অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



"অলীক পাতা নববর্ষ সংখ্যা ১৪৩১ প্রকাশিত, সমস্ত লেখক -লেখিকা এবং পাঠক -পাঠিকাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা..."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Wednesday, October 2, 2019

গল্প- চিরন্তন সম্পর্ক -জ্যোতিকা পোদ্দার


চিরন্তন সম্পর্ক

জ্যোতিকা পোদ্দার
Collage Swarup Chakraborty


দৃশ্য ১

রাত দশটা বেজে গেল তনিমা এখন ও বাড়ি ফিরল না, গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন প্রণতি দেবী। খোকা ও বিদেশে গেছে দুবছরের জন্য প্রজেক্টের- কাজ নিয়ে। গোটা বাড়িতে তিনি আর তনিমা এখন একা। সকাল দশটা বাজতে না বাজতেই  মেয়ে অফিসে চলে যায়। প্রতিদিন মোটামুটি রাত আটটার মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসে তনিমা ।এত দেরি তো কখনো হয়না! বারবার ফোন করছেন, ফোন ও সুইচড অফ বলছে।
এত বড় দায়িত্ব জ্ঞানহীন মেয়ে! প্রনতি দেবী বুঝতে পারছেন না কী করবেন এখন,_ শুধু ঘর বার করছেন।নিজের বড়দিকে ফোন করতে যাবেন ই ভাবছেন ,এমন সময় বাড়ির সামনে অটো এসে দাঁড়ালো। অটো থেকে নামল তনিমা। দরজা খুলে প্রচন্ড রেগে প্রণতি দেবী  তনিমা কে বললেন,-"নিজে তো ফিরতে দেরি হবে জানিয়ে ফোন করলি ই না, উল্টে আমি বারবার ফোন করছি ,কিন্তু ফোনটা সুইচ অফ করে রেখেছিস।বলি তোর ব্যাপারটা কি? আমার বাড়িকে কি হোটেল ভেবে রেখেছিস যে ,যখন খুশি আসবি,_যখন খুশি যাবি; চলবে না ,এইসব বলে দিলাম।"
তনিমা ছুটে এসে প্রণতি দেবীকে জড়িয়ে ধরে বলে, "মা ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল, আর তোমার প্রেসারের ঔষধ টা আমার অফিসের পাশের দোকানে পেলাম না ।একটু দূরে যেতে হল। তাই দেরি হয়ে গেল, রাগ করোনা মা প্লিজ"!
তার ঔষধ আনতে গিয়ে দেরি হয়েছে শুনে প্রনতি দেবীর রাগ একটু কমলো।  তিনি বললেন_ "যা তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি খাবার গরম বসাচ্ছি"।

দৃশ্য ২

সকাল সাড়ে নটা। তনিমা আর প্রনতি দেবীর মধ্যে খাওয়া নিয়ে যুদ্ধ চলছে। তনিমা কিছুতেই খেতে চাইছে না , প্রণতি দেবী জোর করে আর একটা রুটি দিলেন। বললেন -"শিগগিরিই এই রুটিটা খেয়ে নে ;অফিসে গিয়ে তো আর তেমন কিছুই খাবি না, টিফিনটাও আধা দিন পুরো খাস না এইটুকু না খেলে চলে"। বলে জোর করে রুটির টুকরোটা মুখে তুলে দিলেন।তনিমা প্রণতি দেবীর  কথা ফেলতে পারে না ;খেয়ে নেয় ।আর হেসে  বলে _"খাইয়ে খাইয়ে তুমি আমাকে এমন মোটা করে দেবে যে, তোমার খোকা এসে আর আমাকে চিনতেই পারবে না "_এই বলে হাসতে হাসতে অফিস চলে যায়।
দৃশ্য

প্রণতি দেবী বারান্দাতে এলে পাশের বাড়ির সেনগিন্নি বললেন,- "কাল তনিমাকে দেখলাম অনেক রাত করে বাড়ি ফিরলো,দিনকাল ভালো নয়। মেয়ে মানুষ, বদনাম ছড়াতে কতক্ষণ"! এতক্ষণ চুপ করে সব শুনছিলেন প্রণতি দেবী, আর থাকতে না পেরে বললেন,"তনিমা আমার খুব দায়িত্ব জ্ঞান পূর্ণ মেয়ে ;ওর প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা_ বিশ্বাস_ ভরসা সব আছে। কেউ যদি ওর বদনাম করে ,সেটা তার ব্যাপার, আমার কিছু যায় আসে না"।শুনে সেন গিন্নি মুখ বেঁকিয়ে ভেতরে চলে গেলেন ।মনে মনে বললেন-"আজকাল কার দিনে লোকের ভালো করতে নেই"।

দৃশ্য ৪

ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। এদিকে রান্নার দিদি বৃষ্টির জন্য বিকেলে কাজে আসতে পারেনি। প্রণতি দেবী ই রাতের রান্না করতে রান্না ঘরে ঢুকলেন। প্রনতি দেবী মনে মনে বললেন-"আহা ! মেয়েটা সকালবেলায় নাকেমুখে কোনমতে  দুটি গুজে অফিসে দৌড়ায়; ভালোমতো খেতেও পারে না ।আজ বরং  ওর জন্য খিচুড়ি আর ইলিশ মাছ ভাজা করি। বড্ড ভালোবাসে"।
খোকার বাবা গত হবার পর থেকে আমিষ ছেড়েছেন প্রনতি দেবী। মাছ-মাংস ছোন পর্যন্ত না। রান্নার দিদি  ই সব আমিষ পদগুলি রান্না করে। আর তনিমা বাড়ি থাকলে তনিমাই  বানায়। আজ আবার অনেকদিন পর নিজে হাতে আমিষ রান্না করলেন তিনি। পরম মমতায় ডাইনিং টেবিলে রাতের খাবার সাজালেন প্রণতি দেবী। কাকভেজা হয়ে তনিমা ঘরে ঢুকতেই ইলিশের গন্ধ নাকে এলো। হাতমুখ ধুয়ে তাড়াতাড়ি খেতে বসে গেল ‌ আজ রান্নায় অপূর্ব স্বাদ পেল।বুঝল এই রান্না ,রান্নার দিদি নয় মা বানিয়েছেন তার জন্য। খাওয়া শেষে প্রণতি দেবীকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো তনিমা। প্রণতি দেবী কপট বিরক্তিতে বললেন-"ছাড় পাগলী"।

দৃশ্য ৫

বিকেল থেকেই প্রণতি দেবীর শরীরটা ভাল লাগছিল না। ও তেমন কিছু নয় বলে নিজেই নিজেকে প্রবোধ দিলেন। তনিমা অফিস থেকে ফিরলে দুজনে রাতের খাওয়া শেষ করলেন। অন্যদিন খাওয়ার পর মা-মেয়ে দু'জনে বসে একটু গল্প করেন। আজ আর গল্প না করে প্রণতি দেবী তাড়াতাড়ি শুতে চলে গেলেন। তনিমা পিছু ডেকে জিজ্ঞাসা করল-"মা তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে"? প্রনতি দেবী উত্তরে হেসে মাথা নেড়ে বললেন -"ও তেমন কিছু না"। প্রণতি দেবীর চলে যাওয়ার দিকে তনিমা গভীর ভাবে তাকিয়ে রইল।

দৃশ্য ৬

হঠাৎ মাঝ রাতে বুকে প্রচন্ড চাপ অনুভব করে ঘুম ভেঙে গেল প্রণতি দেবীর। বুকে অসহ্য কষ্ট হচ্ছে । তনিমা কে যে ডাকবেন সেই গলার জোর পর্যন্ত নেই। চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করলেন ।জ্ঞান হারাতে লাগলেন। পুরোপুরি জ্ঞান লুপ্ত হওয়ার আগের মুহূর্তে মনে হল যেন, তনিমা তাকে ঝুঁকে পরে দেখছে। আর কিছু মনে নেই প্রনতি দেবীর।
জ্ঞান ফিরে দেখলেন হসপিটালের বেড়ে শুয়ে আছেন তিনি। পাশে বিধ্বস্ত ভাবে তনিমা বসে।  কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ লাল। অন্যপাশে ডাক্তারবাবু দাঁড়িয়ে।প্রণতি তার দিকে তাকাতেই ডাক্তারবাবু বললেন -"আর ভয়ের কোন কারণ নেই ।এ যাত্রায় আপনি বেঁচে গেলেন। তবে তনিমা দেবী, আপনি যদি ঠিক সময়ে ওনাকে হসপিটালে না আনতেন ,তবে যে কোনো অঘটন ঘটতেই পারত"-এই বলে ডাক্তারবাবু চলে গেলন।
 তনিমা আর নিজেকে সামলাতে পারল না;-হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। বলতে লাগলো-" তোমার শরীর খারাপ লাগছিল কেন বললে না?রাত্রিবেলায় আমি যদি তোমার ঘরে না যেতাম, তাহলে কি হতো ? তুমি আর সোমু ছাড়া আমার আর কে আছে ?তোমার যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে সোমুকে আমি কি জবাব দিতাম? আমি তোমার নিজের মেয়ে নই বলে কি ,আমাকে তোমার মনের কথা বলা যায় না"?
প্রণতি দেবী তনিমার  হাত দুটো ধরে বললেন-" ধুর পাগলী !তুই তো আমার মেয়ের থেকেও বেশি রে'!
মনে পড়ে গেল, তিন বছর আগের কথা, যখন সোমু মানে তার ছেলে সোমনাথএসে বলেছিল, ক্রিশ্চান মিশনারীতে  মানুষ পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন তনিমাকে সে বিয়ে করতে চায়। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সবাই না করেছিল। বলেছিল যে, বাপ মার পরিচয় হীন মেয়ে পরিবার সম্বন্ধে কি জানে? কোনো দায়িত্ব নিতে  পারবে না।  এ বিয়ে  সুখের  হবে না।
প্রথমে  প্রনতি দেবীর মনও  দ্বিধাগ্রস্থ ছিল। কিন্তু ছেলে  সোমুর  মুখের দিকে তাকিয়ে ,তিনি তনিমাকে পুত্রবধূ বলে মেনে নিয়েছিলেন।
 আজ বুঝলেন, তিনি সেদিন কোন ভুল করেননি,তনিমা কে  পুত্র বধূ করে। টক-মিষ্টি স্বাদে ভরা তার‌ আর তার পুত্রবধুর সম্পর্কটি বড়ই সুস্বাদু।
আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে ফেলেছেন যে ,প্রণতি দেবী আর তনিমা হল ,শাশুড়ি -বৌমা ।আর তাদের সম্পর্ক হল, বিনি সুতোয় গাঁথা এক চিরন্তন সম্পর্ক।।

।। সমাপ্ত ।।


| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
  | Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
|Special Puja Issue,2019 | September-October, 2019 |
| Third Year Third Issue |20Th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |






















No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান