অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি
Thursday, May 31, 2018
গল্প-শম্পা সান্যাল
বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি
Image Courtesy: Google Images |
একরাশ বিরক্তি সহকারে রনি শুয়ে শুয়ে আকাশ পাতাল
চিন্তায় ডুবে ছিল। আজ দুপুর বিকেল দুটোই মাটি। মা হঠাৎ করে বেলুড় দর্শনে
বেড়িয়ে গেল, এখন না ফেরা পর্যন্ত থাকো বসে। বাবার তো ফিরতে ফিরতে আটটা-ন'টা। টি.ভি., ল্যাপটপ
নিয়ে খানিকক্ষণ কাটিয়ে একটা টেনে ঘুম দেবে বলে এসে শুয়েছে সবে, ডোরবেলের
আওয়াজ। রুপমদের বলেছিল আসতে, হবে না বলেছিল ওরাই কেউ নাকি দুপুরের সেলসম্যান, ভাবতে ভাবতে
দরজা খুলতেই দেখে
আকর্ণ বিস্তৃত হাসি নিয়ে বর্ষা, ওর
ছেলেবেলার বন্ধু দাঁড়িয়ে। ___আপদ, তুই এখন কেন রে, জ্বালানোর আর সময় পেলি না?
___তালাটা
খুলবি কিনা! গরমে মরছি, খোল্
___তা, তোকে মরতে
আসার জন্য কে ডেকেছে।
___মনে হলো, চলে এলাম।
কাকীমা কই, শুয়ে?
___না, বাড়ি নেই, আমি একা আছি, তুই ফোট্।
___তবে! ভয়
পাচ্ছিলি তো! দ্যাখ্, এইজন্যই বলি আমার নাম বর্ষা না ভরসা। দ্যাখ্
কেমন সময়মতো এসে গেছি বলে হ্যা হ্যা করে হাসতে থাকে।
___ভরসা! তোকে!
যে করবে তার দীর্ঘায়ু কামনা করি। টেনে একটা ঘুম দেবো ভাবছিলাম, আসলেন
জ্বালাতে!
___তো, ঘুমাও না।
আমার এখন বাড়িতে যাওয়া চলবে না।
___আর কারো কথা
মনে এলো না, চিরকালের আপদ। এই কি বললি! বাড়িতে যেতে পারবি না, কেন, আবার কি ক্যাচাল
বাঁধিয়েছিস?
___না গুরু, আমি না___
___অবশ্য এ আর
নতুন কি! হাসতে হাসতে বলে রনি।
___আরে, মহাজ্বালা!
আমি না,মা একটা কান্ড করেছে, বাপীও আছে সাথে।
___ কাকীমা! যত
কান্ড তো আপনার অবদানেই ঘটে।
___শুনবি, না চেপে
যাবো?
___না, না বল্
___কথা নেই, বার্তা নেই
হঠাৎ দেখি ছোটমাসী হাজির। তারপর দেখি দুই বোনে আমাকে কি পড়লে মানাবে, চুলটা ছাড়া থাকবে না বাঁধা হবে এইসব আলোচনা করছে।
কেসটা কি বোঝার চেষ্টা করলাম, তাতে আমাকে জানানো হলো দুপুরের পর বাপীর কোন বন্ধু
পত্নী সহ আসছেন অতএব আমি যেন বাড়ি থাকি। আমার থাকার সাথে কি সম্পর্ক, না ভালো
দেখায় সবাই থাকলে এই আর কি! বুঝলাম, খাওয়ার পর মা-মাসীর উপদেশ মনে করে কেটে পড়লাম।
___মানে! না
বলে চলে এসেছিস?
___আতাক্যালা, বললে আসতে
দিতো!!
___তো আমাকে
জ্বালাতে না এসে বাড়ি থাকলে কি এমন হতো!
__আরে বুঝতে
পারছিস না, পাত্রপক্ষ টক্ষ হবে, আর আমাকে সং সেজে ওদের সামনে বসতে হবে, ভাবা যায়!
___সবাই বসে আর
তোর তো আলাদা করে সং সাজার দরকারই নেই, আগমার্কা সং একটা!
__আআআ,
__বলবি, আর
___কি নোখ রে, লেগেছে
কিন্তু।
___আমি সং তো
তুই কি, তুই তো একটা ভূত।
__ভূত তো ভূত, শেষে তো
ভূতের কাছেই আশ্রয় নিয়েছিস, অকৃতজ্ঞ কোথাকার। তবে তোর সাথে যার
সম্বন্ধ হবে___বলে রনি হাসতে থাকে।
___আরে, বর্তে যাবে
রে!
___আমি অবশ্য
তোর বিয়েতে যাবো না, একটা ছেলে হয়ে আর একটি ছেলের দুঃখ দেখতে পারবো না।
___বয়ে গেছে, তোর
অপেক্ষায় আটকে থাকবে নাকি, আচ্ছা আপনার লেটেস্ট নিউজ কি!
___আমার কথা
ছাড়্, তুই না পাগলের ডাক্তারকে বিয়ে করিস।
___দে না
জোগাড় করে।
____দেবো, সাথে আর কটা
ডাক্তারের ঠিকানাও, দুদিন পর বেচারা ওকে তো যেতে হবে!
ঢাই করে একটা কুশান এসে পড়ে রনির গায়ে, হাসতে হাসতে
দ্বিতীয়টা আটকাতে আটকাতে বলে___কাকীমা পুরো চেপে গেছিলেন? মালদার
পার্টি হতে পারে, কেটে পড়লি কেন?
___বয়ে গেছে
এখন আমার এখন বিয়ে করতে।
___করিস না, রান্নাঘরে
গিয়ে দুকাপ চা করে নিয়ে আয়।
___পারলাম না।
___তা'লে বেরো।
___কাকীমা আসলে
যাবো। তোকে একা রেখে, আমার একটা দায়িত্ব আছে না___
___দাঁড়া, কাকীমাকে
ফোন করে বলছি যে...
___এই, একদম না, একদম না।
মেরে ফেলবো যদি বলিস।
___তাহলে চা
কর্।
___তোর এখন চা
খাওয়ার কি দরকার
এমন সময় আবারো ডোরবেলের আওয়াজ শুনে রনি বলে মনে হয়
আজকে পিসি আগে এসেছে, যা তোকে চা করতে হবে না, দরজা খুলে দিয়ে আয়।কটমট করে তাকিয়ে বর্ষা দরজা
খুলতেই দেখে অপরিচিত দুজন দাঁড়িয়ে। ওরাও বিস্মিত। বর্ষা রনিকে ডাকতে
রনি এসে দেখে পিসিমনি পিশেমশাই।
___আরে! তোমরা!
এসো এসো।
___ভিতরে এসে
পিসিমনি একটু বিরক্ত সহকারে মায়ের খোঁজ করে।
___মা কি
জানতো! আমাকে তো তোমাদের কথা বলে যায়নি।
___আমরাই কি
জানতাম!
__মানে!
___মেয়েটা কে?
___ও বর্ষা, আমার
ছোটবেলার বন্ধু।
__তোর মা
বাবার তো আসার দেরী আছে তাহলে।
ইতিমধ্যে দেখে ট্রে করে দুগ্লাস জল নিয়ে এসেছে বর্ষা,হাসি চেপে
রাখে রনি।
___কাছেই থাকো?
__হ্যা কাছেই
বলতে পারেন। চা খাবেন তো আপনারা?
___দাঁড়া, পিসি এসে
যাবে এখুনি বলতে বলতে রনি হাসে, বর্ষা অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে আমি এবার যাই, ঠিক আছে।
___যাবি? যা__ পিসিমনি
মাকে ফোন করে বলছি
___না,না আজ আর
দেরি করবো না, মাকে ব্যস্ত করিস না।
বর্ষা যাওয়ার সময় প্রণাম করতে গেলে থাক্ থাক্, ঠিক আছে- র
মাঝে নয় হয়। দরজা অবধি এসে রনি বলে__ বাবা, গুণ তাহলে কিছু আছে, ওকে সাবধানে যা, পরে কথা হবে।
___টাটা
ফিরে এসে বলে__মা আমার উপরে রাগ করবে, দেখো।
___আচ্ছা সে
আমি বুঝিয়ে বলবো। আসলে এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম, হলো না, তাই একবার ঘুরে গেলাম।
___তোর ঐ বন্ধু
প্রায়ই আসে নাকি!
___না, না আসে তবে
আমাদের পড়াশোনা তো আলাদা হয়ে গেছে, আসে সময় পেলে। মায়ের সাথে খুব
ভাব, মা বলেন ওর মধ্যে একটা সরলতা আছে। মনটা সত্যি ভালো।
__মা ছাড়্
তোর কি মত?
___আ আমার!
ধুরর্। বন্ধু! আরে আজকে কেন এসেছে জানো, কারা নাকি ওকে দেখতে আসবে তাই পালিয়ে
এসে বকবক করে জ্বালিয়ে গেল, বোঝো কারবার।
পিসি, পিসেমশাই তড়াক করে লাফিয়ে ওঠেন।
___মানে! ওদের
ঠিকানাটা বল্ তো।
___পোস্টাল এ্যাড্রেস
বলতেই পারবো না। আমাদের থেকে তিন-চারটে স্টপেজ পরে, বড় রাস্তার উপরেই বাড়ি।
___ওর বাবা কি
করেন, নাম কি জানিস?
___ব্যাঙ্কে
যতদূর জানি কিন্তু কেন? তোমাদের পছন্দ হয়ে গেল নাকি!
___ওর একটা ভাই
আছে?
___হ্যাঁ, তবে দাঁড়াও
দাঁড়াও, তোমরা কি ওদের বাড়িতে গেছিলে?
___ওদের বাড়ি
কিনা জানিনা তবে সব শুনে তো তাই মনে হচ্ছে। বান্টির জন্য একজন বলেছিলেন, ভাবলাম আগে
বাড়িঘর, মেয়ে দেখে তারপর সবার সাথে কথা বলবো। সেইমতো এসে, ওমা! একথা
একথা বলে, মেয়ে দেখায় না। শেষে বলছে বিশেষ কাজে মেয়ে বেড়িয়ে গেছে, যদি আর
একদিন কষ্ট করে আসেন।
রনি হাসতে হাসতে সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলে__বেঁচে গেছো।
___কেন রে!
___দ্যাখো, এমনিতে
অপছন্দের কারণ নেই কিন্তু তোমাদের সকলকে পাগল করে দিতো আর আমি তো
ভাবতেই পারছি না, দাদাভাই- এর বৌ বর্ষা! ও.এম. জি.
পিসিমনিরা চা-টা খেয়ে চলে গেলেন। রনি একা একাই হাসছে, বাবা মা এলে
হাসতে হাসতে বলে বর্ষার কীর্তি। দুজনেই বিরক্ত হন, তবে বাবা বলেন আজকালকার যুগে ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলে
নেওয়া উচিৎ ছিল, জোর করে বিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এসবের সাথে খাওয়া দাওয়া সাঙ্গ করে
ফোন করে বর্ষাকে। সুইচ অফ! কয়েকবার চেষ্টা করেও বর্ষার সঙ্গে যোগাযোগ করতে
পারলো না। ফেসবুকে অনলাইন দেখে দেবীকে।
__কি ব্যাপার!
মোবাইল কেড়ে নিয়েছে মনে হচ্ছে।
___বয়েই গেছে।
এই খুব খিদে পেয়েছে রে!
___কেন, রাতে খেতে
দেয়নি?
___ রাগ দেখিয়ে
খাইনি। এখন হেভি খিদে পাচ্ছে।
___জল খা। একটা
রাত উপোস করলে কেউ মরে না।
____জ্ঞান দিতে
হবে না। আমি একটু পরেই খাবো। না খেলে আমার ঘুম আসে না।
___খেলি না কেন
তাহলে?
____আরে, এন্তার বকে
যাচ্ছে, আমার সমস্যার কথা বলছি, শুনছেই না।
___সারা দুপুর
কোথায় ছিলি বলেছিস?
____পাগল! তাহলে
তোকেও ছাড়তো নাকি! চেনো নাতো আমার বাবা-মাকে!
___ওকে, যা খেয়ে
নে। পরে কথা হবে।
___টাটা।
দাদাভাই ফোন করছে এই সময়!
___হ্যালো
___কিরে, শুয়ে
পড়েছিস নাকি!
___না, না বলো।
____মেয়েটার
সাথে আলাপ করা।
____কোন্
মেয়েটা!
____আরে, আজকে মা
বাবা যাকে দেখেছে
____কেন! ওর
সাথে আলাপ করে কি করবে?
___সে তোর
জানার দরকার নেই।
___বাঃ, এটা কোনো
কথা হলো?
____আমি তোর
দাদা বলছি,তাই হয়েছে?
___ মানে, তুমি কি ওকে
অপমান করার জন্য বলছো?
___ তোর অসুবিধা
কোথায় বল্ তো!
___ঠিক আছে, দেখছি।
রাখলাম।
না, রনি আলাপ করায় নি। পিসিমনিরা কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে
দাদাভাই-এর বিয়ে দিয়েছে। গল্পটা শেষ হয়েও হলো না। রনি কর্মসূত্রে এখন
প্রবাসী। বর্ষার সাথেও যোগাযোগ ক্ষীণ। এখন রনির বিয়ে নিয়ে বাড়িতে কথা চলছে।
বন্ধু বান্ধব সব ছড়িয়ে গেছে। এরই মাঝে একবার দিন কয়েকের জন্য এসেছে, কিছু
বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে, ঠিক হয়েছে একদিন সবাই মিলে কাটাবে। বর্ষার বাড়ি রনির কাছে, সুতরাং ওর
ওপরে দায়িত্ব পড়লো বর্ষাকে ডাকার। ইদানিং দাদাভাই বৌদির মধ্যে
নাকি ঝামেলা, স্বেচ্ছায় দাদাভাই বদলি নিয়েছে। মা মারফত খবর মেলে।
কোথায় যে গন্ডোগোল, কে জানে!বর্ষার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে বলেই বোধহয়
দাদাভাই এর কথা মনে এলো। বর্ষাদের বাড়ি অনেক দিন পরে এলো, খানিকটা
পাল্টে গেছে। কলিংবেলের আওয়াজে যিনি দরজা খুললেন রনি চিনতে
পারলো না। ক্রমে জানালো ওরা বাড়ি বিক্রি করে চলে গেছে। কোথায়! একরাশ মন খারাপ নিয়ে
বাড়ি এসে মাকে বললো। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো বর্ষা কারো দ্বারা প্রতারিত
হয়ে আত্মহত্যা করতে গেছিল। বন্ধুরা শুনে বললো ওর এটাই স্বাভাবিক, কখন যে কার সাথে
মিশছে। এত প্রাণবন্ত মেয়েটা হারিয়ে গেল!
বর্ষা একটা এন.জিওতে কাজের সূত্রে দিব্যেন্দুর সাথে
পরিচয় হয়, ক্রমে দুজনে একসাথে থাকতে শুরু করে কিন্তু দিব্যেন্দু যে
বিবাহিত জানতে পারে ওর স্ত্রী সব জেনে ফেলার পর। বর্ষার মা বাবা দিব্যেন্দুদের
বাড়ি গেলে ওর বাবা মা চিনতে পারেন, অপমান করতেও ছাড়েন না। দিব্যেন্দু নিছক মজা উপভোগ
করছিল, অবস্থা বেগতিক দেখে বদলি নিয়ে কেটে পড়েছে। বিধ্বস্ত
পরিবারটি পরিচিত পাড়া ত্যাগ করে যায়।দাদা বৌদির সম্পর্ক উন্নতির খবর মেলে, মেলে না
বর্ষার খবর। অসময়ে ডোরবেল বাজলে আজো রনির বর্ষার আকর্ণ বিস্তৃত মুখখানি চোখে
ভাসে। ও কি বর্ষাকে বোঝেনি, বোঝেনি নিজের মনকেও! বর্ষা হারিয়ে যায় আবারও। নতুনকে
কেন্দ্র করে রনির দিনও কাটে।
টি.ভি. তে একটি অনুষ্ঠান চলছে, স্বামী
স্ত্রী, বন্ধু বান্ধবীর সম্পর্ক বিষয়ে, রনি
বিস্ময়ে হতবাক, দেখে বর্ষা সঞ্চালক হয়ে ভরসা জুগিয়ে
যাচ্ছে কয়েক জোড়া নারী পুরুষকে। কানে বাজছে বর্ষার কথা : মূলমন্ত্রই বিশ্বাস, ভরসা। একে
অপরকে ভরসা না করলে সম্পর্ক দৃঢ় হয়না, কোনো সম্পর্কই না।
কবিতা- সৌমেন্দ্র দত্ত ভৌমিক
আলোয় আলোয়
Image Courtesy: Google Images |
তমসাচ্ছন্ন!...উত্তরণে উচ্ছ্বাসে সন্তরণ!
হয়তো আবার আলোক-দর্শন!
ব্যথা ও বাধাগুলো ঝামটায় মুখ-
প্রতিরোধ ও প্রতিবাদে অমসৃণ
হাওয়া আগলে পাথুরে-জাগরণ!
গহন এই আত্মীয়তা ভাঙতে সময়
না-ছোড়-বান্দা!
আড়মোড়া ভেঙ্গে গা-সওয়া কষ্টগুলোর
যেন এক এক ধান্দা!
তামসিক চপলতা! নিবু-নিবু শুভ্র শুভ্রতা
উঁকিঝুঁকি দেয় অলিন্দের আনাচে-কানাচে
না-ভোলা আঘাটার বনে-জঙ্গলে।
হৃদয়ে শুয়ে অতীত শিশু আলোর-বাগানে।
হয়তো আবার আলোক-দর্শন!
ব্যথা ও বাধাগুলো ঝামটায় মুখ-
প্রতিরোধ ও প্রতিবাদে অমসৃণ
হাওয়া আগলে পাথুরে-জাগরণ!
গহন এই আত্মীয়তা ভাঙতে সময়
না-ছোড়-বান্দা!
আড়মোড়া ভেঙ্গে গা-সওয়া কষ্টগুলোর
যেন এক এক ধান্দা!
তামসিক চপলতা! নিবু-নিবু শুভ্র শুভ্রতা
উঁকিঝুঁকি দেয় অলিন্দের আনাচে-কানাচে
না-ভোলা আঘাটার বনে-জঙ্গলে।
হৃদয়ে শুয়ে অতীত শিশু আলোর-বাগানে।
কবিতা-মাম্পী ঘোষ
নদীকথা
Image Courtesy: Google Images |
বাধার পাহাড় ভেঙে গেছে এক নিমিষে আত্মতেজে।।
এগিয়ে যাওয়ার সেকি উদ্দম, সেকি দুর্বার বহমানতা
এমনি করেই গতি দিয়ে সে লেখে তার আত্মকথা।।
কত গিরিখাত আছড়ে পড়ে বয়ে চলে তবু প্রখর তেজে
ক্লান্তির বালু পথ রোধ করে তবু গিয়ে মেশে সাগর মাঝে।।
কখনও আবার শান্তশীতল, তৃষাতুর পায় জীবন দান
শুধু বয়ে চলে স্মমুখ পানে নেই কোন তার মিছে পিছুটান।।
উথাল পাতাল বুকের মাঝে তবুও ধীর তবুও স্থির
ভাটার সময় মরাগাঙ, জোয়ার এলেই ডুববে তীর।।
জোয়ার ভাটার খেলায় জীবন, কখনও খরা, কখনও প্লাবন
নদীর গতি জীবনে নামুক, নদী সম হোক আত্মকথন।।
কবিতা- কৃষ্ণা সাহা
একটা সম্পর্ক
হয়তো নামগোত্রহীন
অদ্ভুত একটা আকর্ষণ অনুভব বলতেও পারো,
অবহেলা করা যায় না কখনো
আবার জোর করেও আঁকড়ে
ধরাও যায় না,
শুধু একটা অমোঘ ভালোলাগা,
ভালোবাসা কিনা জানিনা
কি বা হবে জেনে? এই তো
বেশ ভালো আছি,
তোমাতে আমাতে দোঁহে
নির্জনে নিরিবিলিতে আপনার
ভুলে,
জীবনের কিছু মূহুর্তের সন্ধিক্ষণে,
ভাগ করে নেবার আত্মীয়তায়
উর্বর এ জমির ভূমি।
হোক মানবিকতার জয়
হোক মানসিকতার সিঞ্চন
কি পেলাম , কি পেলাম না
থাক না হয় এই বেলা পড়ে
শুধু ভালোলাগার মূহুর্তের
হোক সঞ্চয়,
পাথেয় হবে ভালোলাগার উড়ন্ত অঞ্চল, মূহুর্ত অনুরণন
কি হবে অত হিসেবে...?
কে আমি ? কে তুমি ?
থাক না সে সব মিছে
কি হবে তার ব্যাখ্যা খুঁজে
তুমি শুধু মিতা...।
কবিতা-সম্পা দত্ত
খাজুরাহো
Image Courtesy:Google Images |
তোমার শরীর জুড়ে
আমার ভালোবাসা,
খাঁজে খাঁজে শ্রাবস্তীর কারুকাজ।
খাজুরাহো, অজন্তা-ইলোরা,
বৈদ্যুর্যমণি রহস্য অতল জলের আহ্বান।
দেয়াল নামায় মিথুন চিত্র,
ধূসর সময় মাখে নিশ্চুপ জলজ নেশা।
ছুঁয়ে থাকে মুখোমুখি অনুরাগ,
নিঃস্পাপ শরীর বেয়ে কুয়াশা ভেজা ভোর
ইতিহাস ঐতিহ্য সাক্ষী সময় দলীলে।
গদ্য কবিতা-সান্ত্বনা দাস
কবিতারা
Image Courtesy: Google Images |
কবিতারা ভীড় করে মনে আসে,
ওভেনের ধারে মগজ তখন
মাছের হিসেব কষে।
মাছের ঝোল নয়ত ঝালের মতো
হাঁড়ির ভাতটা ফোটে যেন ঠিক মতো।
আমি সুগৃহিনী,
কবিতারা বুঝতেই চায় না।
ওরা প্রেম বিলাসী
ওরা মানিনী।
সময় খুব অল্প
অত কি সময় আছে
লিখব গল্প!
তাহলে তো টিফিন করা
থাকবে বাকী,
ঘরের তাকটা থাকবে আগোছালো
এলোমেলো।
উঁচু দরের ভাষা
'বিলম্বিত ' 'বিচ্ছুরিত ''সাদুর্য্য'
এসব লিখতে পারি না।
আমি তো কবি নই ,আমি গৃহিণী।
মনের কোনেতে আনাগোনা
যে সুরের লহরী,
তাকে করেছি ত্যাজ্য।
শুধু বন্ধুরা জানে
যারা ভালবাসে কাব্য,
আমার কবিতা হয়ত নয় সুখশ্রাব্য।
এতো শুধু মন দিয়ে
মনকে খোঁজা কবিতায়|
অলঙ্কার নেই, ভাষা নেই
কিযে বলে সোজা মনে
গেঁথে যায়।
শোন বন্ধু,
কবিতা আমার কলমের ডগায়
কাব্যিক হয় না।
আমি তো কবিই নই।
Subscribe to:
Posts (Atom)