ে গেছে, সবচেয়ে সাহসী লোক সে পেয়ে গেছে। ভাবতে ভাবতেই কুকুর সামনে একটা কালো পাহাড়কে এগিয়ে আসতে দেখলো। ভাল্লুক!!! সে ফলমূল খুজছিলো একমনে, হঠাত দেখে কালো বাদামী মেশানো একটা প্রাণী তার সামনে ডিঙি পেড়ে শুয়ে পড়ে কেউকেউ করছে!

শান্ত হতে সে বলল, "ভাল্লুকদাদা, আমার কেউ নেই, দয়া করে তোমার সাথে আমায় থাকতে দেবে?" ভাল্লুকের চেহারা, নখ, দাত আর ভুসো কালির মতো রঙ দেখে কুকুর 'বন্ধু' হবার কথা বলতে সাহস পায়নি!'

'ভাল্লুক ঠোট উলটে বলল, "এই কথা, তা থাকো না গুহার এককোণে। তবে বাপু, গুহা রোজ ঝাঁটপাট দিয়ে পরিষ্কার করে রাখার কাজ তোমার।" কুকুর উঠে দাঁড়িয়ে নমস্কার টমস্কার করে অস্থির। যথারীতি রাত হতেই সেই এক ব্যাপার, কুকুরের প্রাণপণ ঘেউঘেউ।

ভাল্লুকটা একগাদা ফলটল খেয়ে ঝিমোচ্ছিলো, কাঁপতে কাঁপতে উঠে বসলো, "করো কি, করো কি? মানুষ শুনতে পেলে, তোমায় তো মারবেই, সাথে আমায় মেরে, চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে।" কুকুরের এই অবস্থতেও হাসি পেলো, অতোবড় জানোয়ারটা মানুষের ভয়ে থরহরি কম্প!!'

'হতাশ হয়ে ভাল্লুককে একটা চাদর চাপা দিয়ে সে বেরিয়ে পড়লো মানুষের খোঁজে। এতোবড় ভাল্লুকের চামড়া যে ছাড়িয়ে নিতে পারে, সেই সবচেয়ে বড়ো। মানুষই হবে তার বন্ধু। বেশিদূর যেতে হলোনা তাকে। এক মানুষ  এসেছিল জংগলে কাঠ কাটতে।

মানুষের চেহারা দেখে কুকুর দমে গেলো। এই মানুষ! একে সব্বাই ভয় পায়? একে তো এক কামড়ে সেই মেরে ফেলতে পারে! সে মানুষকে তাচ্ছিল্যভরেই বলল, "কিগো, আমায় তোমার সাথে থাকতে দেবে?'

'মানুষ তাকে এক ঝলক দেখে বলল, "বেশ তো, চলো আমার বাড়িতে, সাথে থাকবে! তা তুমি কি খাও বাছা?" কুকুর চমকে উঠলো। তাকে তো কখনো কেউ খাবার কথা জিগ্যেস করেনি! সে বলল, "চিন্তা নেই, আমি আমার খাবার জোগাড় করে নিই।" মানুষ বলল, "ওটি হবেনা। আমার সাথে থাকতে হলে আমিই তোমার খাবার জোগাড় করে দেবো, তুমি শুধু বন্ধুর মতো বাড়িতে থাকবে।"

কুকুরের চোখে জল এলো খুশীতে।'

'যথারীতি রাতে মানুষের বাড়িতে সবাই শুয়ে পড়েছে, কুকুর বাবাজী আবার তার কান ফাটানো ঘেউঘেউ শুরু করলো। মানুষের ঘুম ভেঙে গেলো। সে বাড়ির চারপাশ দেখে এলো মশালের আলোতে, বলল, "কিচ্ছু ভয় নেই, ঘুমিয়ে পড়ো, আমি আছি তো!" এই বলে সে পাশ ফিরে নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কি সাহস মানুষের! কুকুর সেইদিন থেকে কোথাও নড়েনি মানুষকে ছেড়ে!'

গল্প শেষ, বড়দাদাদু উঠে বসল, আর আমরাও হা হওয়া মুখগুলো বন্ধ করতে করতে বাস্তবে ফিরে এলাম। ফুলিও গল্প শুনছিল বোধহয়, সেও আবার দিব্যি পাশ ফিরে শুয়ে পড়তেই দাদু বলল, "দেখেছিস, এত বছর মানুষের বন্ধু হবার ফলে কি নিখুঁতভাবে পাশ ফিরে শোওয়া রপ্ত করেছে?" বলেই একটা অট্টহাসি!!

দাদুকে অবাক করে দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে হামি দিতে থাকলাম আমরা। ফুলিও তড়াক করে উঠে পড়লো, আর তার বাচ্চারা আমাদের কোলে চেপে, পুরো দলটা সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকলাম। ঝড়জল থেমে গেছে, কোথায় যেন ঢাকে কাঠি পড়েছে!

ছোটকা পায়ে পায়ে স্টাডি থেকে বেরোচ্ছিল, আমাদের নামতে দেখে আবার মুখ চুন করে বেচারা ঘরে ঢুকে পড়লো। উল্লাসে চিৎকার করলাম, "পাইড পাইপার জিন্দাবাদ, লং লিভ ছুঁচোরকেত্তন!" আমাদের সাথে গলা মেলালো নানান সুরে, কারা আবার? ফুলি এন্ড সন্স!!!

| শারদ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 30th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Durga Puja , 2022 | July-Oct 2022 | Fifth Year Fourth Issue  |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |



 



 

No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান