অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Tuesday, June 19, 2018

যখন তখন-গল্প-শম্পা সান্যাল


নতুন জন্ম 

শম্পা সান্যাল
সংখ্যা-১৩, (২০ শে জুন,২০১৮)




বিজন অফিসে বেরোবার সময় অতসীকে সমস্ত রেডি করে হাতের কাছে এগিয়ে দিতে হয়, আজ‌ও তার ব‍্যতিক্রম নেই, তার‌ই ফাঁকে বললো"আমাকে কিছু টাকা দিয়ে যেও"।
কেন, টাকার দরকার কিজন‍্য ?
কাল গুড ফ্রাইডে পড়াতে বুয়াদের তিনদিন ছুটি, আজ ওদের নিয়ে বাবা-মাকে দেখতে যাবো।
বাঃ, এখন বলছো! একেবারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ?
মাকে বলেছি, মা মত দিয়েছেন তো।
আর আমার সুবিধা অসুবিধা সেগুলো কে দেখবে ?
সব তো গুছিয়ে রেখে যাই, এবার‌ও যাবো আর ছুটি আছে তো তোমার‌ও।
না, আমার ছুটি নেই। বাদ দাও, ভাবতে হবে না।
অনেকদিন যাই না, ছুটি ছোট হয়েও ওঁদের দেখাশোনা করে,আমি তো ফোন করে....
হ‍্যাঁ, কর্তব্য মানে তো গুচ্ছের টাকা....
কি বলছো!টাকা ধ্বংস করে আসি! কি করেছি ওদের প্রয়োজনে ? এভাবে কথা বলো না, যাতায়াতের জন্য যেটুকু লাগে সেটা কি অন‍্য কারো কাছে চাইবো?  
থামো, অফিস যাওয়ার সময় যত ঝামেলা।
বড় জামাই হয়ে কতটুকু কর্তব্য করো! মা-বাবা তো তাই নিয়ে
থাকলো, চললাম। লেকচার থামাও, হুঃ, টাকা যেন....
আজ যদি তুমি না থাকতে বড়দি ছোড়দি মা-কে দেখতো না
আমার মা যা পেনশন পায় তাতে কারোর পরোয়া করার দরকার পড়ে না বুঝেছো!!
অপমানে আজ‌ও জ্বালা ধরে মনে। বাক্-রুদ্ধ হয়ে বিছানায় বিজনের ছুঁড়ে ফেলা টাকার দিকে তাকিয়ে থাকে অতসী। নিজের উপরেই ঘেন্না ঝরে পড়ে অসহায় অতসীর।
           দুই মেয়ে পর পর, বাবা বেসরকারি চাকুরীজীবি, বিজনের সাথে অতসীর সম্বন্ধ আসলে বাবা-মা হাতে চাঁদ পেলেন যেন। রূপের জন্য বাধা এলো না কিন্তু বিয়ের পর যত সময় গড়িয়েছে অতসী অসম পরিবারে বিয়ের মর্ম বুঝেছে, বুঝতে পারছে। স্কুল থেকে ফিরেই ছেলেমেয়ের আব্দার কতক্ষণে দিদান বাড়ি যাবো! ছুটি‌ও আসবে, কতদিন পর দু-বোনে একসাথে থাকবে! বিকাল বিকাল যতটা পারলো সংসারের কাজ সেরে শ্বাশুড়ির অনুমতি নিয়ে বেরোলো। শ্বাশুড়ি ওকে সেভাবে দেখেন না, এটাই স্বান্তনা। ছুটি মা-কে মোবাইল কিনে দেওয়াতে এই সুবিধা, খবর দিতে পেরেছে। আগে আগে বুথ থেকে বাবাকে ফোন করতে হতো, দুটো বেশি কথাও বলতে পারতো না। এতক্ষণে তাঁরাও নিশ্চয়ই অস্থির, ঘর-বার করছে। আজকেও বাবা নির্ঘাৎ গলির মুখে দাঁড়িয়ে, এইসব ভাবতে ভাবতে অবশেষে বাড়ির কাছে এসে দ‍্যাখে সত‍্যিই বাবা দাঁড়িয়ে।রিক্সা থেকে নেমেই বাচ্চারা দাদুন দাদুন বলে ছুট্ লাগালো।মনে এলো ছোটবেলার কথা বাবার অফিস থেকে ফেরার সময় হলে মা-ও ঘরে-বাইরে করছেন আর দেখতে পেলেই দুই বোনের ছুট্, কে আগে যাবে। নিত‍্যদিন বাবার হাতে বাজারের থলে, পিছনে মায়ের চিৎকার" পড়ে যাবি, আরে মানুষটাকে আসতে দে তোরা", গলায় প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ের সুর আর বাবার সারাদিনের গ্লানি নিমেষে উধাও কি করছিলে, মা-র কথা শুনছো না!! পড়া হয়ে গেছে জানো বাবা আজকে না......কত কথা!কলকল করে দুজনে বলে যেত, শেষে মায়ের ধমক।মজা এটাই এখন বাড়িতে এলে খানিক বাদে বাবা মার নামে আর মা, রাজ‍্যের অভিযোগ মেয়ের কাছে।
      মায়ের চোখে জল, জড়িয়ে ধরে মাকে।বাবা-মা কি করবে আনন্দে, কাকে ছেড়ে কাকে আদর করবে, কি খাওয়াবে, তার‌ই সাথে কত কথা। কথা তো অতসীর বুকেও জমা, পারেনা বলতে। বাপের বাড়ি পা দিলেই যেন কেমন আলস‍্য। সকালে সাত তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়ার তাড়া নেই, শুয়ে বসে মাকে টুকটাক সাহায্য, দু-বোনের গল্পে কেটে যায় বরাদ্দ সময়। অদ্ভুত! দুই চরিত্রে দুই বাড়িতে অবস্থান করে একটি মেয়ে।
           প্রকৃতির নিয়মে সময় গড়িয়ে গেছে অনেকটাই।বাচ্চারা আজ তাদের বাচ্চাদের নিয়ে দারুণ ব‍্যস্ত। কর্মব‍্যস্ত জীবনে এসেছে অবসর। বিজন ছেড়ে গেছে ওদেরকে।কত কথা, কত স্মৃতি! আজ বিজনের সৌজন্যেই হাত পাততে হয় না কারো কাছে। টিয়া-রজত এসেছে, বুয়াদের সাথে জমিয়ে আড্ডার আওয়াজ আসছে, এই টুকু ভাইবোনের মধ্যে থাকুক অতসীর একান্ত কামনা এটাই। নাতি নাতনিদের হুটোপাটি আজ বোঝে বাবা মায়ের আনন্দের অনুভূতিকে। অন‍্যমনস্কতা কাটে সোমার ডাকেমা, একা কি করছো, ওঘরে চলো না
ছিলাম তো, এই একটু টান হলাম, বল্।
পনেরো- কুড়িজনের জন্য পোলাও বানাতে কি কি কতটা পরিমাণে লাগবে বলোনা!
এতজনকে জোগাড় করলি কি করে, কেন ?
মামনি, দেখো না কালকে কতজন আসবে!
কেন রে, কালকে কি ??
ঐ গেট টুগেদার আর কি, বলো না
সে ভালো তবে এতজনের হ‍্যাপা নিতে গেলি কেন, আমাদের ঐ ক‍্যাটারারকে বললেই পারতি!
না ,না আমি একা না। দিদিভাই, মাসীমনি সবাই মিলে করবো।
ও বাবা! ছুটিও আসছে?
মামনি, আমার বাপী-মাও আসছেন।
এবার আমার ভারি রাগ হচ্ছে, আমি কিছু জানিনা
সোমা হাসতে হাসতে বলে " মামনি, ছেলেরা বলেছে ওরা নাকি পরিবেশন করবে।"
বাঃ, আর আমাকে কি দায়িত্ব নিতে হবে শুনি!
সবার সাথে আনন্দ করে সবাইকে দেখাশোনা করো, কেমন! আর পোলাও! ওটা তো তোমাকেই করতে হবে।
             রাতে বুঝতে পারে কাল কিছু একটা হচ্ছে, ওকে বাচ্চাগুলোও বলছে না, হেসে দৌড় মারছে। সকালে পুজো সেরে উঠতে উঠতেই এক এক করে সবাই আসতে লাগলো। কতদিন পর ছুটি এলো, দিদি বলে জড়িয়ে ধরলো যেন মাকে জড়িয়ে ধরেছে এমন‌ই অনুভূতি দুজন দুজনকে জড়িয়ে। এক‌ই সাথে হতচকিত সবার হাতে ফুল-মিষ্টি ইত‍্যাদি দেখে অতসী এসব কি!! সমস্বরে সকলে বলে ওঠে " হ‍্যাপি বার্থডে টু ইউ, শুভ জন্মদিন....
নীরবে, অশ্রুসজল চোখে মনের মাঝে বেদনার ভার বহনকারী অতসী সবার মনে আসন পেয়েছে, দারিদ্র্য,অল্প শিক্ষিত পরিচয়ের উপরে ভালোবাসার পরশে আপন করে নেওয়া ফিরিয়ে দিল সুদে-আসলে সত্তোরোর্ধ্ব বয়স। আনন্দাশ্রু গড়িয়ে এলো চিবুক ছুঁয়ে।




















যখন তখন-ভ্রমণ-স্বরূপ কৃষ্ণ চক্রবর্তী (৫)

ইউরোপ ভ্রমণ -(পর্ব ৫)

স্বরূপ কৃষ্ণ চক্রবর্তী

সংখ্যা-১২, (১৯শে জুন,২০১৮)

প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই পর্ব টা দিতে একটু দেরি হয়ে গেল, কারণ আমি একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম অফিসের কাজে।
প্যারিস। স্বপ্নশহর। An evening in Paris সিনেমা, অনেক শোনা কথা, অনেক উপন্যাস পড়ে প্যারিস সম্বন্ধে কেমন যেন একটা আলাদা রকম মনের মধ্যে ধারণা ছিল। পৃথিবীর ফ্যাশন শুরু হয় প্যারিসে। প্রমাণ ও পেয়েছি। 
তাই সকালের সব রুটিন কাজ ও সেই আমার প্রিয় বন্ধু প্লাসটিকের গ্লাসের সাথে সখ্যতার যুগলবন্দি শেষ করে ঠিক সময়ে ব্রেকফাস্ট হলে উপস্থিত আমরা কাঁধে রুকস্যাক নিয়ে। সারাদিনের প্ল্যান।
জমিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম সেই আমাদের অভিজ্ঞতা ও মিঃ ইরানি (ট্যুর ম্যানেজার) এর উপদেশ মতো। কারণ দুপুরে তো সেই অপরিচিত সুন্দর সুন্দর কমপ্লিকেটেড নামধারী ও সুন্দর সুন্দর দর্শনধারী খাবার খেতে হবে। যাতে একদিকে জিভ বিদ্রোহ করে ,পেট ভিসা দিতে চায়না ভেতরে ঢুকবার আর আরেকদিকে আমার তাপমাত্রা এক ঝটকায় নেমে যায়। ফলশ্রুতি গিন্নির স্যালাড আর ফলভক্ষন। তবে ওখানের স্যালাড সব সময় তাজা , ফল গুলোও সবসময় তাজা। (তবে স্বাদে আমাদের দেশের ফল ভালো) । আর হবে নাই বা কেন, আমাদের টাকায় যা দাম দিলাম তাতে দেশে আমাদের 4/5 স্টার হোটেলে ব্যুফে লাঞ্চ হয়ে যায়। যতই হোক আমার দেশ গরিব, কিন্তু খাওয়ার ব্যাপারে ও প্রকার বৈচিত্র্যে আমরা ওদের থেকে কয়েকশ যোজন এগিয়ে আছি। যাকগে এসব, এবার ঘুরতে বেরোনো যাক।
আজকের ইটিনিরারি তে আছে বাইরে থেকে দেখতে হবে কিছু বিশেষ বিশেষ দ্রষ্টব্য জায়গা যার মধ্যে আছে Arc the Triomphe, Concorde Square, Opera Garnier ইত্যাদি। তারপরে আছে পৃথিবী বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার, প্যারিসের আইডেন্টিফিকেশন মার্ক। আসলে জায়গা গুলো সম্বন্ধে যতটুকু জেনেছি ইরানিজির কাছ থেকে সেগুলো লিখছি। আরও জানতে হলে আমার বিনম্র নিবেদন গুগল দাদাকে বা উইকি দিদিকে একটু বিরক্ত করবেন, গ্যারান্টি , হতাশ হবেন না। সেটা আমিও করতে পারতাম কিন্তু সময়ভাবে করে উঠতে পারছিনা। নতুবা আরও দেরি হয়ে যাবে এই লেখাটা দিতে। ইতিমধ্যেই কয়েকজনের কাছ থেকে তাগাদা পেয়ে গেছি। ক্ষমা চাইছি।
আবার সেই প্লেনের মতো বাসে বসলাম। প্যারিস দেখতে দেখতে চলেছি। মনের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ইতিহাস বইটার অনেক কথা আনাগোনা করছে। আনমনা হয়ে কিছু ছবিও তুলছি। মনে আমার ভেসে আসছে বইয়ে পড়া কিছু টুকরো টুকরো ঘটনার কথা। গর্বে উদ্ধত জার্মান সেনা ফ্রান্স কে আক্রমণ করেছিল 1940 এর মে মাসের প্রথমেই। প্যারিস অধিকার করেছিল 14 ই জুন 1940 আর তার আগেই প্যারিস থেকে পালিয়ে গিয়েছিল 10 ই জুন, ফ্রান্সের সরকার। এখানে একটা মজার জিনিস আছে , জার্মান রা যুদ্ধে পারদর্শী , এ তাদের অতি বড় শত্রুও স্বীকার করবে কিন্তু অধিকৃত প্যারিসে শাসন করার জন্য যদি জার্মানরা বন্দুক নামিয়ে কলম ধরে তাহলে যুদ্ধ করবে কে? তাই তারা ফ্রেঞ্চ অফিসিয়াল দেরকেই কাজে লাগিয়ে প্যারিস শাসন করেছিল। বিজেতা এবং বিজিত। একই দৃশ্য আমরা দেখেছি নিজের দেশেও। মুষ্টিমেয় ইংরেজরা আমাদের দেশের লোক দিয়েই আমাদের শাসন করেছে নয় নয় করেও 200 বছর।আমাদের দেশি সিপাহি ও পুলিশ অফিসার রা আমাদের উপরে মানে স্বদেশীয় মা বোন ভাইদের উপরে।  অত্যাচারে ওদের সাদা চামড়ার প্রভুদেরও হারিয়ে দিয়েছে ওরা। ইতিহাস সাক্ষী। নতুবা ক্ষমতা ছিল কি ওই কয়জন ইংরেজের আমাদের শাসন করার! বিপ্লবীদের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম শুধু দেশি পুলিশ সিপাহি আর দারোগরাই যদি বন্দুক উঁচিয়ে ধরতো ওদের দিকে তাহলে বিনয় বাদল দীনেশ বা ক্ষুদিরাম কে শহীদ হতে হতোনা। আরো অগনিত সোনার টুকরো ছেলে এবং মেয়েদের প্রাণ দিতে হোতনা। একটা জাতিই দায়ী নিজের পতনের জন্য। যাকগে, এসব আলোচনা করার জন্য অনেক বিদগ্ধ মানুষেরা আছেন, আমার বামন হয়ে চাঁদ ধরার ইচ্ছে নেই আর ক্ষমতাও নেই। তাই আমি বরং চারণকবির মতো গদ্যে ঘোরার কাহিনী শোনাই।

বাস গিয়ে পৌঁছুল  Arc de Triomphe de l'Étoile তে। বিজয় তোরণ। দেখি বিশাল এক তোরণ ইন্ডিয়া গেট থেকে অবশ্য ছোট। মাঝখানে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা একটু ঝুঁকে পতপত করে উড়ছে। আর অনেকগুলো রাস্তা, মানে 12 টা,  এসে মিশেছে সেখানে কিন্তু কোনো গাড়ির হর্ন বাজছে না। সবাই যেন একে অপরকে আগে যেতে দিতেই বেশি ইচ্ছুক।  এই জায়গাটাকে আমি অনেক বাংলা বইতে পড়েছি সাঁজেলিজে নামে কারণ হয়তো এর ফ্রেঞ্চ নাম Champs- Elysees বলে যেটা বোদ্ধারা সাঁজেলিজে বলে লিখেছেন, তাই আমিও সেটাই বলছি। আমার আবার মনটা উন্মনা হয়ে গেল, মনে পড়ে গেলো সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা। যখন প্যারি র গভর্নমেন্ট কে ভাগিয়ে দিয়ে জার্মান সেনারা গর্ব উদ্ধত ভাবে সেখানে মার্চ করেছিল। সেটা ফরাসিদের ভীষণ ভাবে দুঃখ দিয়েছিল। 1806 সালে সম্রাট নেপোলিয়ন এটা শুরু করেছিলেন আর এর শেষ হয়েছিল 1836 শে, আর এটা একটা মেমোরিয়াল সেইসব মানুষ ও সৈন্য যারা নেপোলিয়নের সময় যুদ্ধে ও ফরাসি বিপ্লবের সময় মারা যান, তাদের স্মৃতিতে তৈরি। এটা ফরাসিদের জাত্যাভিমানের প্রতীক।
ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছিলো। আমার খুব মিষ্টি লাগছিলো কিন্তু অনেক কে দেখলাম যারা আমার থেকে অনেক ছোট ব্যাগ থেকে জ্যাকেট বের করে পরতে। ছবি তোলা হলো বেশ কিছু বিভিন্ন ভঙ্গিমায় । তারপর চললাম  Concorde Square.

দূর থেকেই সোজা রাস্তার ওপারে নাগরদোলার থেকেও বড়, বিশাল একটা হুইল কে মৃদুমন্দ হাওয়ায় ঘুরতে দেখলাম অলস ভাবে। সাথে বসার ও ব্যবস্থা আছে। আসলে কাছে গিয়ে বুঝলাম যে আদতে সেটা একটা নাগরদোলাই। বাস থেকে নামতেই দেখি চারিধারে বিশাল ফাঁকা চত্বর, চারপাশে অনেক পুরোনোদিনের অট্টালিকা। একপাশে মিডল ইস্টের কোন এক দেশের রাজার উপহার দেয়া একটা স্মৃতিচিহ্ন। একটা স্তম্ভের উপরে প্রতিষ্ঠিত। খুব সুন্দর ভাবে ওটাকে বসিয়ে মেন্টেন করে রেখেছে ফরাসিরা। চারিদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এক টুকরো কাগজও পড়ে নেই। হই হই করে অনেক ছবি তোলা হলো। কিন্তু তার আগে আবার সেই ইউরো খরচ করে লাইন দিয়ে ওয়াশরুম যাওয়া। এই স্কোয়ারের একপাশে ওদের ন্যাশনাল এসেম্বলি হল দেখলাম। লোকাল ফরাসি গাইড মজা করে বললেন যে ওখানে 90% লোক ই ফালতু। আমরা সবাই খুব হাসাহাসি করলেও আমার নিজেদের পার্লামেন্টের লোক গুলোর কথা মনে পড়ে গেল। বেশির ভাগই বেগুন আর চোর গুন্ডা বদমাশ ও খুনি। সব দেশেই এরকম হয় নাকি, জানিনা, হয়তো হয়।

দেখলাম নেপোলিয়নের সমাধি। খুবই সুন্দর। ফরাসিদের রুচি ও পছন্দের ছাপ পুরো সমাধি বিল্ডিং এ ফুটে আছে। আমরা সবাই জানি যে নেপোলিয়নের নির্বাসিত অবস্থায় সেন্ট হেলেনা দ্বীপে মৃত্যু হয়েছিল, যেটা ছিল ব্রিটিশদের অধিকারে। দীর্ঘ 7 বছর ধরে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে ফরাসিরা সেন্ট হেলেনা দ্বীপ থেকে নেপোলিয়নের দেহাবশেষ এইখানে এনে নিজের দেশে সমাধিস্থ করেছে। লক্ষ্য করুন ব্রিটিশরা ফ্রান্স বন্ধু দেশ হওয়া সত্ত্বেও 7 বছর নিয়েছে ফেরত দিতে। কি আশ্চর্য !
চারিদিকের বিশাল ব্যাপ্তির (84000 বর্গ মিটার) মাঝে আবার আমার মন পিছনপানে চলে গেল। এই সেই স্কোয়ার, যেখানে ফরাসি বিপ্লবের সময়ে গিলোটিনে আঁতয়ানেত (বানানটা ঠিক হলোনা, চেষ্টা করলাম হচ্ছে না) আর ষোড়শ লুই কে বিপ্লবীরা চড়িয়ে হত্যা করেছিল। মনটা ভারী হয়ে গেল। এই জায়গাটা আমরা রাত্রেও দেখলাম পরে, যেন এক মায়াপুরী, কল্পকথার রাজ্য। 
লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে, মেঘমন্দ্র স্বরে ইরানিজির ঘোষণা। সবাই বসে ফিরে মার্কেটে গিয়ে নিজেদের পছন্দমতো বিদেশি খাবার খেয়ে জিভ আর পেটের বিদ্রোহ সত্ত্বেও উদর পূর্তি করলাম। পরের গন্তব্য আইফেল টাওয়ার, যা প্যারিসের পরিচয় চিহ্ন। একটা ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ভেল। 
সেখানে যাবার আগে আমরা আরো কিছু বিখ্যাত জায়গা দেখলাম। এখানে একটি কথা বলে নেই। আমাদের প্যারিস সম্বন্ধে মনে যে ধারণা টা আছে সেটা মনে হয় বদলাবার সময় এসেছে। শালীনতা, ভদ্রতায় ফরাসিরা সত্যিই অনুকরণীয়। যেহেতু ইরানিজির সাবধানবানী কানে ভাসছিল তাই বেশি মেলামেশা করিনি, কিন্তু যেটুকু করেছি দুজনে তাতেই বুঝলাম এরা সত্যিই একটু আলাদা রকমের। 
আমরা দেখলাম সর্বন ইউনিভার্সিটি।
কলেজের দিনের কথা মনে পড়ছিল। স্যার দের কাছে শুনেছি ও বইয়ে পড়েছি। এই ইউনিভার্সিটির কত কথা শুনেছি। কত সব বিখ্যাত মানুষেরা এখানে গবেষণা করেছেন , পড়িয়েছেন। দেখলাম সেই বিল্ডিং যার দরজার উপরে ফ্রেঞ্চে লেখা আছে ফরাসি বিপ্লবের স্লোগান। ইংরেজিতে Liberty, Equality , Fraternity.  মৈত্রীর গান সাম্যের কথা। দেখলাম ওদের ন্যাশনাল মিউজিক একাডেমি, মিউজিয়াম।
আইফেল টাওয়ার এর মজা হচ্ছে  যে প্যারিসের বেশির ভাগ জায়গা থেকেই এটা দেখা যায়। ধীরে ধীরে সিগনালের নিয়ম মেনে বাস গিয়ে পৌঁছুল আইফেল টাওয়ারের পার্কিং স্পেসে। বাপরে ! কত বাস এসেছে! পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে মানুষেরা  হাজির হয়েছে। বাস থেকে নেমে টিকিট কাউন্টার অবধি যেতেই জায়গাটা মেলার চেহারা নিল। কি বিশাল লাইন আর কি  ভিড়! এইখানে ওয়াশরুম ফ্রি ছিল কিন্তু সেই আবার লম্বা লাইন। যাকগে ওখান থেকে বেরিয়ে ইরানিজির হাতে ধরা ঝান্ডা খুঁজে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়া গেল। প্রায় 50 মিনিট পরে হাতে টিকিট পেলাম। দুই প্রস্থ সিকিউরিটি চেকিং এ পাস করে লিফটে চড়বার অনুমতি পেলাম।
লিফট আসুক একটু আইফেল টাওয়ারের গল্প করে নেই এই ফাঁকে। 
এটার নামকরণ হয়েছে গুস্তাভ আইফেল এর নামে। যাঁর কোম্পানি এটা তৈরি করেছিল আজ থেকে প্রায় 129 বছর আগে। এরা এত সুন্দর রক্ষণাবেক্ষণ করে যে এখনও মজবুত । বড় বড় লিফট কার হড়হড় করে হাই গ্রেডিএন্ট প্রায় 80 বা 85 ডিগ্রি তে উঠছে নামছে। তবে সিঁড়িও আছে আমরা চড়েছিলাম লিফটে নেমেছিলাম সিঁড়ি দিয়ে। অসাধায়ণ অভিজ্ঞতা। 
মাথার টিপ অবধি 324 মিটার উঁচু। উপর অবধি যাবার লিফট আছে। লাইন ও লম্বা আর টিকিটের দাম ভীষণ বেশি। তাই আমাদের পূর্বনির্ধারিত প্ল্যান অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপ অবধি যাওয়া হয়েছিল। তাতেই প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লেগে গেলো।  উপরে গিয়ে চারিদিকের দৃশ্য দেখে মুখে কথা নেই আমাদের। পুরো প্যারিস দেখা যাচ্ছে 360 ডিগ্রি তে। দ্বিতীয় ধাপেই এই , তাহলে চূড়ায় চড়লে কি হবে! উপরে শপিং মলের মতো অনেক দোকান পাট আছে। খাবারের দোকান, স্মারক কিনবার দোকান ইত্যাদি। অনেক ছবি তোলা হলো। আবার লাইন দিয়ে বেশ কিছু ইউরো খরচ করে খেলাম ।
আইফেল টাওয়ার এ খাবার এর আনন্দ নেবার জন্য। আর একটা অভিজ্ঞতাও বটে। অনেক নীচে পিঁপড়ের মতো মানুষ গাড়ি দেখা যাচ্ছে আর আমরা অত উপরে বসে খাচ্ছি। বেশ মজাই লাগছিলো।  সমতল থেকে দাম বেশ বেশি। নামবার লিফটের সামনে আবার লাইন। তাই আমরা দুজন দেশে রেগুলার মর্নিং ওয়াক এই অভ্যাস এর কথা মনে রেখে আরেকটা অভিজ্ঞতার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামলাম। নামছি তো নামছিই। যখন নিচের পিঁপড়ের সাইজের লোকগুলো আমার সাইজের হলো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিছু মেমেন্টোও কেনা হলো। তারপর ইরানিজির কথা ও সময় অনুযায়ী বাসে গিয়ে বসলাম। তারপর আছে সিন নদীতে ক্রুজের গল্প। সেটা আজ নয় , বড় হয়ে যাচ্ছে।
এবার মনে হয় থামতে হবে। নতুবা বড় হয়ে যাচ্ছে। কিছু ছবিও দিচ্ছি।



আবার আসছি  ক্রুজে ঘুরবার জন্য, তৈরি থাকুন।

সমস্ত ছবি লেখকের নিজের তোলা














Sunday, June 10, 2018

যখন তখন-কবিতা-দেবশ্রী চক্রবর্তী

মেঘা

দেবশ্রী চক্রবর্তী
সংখ্যা-১১, (১১ই জুন,২০১৮)


একরাশ বুনো মেঘ
হাত ধরে টেনে বলে-
চলে আয় দুজনা তে উড়ব,
নীলাকাশ-সবুজের গালিচাতে
দুজনে দুজনাতে
মিলেমিশে এক হয়ে খেলব।
যতদূর নেশা হয়
যতদূর দৃষ্টি
ঝরে পড়ি চল হয়ে বৃষ্টি
আমি তুই দুজনায়,
চোখে চোখ হাতে হাত
চল করি কিছু অনাসৃষ্টি।
দুজনেই উন্মাদ-
অঝোরে ঝরে যাই
সবুজ আজ হোক বন্য
চোখে চোখ ধরে রাখ
শেষ বার বলে যা
আমি শুধু, শুধু তোর জন্য

কবির নিজের কণ্ঠে কবিতাটি শুনতে ক্লিক করুন এখানে


যখন তখন-ভ্রমণ-স্বরূপ কৃষ্ণ চক্রবর্তী (৪)

ইউরোপ ভ্রমণ -পর্ব (৪)

স্বরূপ কৃষ্ণ চক্রবর্তী


সংখ্যা -১০, (১০ই জুন,২০১৮)



ভোরে উঠে ঘরের মধ্যে চা পর্ব সারার পরে প্লাস্টিকের গ্লাসের সাথে মিতালি করার জন্য গিয়ে ঢুকলাম বাথরুমে। এক্কেবারে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে বেরুলাম অর্ধাঙ্গিনী র জন্য খালি করে দিয়ে। (যাঁরা প্লাস্টিক গ্লাসের ব্যাপারটা জানতে চান আগের খণ্ড গুলো পড়ুন।) অতঃপর ব্রেকফাস্ট। সাহেবদের দেশে নিয়মানুবর্তিতা দেখে শেখার মত। যা সময় বলেছে ব্রেকফাস্টের একদম তার 5 মিনিট আগেই সব তৈরি। আমাদের অনেকসময় আশ্চর্য লাগছিলো যে এরা যন্ত্রের মতো কাজ করে ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে অথচ মুখের হাসিটুকু অমলিন। 
আমাদের গ্রূপে ৪ জোড়া কপোত কপোতী ছিল যারা ব্রেকফাস্ট লঞ্চ ডিনার মার্কেটিং বাসে চড়া সবকিছুতেই আমাদের কে ফার্স্ট করে দিচ্ছিলো। ফলশ্রুতি, ইরানিজির হাসিমুখে ইংরেজি আর হিন্দিতে রসিকতা, আর আমাদের হাসিমুখে রসিকতা। কিন্তু ওরা পুরো ব্যাপারটাই খুব স্পোর্টিংলি নিচ্ছিল আর বলছিল আমাদের বয়স তো আপনাদেরও ছিল একদিন। সে যাকগে ৭ঃ৪৫ এর সময় বাস ছাড়ার কথা, কিন্তু বাস চালাবে সাহেব ড্রাইভার, কিন্তু চড়বে তো ইন্ডিয়ান রা, তাই যথারীতি ৮ঃ১৫ হয়ে গেল। থুড়ি ওখানে ড্রাইভার বলেনা , বলে ক্যাপ্টেন। আর বলবে নাই বা কেন? বাস টাতো মিনি প্লেন , শুধু আকাশে ওড়ে না। হুঁ হুঁ বাবা পৌনে দু কোটি টাকার বাস তা ক্যাপ্টেন চালাবে নাতো কি গোবিন্দ ড্রাইভার চালাবে। 
আমস্টারডাম কে বাই বাই করে আমরা আবার রওয়ানা দিলাম ব্রাসেলস এর পথে। ব্রাসেলস বেলজিয়ামের রাজধানী, ৩০৫২৮ স্কোয়ার কিমি আয়তনের দেশে জনসংখ্যা মাত্র ১.২ কোটি। যা শুনে আমাদের মেট্রো শহরের অনেকেই হেসে ফেলবে। আমস্টারডাম থেকে দূরত্ব ২৬০ কিমি। সাড়ে তিনঘন্টা সময় নিলো মাঝখানে ৩০ মিনিট এর ব্রেক নিয়ে। কারণ ওখানকার নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক আড়াই ঘণ্টা পর ক্যাপ্টেনের ব্রেক নিতে হবে। বাস টা জি,পি,এস নিয়ন্ত্রিত। তাই সুদূর কোনো দেশের কন্ট্রোল রুমে রেকর্ড হচ্ছে আমাদের গতিবিধি। শিডিউল্ড টাইমের আগে বা পরে বাস স্টার্ট হবেনা। কন্ট্রোল রুমে ফোনে করে রিলিজ করতে হত সিস্টেম।আমাদের বেশ কয়েকবারই এটা ফেস করতে হয়েছে, কারন ? সেই চার জোড়া কপোত কপোতী ।
কিন্তু এইটুকু দেশ হলেও যেমন রাস্তা তোমনি মনোমুগ্ধকর কান্ট্রি সাইড। যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। চাষ করেছে বিভিন্ন ফসলের। আমি গম , সর্ষে আর কিছু শাক সবজি চিনতে পারলাম বাকি গুলো বুঝতে পারলাম না বাস থেকে বসে। মাঝে মাঝে অলস গতিতে ঘুরে চলেছে আধুনিক উইন্ডমিল এর ব্লেড। এতটুকু বোর হবার উপায় নেই। মাঝখানে ব্রেক নেবার সময় আবার সেই ওয়াশরুম এর কান্ড। মানে দুইজনের জন্য ১০০ টাকার উপর খরচ করে হালকা হওয়া। কফি খেলাম, ব্ল্যাক কফি । অদ্ভুত রকমের ভালো। ওরা মনে হয় খাবারে ভেজাল দিতে শেখেই নি। কয়েকটা পাবলিক কে আমরা এক্সপোর্ট করে দিতে পারি ওদেরকে কে ভেজালের ব্যাপারে শিক্ষিত করে তুলতে। 
অবশেষে পৌঁছুলাম ব্রাসেলস এ। অনেক পুরোনো শহর ইউরোপের। আধুনিক বাড়ি গুলোর মধ্যেও কেমন পুরোনো ঐতিহ্যের ছাপ। একটা স্কোয়ারের মধ্যে নিয়ে গেল ইরানিজি মানে ট্যুর ম্যানেজার। চারিদিকে ৩০০-৪০০ বছরের পুরনো অট্টালিকা সব। বিশাল বিশাল ঘোড়ায় টানা গাড়ি দেখলাম। সবাই অলস ভাবে ভিড়ের মধ্যে ঘোড়া গাড়ি করে চলেছে পরিবারের সবাইকে নিয়ে। যে কোচোয়ান তাকে দিব্বি ওয়েস্টার্ন ফিল্মে হিরো বানিয়ে দেওয়া যায়।
ব্রাসেলস এর চকোলেট পৃথিবী বিখ্যাত। আমি চকোলেট প্রেমী না হলেও হরিদ্বার এ গিয়ে গঙ্গাতে স্নান করার মতো ব্রাসেলসে গিয়ে চকোলেটের দোকানে ঢুকলাম। ওই বাপ,  কত্ত ধরণের চকোলেট। আর আমাদের বিগ বাজারের মতো অফার ও আছে। তবে অফার সহ দাম আমার Accountant মাথা হিসাব করে ফেললো টাকাতে। যে সংখ্যাটা এলো ব্লাড প্রেসার বাড়াবার জন্য প্রয়োজনাতিরিক্ত। গম্ভীরভাবে গিন্নিকে বললাম বাচ্চাদের জন্য কিছু চকোলেট নেওয়া যাক কিন্তু খবরদার টাকাতে হিসাব করবে না। ইউরোপে আছি ইউরো তে হিসাব হবে। নেওয়া হলো। তারপর দেখতে চললাম ম্যানিকিন পিস দেখতে। একটা বাচ্চা মানুষের স্ট্যাচু লাগাতার মূত্রত্যাগ করে চলেছে। দিনে বেশ কয়েকবার নাকি তার পোশাক বদল হয়। একটা গল্পও আছে ইরানিজি বললেন। আমি এখানে দিলাম না। অনেকে অনেক ছোট ছোট জিনিস কিনলেন স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে। আমরাও টুকটাক কিনলাম।
লাঞ্চ নিজেদের,  তাই জঠরাগ্নি নেভাতে পছন্দসই একটা দোকানে ঢুকে পড়লাম। ট্রে নিয়ে নিজের পছন্দমতো খাবার তুলে নিয়ে কাউন্টারে দাঁড়াতেই কর্মচারী টি দাম হিসেব করে নিলেন। খেয়ে নিয়ে কল টাইম অনুযায়ী আবার বাসে। এবার যাবো প্যারিস, স্বপ্নের প্যারিস। শিল্প সাহিত্যের শহর প্যারিস। একটা চাপা উত্তেজনা হচ্ছিল মিথ্যে বলবো না। ভাবছিলাম যেরকম বইয়ে পড়েছি সেরকমই দেখবো না আশাহত হবো। সাথে ইরানিজির সতর্কবাণী লাগাতার। যতই শিল্প সাহিত্যের শহর হোক, চোর গুন্ডা পকেটমার আর কেপমারে ভর্তি। তাই পাসপোর্ট আর টাকা পয়সা ভীষণ সাবধানে রাখতে হবে। এবারের দুরত্ব মাত্র ৪৩০ কিমি। ঘড়িতে ৬ঃ৩০ কিন্তু সূর্যদেব রং ও পাল্টান নি। জ্বলজ্বল  করছেন আকাশে। ইরানিজির সেই ঘোষনা বাসের মধ্যে অডিও সিস্টেমে জলদমন্দ্র স্বরে ডিনারের জন্য এখনও কানে ভাসছে। হ্যাঁ, আমরা রাস্তাতে চলতে চলতে সিনেমা দেখলাম 3 Idiots.
ডিনার আমাদের প্রত্যেকদিন ছিলো ইন্ডিয়ান রেঁস্তোরাতে। সারাদিনের ক্লান্তি , সামনে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা দেশি খাবার সাথে তন্দুরি রুটি আর বাটার দেওয়া নান। সবাই বেশ তৃপ্তি করে খেলাম। তারপর যথারীতি আবার হোটেলে।  আমরা নিজেরা পরের ফ্রি দিনে ভার্সাই প্যালেস আর ল্যুভর মিউজিয়াম দেখবো বলে অনলাইনে টিকেট কেটে নিলাম। তারপর সেই দেড় ফুটিয়া গদি আর বডি থ্রো। একটু একটু ফেসবুক, Whatsapp, বাড়িতে কথা বলা, আলো নেভানো আর শয়নে পদ্মনাভঞ্চ বলে ঘুম।



কিছু ছবি দিলাম। আবার দেখা হবে পরের অংশে। 




সমস্ত ছবি লেখকের নিজের তোলা

Sunday, June 3, 2018

যখন তখন-ভ্রমণ-স্বরূপ কৃষ্ণ চক্রবর্তী (৩)

ইউরোপ ভ্রমণ -পর্ব ৩


স্বরূপ কৃষ্ণ চক্রবর্তী

সংখ্যা -৯, (৩রা জুন,২০১৮)





রাত্রে ঘুমোতে যাবার আগে তার ম্যানেজারের কল টাইম ব্রেকফাস্টের জন্য সকাল সাড়ে সাত টা, মাথায় ঢুকিয়ে ঘুমোতে গেছি আর ক্লান্ত থাকার জন্য বিন্দাস ঘুমিয়েছি। কিন্তু সকালে তো উঠেই আবার সেই প্লাস্টিক গ্লাসের খোঁজ শুরু করার আগেই বাঙালি পেটে একটু গরম তরল না পড়লে যে ঘটনা ঘটবে না তা বাঙালি মাত্রই জানে। অতএব ঘরের মধ্যেই চায়ের বন্দোবস্ত। সাথে ছিল টি ব্যাগ আর হোটেলেও দিয়েছিল। অবশ্য ইউরোপ এ সব হোটেল এ কিন্তু কেটলি আর চা রুমে দেয়না। আমরা সেটাতেও তৈরি ছিলাম। সাথে যাত্রা র দেয়া উপহার ইলেক্ট্রিক কেটলিও ছিল। একটা কথা। সাথে থাকলেও ইউরোপিয়ান দেশের প্লাগের জন্য এটাচমেন্ট না থাকলে সব ফক্কা।  জানাবার জন্য বলি যে যদি কেটলি না থাকে বা হোটেল থেকে না দেয় ঘাবড়াবার কিস্সুটি নেই। পুরো ইউরোপে সবখানে জল এতটাই ভালো যে সবাই ডিরেক্ট ট্যাপ থেকেই জল খায়। তাই হট ওয়াটার ট্যাপ থেকে নিয়ে টি ব্যাগ দিলেই চা তৈরি। 
চা খেয়েই সেই প্লাস্টিক গ্লাস বগলে নিয়ে ঢুকে পড়লাম আর একদম গরম জলে স্নান করে বাইরে বের হলাম একের পর এক। কারণ সাড়ে সাত টা। ব্রেকফাস্ট। সেজে গুজে সারাদিনের জন্য পিঠের রুকস্যাক ঝুলিয়ে খাবার হলে গিয়ে শুরু করলাম ডান হাতের কাজ। জম্পেশ করে ব্রেকফাস্ট করলাম। আরেকটু হলেই পা পিছলে যেত। আমি সসেজ খুব ভালোবাসি। ঢাকনা খুলেই চেহারা দেখে সন্দেহ হওয়াতে গোরি ডাচ ওয়েট্রেস কে জিজ্ঞেস করতেই বললো যে সেটা চিকেন সসেজ নয়। বিফ সসেজ। সেই তখন থেকে আমি ১০ দিন ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চের সময় সসেজ খাইনি।  
ব্রেকফাস্ট টা জম্পেশ করে খাবার কারণ হচ্ছে যে লাঞ্চের খাবার গুলো ঠিক বাঙালি মুখে রোচে না। আর জায়গার ও ঠিক থাকেনা। বেশির ভাগ সময়েই অটো গ্রিল এ খেতে হতো। আর ডিনার সেই দিন মানে সন্ধে বেলা সাতটার সময় খেতে হবে ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁয়। পুরো দিনের আলোয় আমরা ডিনার করতাম। রাত তো হবে পৌনে দশটায়।

গিয়ে বসলাম আমাদের প্লেনের মতো আমাদের বাসে। আজকে যাবো keukonhof বলে এক জায়গায়। টিউলিপ ফুলের বাগানে। তারপর আমস্টারডাম শহর এর দর্শনীয় জায়গা যেরকম Dam square, Rembrandt wooden shoe and cheese factory . তারপর শহরের মাঝখান দিয়ে ক্যানাল এর ভেতরে ক্রুজে সফর। অনেক পুরোনো শহর। সমুদ্রের সাথেও যুক্ত। ভীষণ পরিষ্কার। একটুকরো নোংরা নেই কোথাও। অসংখ্য ক্যানালে ভর্তি। সব একে অপরের সাথে যুক্ত। 
গিয়ে পৌঁছুলাম keukonhof  এ। কত লোকরে বাবা! পৃথিবীর কত্ত দেশ থেকে এসেছে সব। মেলার মতো ভিড়। মনে হচ্ছে এক ইডেন ভর্তি লোক সব হাজির হয়েছে। তবে দেখার মতোই টিউলিপ বাগান। অসাধারণ অভিজ্ঞতা। 
আমাদের ইরানি জি মানে ট্যুর ম্যানেজার সবাইকে নিয়ে সুসংবদ্ধ ভাবে টিকিট কেটে ঢুকিয়ে দিয়ে বাসে ফেরার সময় ঘোষণা করে দিলেন। আর আমরা ছাড়া গরুর মতো ঢুকে পড়লাম ছবি তুলতে তুলতে। ছবি নীচে দিচ্ছি। ভেতরে ঢুকে যেদিকে তাকাই শুধু টিউলিপ আর টিউলিপ। কত ধরনের কত রঙের। কি বাহার আর ওদের ফুলের যত্ন কি! যেন ফুলগুলো মানুষের বাচ্চা। 
দেখলাম ইউরোপিয়ানরা বাঁচতে জানে। আমরা যেখানে রিটায়ার করলেই বাতিলের দলে চলে যাই বাড়ির লোকেদের বা পাড়া পড়শীর চোখে ওখানে তা নয়। আমি নিজেই প্রায় ১০০ এর বেশি হুইলচেয়ারে বয়স্কদের দেখেছি যেখানে স্ত্রী স্বামীকে বা স্বামী স্ত্রীকে হুইল চেয়ারে নিয়ে ঠেলে নিয়ে চলেছে ফুল দেখাতে মুখে হাসি নিয়ে। এমনকি বাগানের মধ্যে দেখলাম যে মেকানাইজড স্ট্রেচারে করে একজন বয়ষ্কাকে চারজন বয়স্ক মানুষ ঠেলে নিয়ে চলেছেন চাকা লাগানো স্ট্রেচারে ঠেলে ঠেলে। আর উনি শুয়ে শুয়েই দেখছেন। সাথে ওনার সাথীরা বর্ণনাও করে চলেছেন।
ফুল দেখা ও ছবি তোলা শেষ হলো একসময়। মনে অসাধারণ খুশি নিয়ে বাসে গিয়ে নির্ধারিত সময়ে বসলাম। 
"আহা কি দেখিলাম, জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না" এটা লেখার ইচ্ছা সংবরন করতে পারলাম না।
তারপর সেই সাবেক কালের উইন্ডমিল দেখতে চললাম। কি বিশাল আর কি অদ্ভুত বেসিক মেকানিজম। আমার দেখে তাক লেগে গেলো। ছবি তোলা হলো, নীচে দিলাম। 
এবার শুরু হলো সেই চিজ ফ্যাক্টরি যাওয়া। রাস্তার দুধারে কত নাম জানা গাছ, বেশিরভাগই ফুলে ভর্তি। রাস্তা এত মসৃন যে বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাসে বসে কেউ সূঁচে সুতো পড়াতে চাইলেও পারবে। কাঠের জুতো তৈরির কারখানা দেখলাম। কিভাবে তৈরি হয় সেটাও দেখলাম। গোটা একেক খণ্ড কাঠ থেকে মেশিন দিয়ে পা ঢোকানো জুতো তৈরি হচ্ছে। সুন্দর সব রং করা। দেখলে অবাক হতে হয়। অবশ্য ওগুলোর বাস্তবিক ব্যবহার কতোটা আমি জানিনা। হয়তো স্মারক হিসাবেই থাকে আজকাল। সে যাকগে। 


তারপর হাতে বানাবার চিজ ফ্যাক্টরি। দারুন ভাবে মেশিন দিয়ে হাতে করে চিজ বানিয়েছে। মেশিন দিয়ে হাতে করে মানে কিন্তু সোনার পাথরবাটি নয় । সত্যি বেশ মজার। মেশিনটা একদম সহজ মানে আগে যেভাবে ষোড়শ সপ্তদশ শতাব্দীতে বানানো হয় সেইভাবে মেশিনটা তৈরি করা। চিজ গুলো হাতে নিয়ে দেখলাম ইঁটের মতো শক্ত। বিনা ফ্রিজে বাইরে রাখা যায় মাসের পর মাস। শীতের দেশ তো, ট্রপিক্যাল দেশ হলে মজাটা টের পেতো। যে গরুর দুধ থেকে তৈরি হয় সেগুলোও দেখলাম। কি সব হৃষ্টপুষ্ট গরু একেকটা।
যথারীতি সব কিছু দেখবার পরে কিছু চিজ কেনা হলো আর সাথে কিছু স্মৃতি চিহ্ন। দাম দিলাম সেই ফরেক্স কার্ডে আর যথারীতি ওটার তাপমাত্রা কমতে থাকলো।
একটা কথা বলে দেই এখানে, যারা ধূমপায়ী তারা দেশ থেকেই সিগারেট কিনে নিয়ে যাবেন সীমার মধ্যে। কারণ ওখানে সিগারেটের দাম ইন্ডিয়ান টাকাতে অনেক বেশি। তবে বিদেশি সিগারেটের ইচ্ছে থাকলে ওখানেও কিনতে পারেন। আমাদের মতো অলিতে গলিতে কিন্তু দোকান পাবেন না। হয় টোব্যাকো শপ নতুবা সুপারমার্কেট। 
আরেকটা কথা, অপ্রাসঙ্গিক কিনা জানিনা তবু সবার জন্য বলা কর্তব্য মনে করছি।এখানে পাবলিক ইউরিন্যাল খুব কম । যা আছে সব বড় দোকানে বা রেস্তোরাঁয়। কিন্তু যদি আপনি পাবলিক ইউরিন্যাল এ যান ৫০/৮০ ইউরোসেন্ট খরচ করতে হবে। যার ইন্ডিয়ান সমসাময়িক মূল্য প্রায় ৪৫ থেকে ৬৮ টাকার মধ্যে। এটা জন প্রতি খরচা। তবে ইউরিন্যাল বা টয়লেট গুলো অসাধারণ পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যসম্মত। সেজন্যই মনে হয় ইরানিজি আমাদের বলেছিলেন জল সিপ করতে ঢকঢক করে খেতে মানা করেছিলেন। তাও কয়েকবার দুজনে আমরা ১০০ টাকার উপরে খরচ করে ওয়াশরুমে গেছি। আরেকটা মজার ব্যাপার অটো-গ্রিল এর খাবার ওরকম হওয়া সত্ত্বেও আমরা যখন নামতাম , বাস ভর্তি লোক দৌড়িয়ে যেত ওয়াশ রুমের দিকে, কারণ ওটা ফ্রী। যাক এবার আলাদা কথা। মূল কাহিনীতে ফিরি।
তারপর চললাম ক্যানাল ক্রুজের জন্য। এত সুন্দর প্রফেশনাল ভাবে সব কিছু ম্যানেজড যে আমার ভারতীয় সত্তা হাঁকডাক না দেখে হাঁফিয়ে উঠছিল। 
সত্যি, আমাদের এখনো ওদের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। জানি, আমাদের মূল সমস্যা জনসংখ্যা। তবুও রীতিনীতি আর নিয়মানুবর্তিতা বা অভ্যেস একটা জাতিকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে সেটা আমার এই ভ্রমণ চোখ খুলে দিয়েছে। যেদিকে দেখি সবুজ আর সবুজ। পরিষ্কার সবকিছু। রাস্তার পাশেও ধুলো নেই। সাইকেল আরোহীদের আলাদা লেন। আর সিগনাল যেন লক্ষনরেখা। সাইকেল আরোহিরাও মানে। জেব্রা ক্রসিং আর সিগনাল ছাড়া কেউ রাস্তা ক্রস করে না। আর চাষের জমি, আদিগন্ত হরিয়ালি। সব মেকানাইজড। পুরো জমিতে কোনো আল( জমির ভাগ চিহ্ন) নেই। কয়েকশ একরের পরে আবার আলাদা জমি। সব তারের জাল দিয়ে ঘেরা। যদিও কোনো ছাড়া পশু আমি দেখতে পাইনি । যেরকম দেখতে পাইনি রাস্তার কুকুর। কাক দেখবার জন্য প্রাণ আনচান করছিল। শেষে মাউন্ট টিটলিস এ গিয়ে দেখে আমার কি আনন্দ। গিন্নি বলেই ফেললেন যে জীবনে প্রথম কাক দেখলাম মনে হচ্ছে। সে আলাদা গল্প। 
সুন্দর একটা ক্রুজে বসলাম বাসভর্তি সবাই। ক্যানাল দিয়ে চলেছি আর দেখছি সাথে ইরানিজি ছিলেন হিন্দি ও ইংরেজিতে বলে যাচ্ছিলেন কোনটা কি কবেকার ইত্যাদি ইত্যাদি। ষোড়শ, সপ্তদশ, অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রাচীন বাড়ি গুলো দেখে অভিভূত হয়ে যাচ্ছিলাম। কি সুন্দর কত যত্নে ওগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। আজও ঝকঝকে তকতকে। এখনো সেগুলোতে মানুষ বসবাস করে। দেখলে মনে হয় কিছুদিন আগেই রং করা হয়েছে। অনেক ছবি তুললাম। কিছু ভিডিও করলাম, কিন্তু সব দেখতে পারছি না এখানে টেকনিক্যাল কারণে।
আরেকটা জিনিস চোখে পড়লো। ইউরোপে যেখানে যেখানে গেছি সব জায়গায় রাইট হ্যান্ড ড্রাইভ গাড়ির। আর সবাই এত সিগনাল মানে যে রাস্তা খালি থাকলেও কেউ ক্রস করবে না। হর্নের শব্দ শুনতেই পাইনি। সন্দেহ হচ্ছিল যে গাড়িতে হর্ন আছে কিনা। সবাই লেন ড্রাইভিং করে। আর ভুল করেও যদি আমাদের মতো বা আলাদা কোনো নন ইউরোপিয়ান সিগনাল না খেয়াল করে রাস্তা ক্রস করে গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে গিয়ে হাত দিয়ে হাসিমুখে ইশারা করে পেরিয়ে যেতে। পথচারীর অবিমৃষ্যকারীতে রেগে যায়না। 

অবশ্য আমরা সেরকম করিনি কারণ yatra খুব ভালো ব্রিফ পাঠিয়েছিল , গুগল দাদা ও ইরানিজি ও খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছিল। সব দেখা শেষ হলে ঘড়িতে সাত তা বাজবার উপক্রম হতে সূর্যের তোয়াক্কা না করে ডিনারের জন্য চললাম ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁয়। সত্যি বলছি সূর্যের এতবড় হতছেদদা আমি দেখিনি, আকাশে আমাদের ২/৩ টের মতো সূর্য আকাশে জ্বলজ্বল করছে আর আমরা ডিনার করছি। কি আজব তাই না?
অবশেষে ডিনারান্তে সবাই হোটেল, দেড়ফুটিয়া গদি আর শয়নে পদ্মনাভঞ্চ করা আগামীকালের ভোরের জন্য।
আজ এই পর্যন্তই থাক। আবার আসছি দিন তিনেক পরে গ্রুপের নিয়ম মেনে।


 ভালোলাগা বা মন্দলাগা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। তাহলে আগামীতে সংকোচন বা বিবর্ধনের কথা ভেবে দেখবো।
 ক্রমশঃ

সমস্ত ছবি লেখকের নিজের তোলা





পড়ুন আগের পর্ব                                                                                                  পড়ুন পরেরপর্ব 






Friday, June 1, 2018

যখন তখন-কবিতা-শুভদীপ ঘোষ


বর্ষার ধারা

শুভদীপ ঘোষ
সংখ্যা -৮ (২ রা জুন,২০১৮)


ঝিরি ঝিরি বহিছে বাতাস,মাতিছে বাদল স্বপন খেলায়,
কি করে থাকি বসে গৃহে এই সাঁঝের বেলায়।।
উঠিছে হুঙ্কার ক্ষণে ক্ষণে,
যাচ্ছে উড়ি বারিদ সব কোন দেশের পানে?
ভিজিছে আজ বিহগ গুলি,উড়িছে তারা সানন্দে;
মাতিছে তাদেরও মন এই মধুর বর্ষার প্রারম্ভে।।
মহীরুহ সব আজ পাহিছে স্বস্তি,পুড়িছে তারা বহু বেলা,
আজ যেন বর্ষার ছুঁতে তারা করিছে খেলা।।
পিপাসিত চাতকটি নিয়েছে আজ শ্বাস,পাহিছে জল-
তারাও আজ জোট মিলিয়ে পাড়িছে কোলাহল।।
সবুজ ঘাসে ছেলেরা করিছে খেলা,বারি কণা সব পাতিছে মেলা;
গৃহে শুধু বসে আছি আমি একেলা।।
চঞ্চলময় আমারও মন,মাতিছে সেও বর্ষার তালে-
ধরেছি তারে হাতের মুঠোয় মেখেছি কপোলে।।
আমিও যদি উড়িতে পারিতাম,ভাসিতাম আকাশে;
ঘুরিয়া বেড়াতাম দেশ বিদেশ,ঝরে পড়িতাম বর্ষার নিঃশ্বাসে।।
মুগ্ধ আমি রঙের খেলায়,সাদা কালোর অটল গড়নে;
ঝলকে ওঠে বিজলী জ্বেলে দেয় দীপ বকুল কাননে।।
দক্ষিণ হতে আসিছে আরো কাল মেঘ,গর্জে ওঠে ধরণী;
চলিছে তার নৃত্য লীলা,নামিল রজনী।।
জানিনা থামিবে কখন এই মধুর লীলা?
দেখিতে দেখিতে আমার পোহাল বেলা।।




















Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান