গল্প- বৈঠকি
রথীন্দ্রনাথ
রায়
|
Image Courtesy: Google Image Galley |
শ্রাবণ মাসের থই থই নদী । সেই
নদীতেই একা ডিঙি নিয়ে বাঁকের মুখে চলে যায় সে । সারারাত জাল পাতা থাকে । তা ‘মাছ
পড়ে বৈকি ? ট্যাঙরা, বোয়াল পাবদা, ভেটকি-আরো কতো কি? দুহাজার সালে যখন সারা রাজ্যে
প্রলয়ঙ্করী বন্যা দেখা দেয়,
ঠিক সে সময় ওর মা মারা যায় । তখন ওর বয়স মাত্র পাঁচ বছর । চারদিক থেকে তখন
শুধুই মৃত্যুর খবর। ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই , পথ্য
নেই-কিছু নেই । তখন ও কিন্তু কাঁদেনি । জিনিসপত্রগুলোকে গুছিয়ে রাখতেই ব্যস্ত ছিল সেই। আবার
যে ওদের বাঁচতে হবে ।
সেই মেয়ে ওই শ্যামা। ভয়ডর বলতে নেই । বাড়ন্ত
চেহারার সোমত্ত মেয়েকে নিয়ে পড়শিদের চিন্তা থাকলেও ওর ছিলনা। নদীর তীরে ধানক্ষেত
না বলে ধানসিঁড়ি বলাই ভালো। কারণ ধানক্ষেতগুলো ধাপধাপে উঠে গেছে অর্জুনপুরের দিকে।
এইরকম সবুজ মাঠে ছাগলের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ফিরছিল শ্যামা। পড়ন্ত বিকেলের রাঙা
রোদ ছড়িয়ে পড়েছে ওর অঙ্গপ্রত্যঙ্গে হঠাৎ
থমকে দাঁড়ায়। স্বরূপদাদা। বড়বাড়ির ছেলে। কলকাতায় থাকে। পড়াশোনা করে। কখনো কখনো
গ্রামে আসে। স্বরূপদাদাকে সবাই ভালোবাসে। কতোবড়ো পাশ দিয়েছে। তবু একটুকু দেমাক
নেই। যে কারোর প্রয়োজনে সাহায্য করে ।
-শ্যামা কোথায় গেছলি রে?
-মাঠে। তুমি কখন এয়েচ গো?
-এইতো সকালের দিকে । তোরা
ভালো আছিস তো মা ?
শ্যামা তাড়াতাড়ি চলে যেতে চায়
। ও স্বরূপের সামনে দাঁড়াতে পারেনা । কেমন
যেন লজ্জা করে। সে লজ্জার প্রকৃতিটাও যেন
কেমন !
স্বরূপ একেবারে নদীর কিনারায়
গিয়ে দাঁড়ায়। এখন ভরানদী। জল যেন উথালপাথাল করছে ।
শ্যামা উৎকণ্ঠার সঙ্গে বলে, অতো কাছে যেওনি। এখন নদীতে খুব স্রোত
।
-তাই বুঝি!
হাসে স্বরূপ। শ্যামা ওর মুখের
দিকে তাকায়। কিন্তু চোখের ওপর চোখ পড়তেই দৃষ্টিটা নামিয়ে নেয় । খুব চেনা মানুষ ।
তবু আজ ওকে অচেনা বলে মনে হয় ।
-জানিস, আমার এই গ্রামের পরিবেশ খুব ভালো
লাগে । এই
নদী, গাছপালা, খোলা আকাশ , সবুজ
ধানক্ষেত- সবকিছুর মধ্যেই একটা প্রাণের স্পর্শ আছে । কলকাতায় আমার মোটেও ভালো
লাগেনা। চারদিকে শুধু কংক্রিটের জঙ্গল ।
শ্যামা অবাক বিষ্ময়ে ওর দিকে
চেয়ে থাকে।
ঠিক এই সময়েই নদীর ওপার থেকে
একটা কণ্ঠ ভেসে আসে ।
সচকিত হয় শ্যামা। ওর সই
চাঁপার কণ্ঠস্বর। নদীর ওপারে ঝাঁপানপুর গিয়েছিল ডাক্তার দেখাতে । ওর তিনদিন জ্বরৃ।
দেরি না করে ছাগলছানাটাকে ছেড়ে দিয়ে হাঁটতে শুরু করে শ্যামা। কিছুটা দূরে ওর
নৌকাটা ভিড়ানো ছিল। সেটা খুলে নিয়ে তরতর করে বৈঠা বেয়ে ওপারে চলে যায় ।
স্বরূপ নদীতীরের পাকুড় গাছটার
নীচে বসে থাকে। বর্ষার ভরা নদী একটা গোঙানির মতো শব্দ করে বয়ে চলে। অনেকদিন এই
নদীর কাছে এসে বসা হয়নি। তাই এই নদীটাকে বড্ড অচেনা বলে মনে হয়। মাথার ওপরে আকাশ
ভাঙা মেঘ। কতক্ষণ এভাবে বসেছিল - সময়ের দিকে খেয়াল ছিলনা । হঠাৎ শ্যামার গলা শুনে
চমকে ওঠে ।
-ঘর যাবা না ? এখনি বৃষ্টি
হবে যি ।
-দেখেছিস, আমার এসব
দিকে খেয়ালই ছিলনা। ভাগ্যিস তুই এলি!
-ভাগ্যিস আমি এলুম ! ঠাকুমাকে
এবার সব বলে দেব ।
-কি বলবি ?
-এই তোমার কোনও দিকে মন
থাকেনা। সবসময় উদাস হয়ে কিসব ভাবো!
-ওঃ এই কথা? তা বলিস ।
কথা বলতে না বলতেই ঝমঝম করে
বৃষ্টি এল। পাকুড় গাছটার আড়ালে দাঁড়ালেও ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে ভিজতে হল ওদের ।
-দেখলেন তো, আমার জন্যি
আপনাকে ভিজতে হল ।
-কিন্তু তোকেও তো ভিজতে হল ।
-সে হোক । আমার অভ্যেস আচে।
এখন আপনার না কিছু হয় ? মাথাটা মুছে নেন তো দেখি।
শ্যামা নিঃসঙ্কোচে ওর আঁচলটা
এগিয়ে দিল। স্বরূপ এই গ্রাম্য দেহাতি
মেয়ের বিশ্বাস আর সারল্য দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারেনা । কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি
ধরে আসে । শ্যামা আঁচলটা কোমরে জড়িয়ে নিয়ে বলল , চলুন এবার। বৃষ্টিতে ভিজলেন তো ? ঠাকুমা এবার আপনাকে খুব বকবে ।
-ভিজলাম আর কৈ ? তুইতো আমায়
আঁচল দিয়ে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করলি ।
ওরা চলতে থাকে ।
কিছুদূর যেতেই ঘনজঙ্গলের
মধ্যে দিয়ে পথ । চারদিকে ঝোপঝাড় আর নানা রকমের গাছপালা । ভবানী মন্দিরের কাছে
আসতেই অন্ধকারটা ঘনিয়ে আসে । এখানে আসতেই পাগলা সন্ন্যাসীর কথা মনে পড়ে ।
পাগলা সন্ন্যাসীর গতিবিধি ও
আচার আচরণের কোনও ঠিক ঠিকানা ছিলনা। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন। মারা গেলেও পাগলা
সন্ন্যাসীর বিদেহী আত্মাকে ভবানী মায়ের সামনে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় গভীর রাতে কেউ কেউ
দেখতে পায়। যদিও এটা গল্প। সত্যতা সম্বন্ধে সন্দেহ থাকলেও আজ শরীরটা কেমন যেন
শিউরে ওঠে। ভয়ের ব্যাপারটাকে সামলে নেওয়ার জন্য স্বরূপ বলে, শ্যামা তোর
পাগলা সন্ন্যাসীর কথা মনে পড়ে ?
-হ্যাঁ।
-ভয় করেনা ?
‘না’। কিন্তু মুখে না বললেও
বেশ ভয় পেয়ে যায় শ্যামা। স্বরূপের কাছে বেশ কিছুটা সরে এসে বলে, -তুমি না
- আমি কি?
‘জানিনা’। দাঁড়ায়না শ্যামা।
প্রায়ান্ধকার জঙ্গলের মধ্য দিয়েই ছুটতে থাকে ।
স্বরূপ কিছু বুঝতে পারেনা।
হঠাৎ কি এমন ঘটল যে শ্যামা এমন করে ছুটে চলে গেল ?
ক'দিনের জন্য
বাড়ি এসেছে স্বরূপ। তাই ঠাকুমা গায়ত্রী দেবীর চিন্তার অন্ত নেই। কলকাতায় কি আর
এখানকার মতো খাঁটি জিনিষ পাওয়া যায় ? শুধু ভেজাল আর ভেজাল। ভেটকি আর পাবদা
নিয়ে এসেছে শ্যামা। স্বরূপের বেশ প্রিয়। কখন যেন কথা প্রসঙ্গে শ্যামাকে একথা
বলেছিলেন, গায়ত্রী
দেবী। শ্যামা সেকথা ভোলেনি ।
-ঠাকুমা, কোথায় তুমি?
ঘর থেকে বাইরে আসতেই শ্যামাকে
দেখে আশ্চর্য হয় স্বরূপ। বলে, কি ব্যাপার ?
- তোমার ল্যেগে মাছ এনেছিলুম?
- কিন্তু রাঁধবে কে? বুড়ি ঠাকুমাকে
কষ্ট দেওয়াটা কি ঠিক হবে ?
শ্যামা কিছু বলতে পারেনা ।
শাড়ির আঁচলটা খুঁটতে থাকে। কেমন যেন লজ্জা পায় । আর স্বরূপদাও যেন কেমন! কিচ্ছু
বোঝেনা ।
পরদিন বিকেলে নদীর ধারে এসে
বসেছিল স্বরূপ। কিছুক্ষণ আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। আকাশটা এখন পরিষ্কার হলেও
গাছগাছালির মাথা থেকে তখনো বৃষ্টির রেখা মুছে যায়নি। তারই ওপরে সূর্যের কিরণ পড়ায়
ওগুলো যেন মুক্তোর আকার ধারণ করেছে। আর নদীটাও যেন কিছুটা ফুলে উঠেছে । ছোট ছোট
আবর্ত তৈরি এগিয়ে চলেছে সমুদ্রের সন্ধানে ।
-স্বরূপদাদা, তুমি এখেনে?
স্বরূপ পিছন ফিরতেই দেখে
শ্যামা। তণ্বী, কিশোরী।
কাঁখে আধ ভর্তি ঘাসের ঝুড়ি।
শ্যামা কাছে এসে ঘাসের ঝুড়িটা
নামায়। ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে, তুমি এখেনে আসো কেনে গো?
-কেন? এই নদী, গাছপালা-এসবকে
ভালো লাগে বলেই।
-আর কাউকে ভালো লাগেনা?
-না।
শ্যামা আর বসেনা। ঘাসের
ঝুড়িটা নিয়ে চলতে থাকে। ক্রমে গাছগাছালির মাঝে অদৃশ্য হয়ে যায়। স্বরূপ ক্রমশ
ভাবনার গভীরে ডুবে যায়। শ্যামা হঠাৎ অন্য কাউকে ভালো লাগার কথা বলল কেন? তবে কি? না,না। তা কি
করে হয়? কি
বিরাট দূরত্ব ওদের মধ্যে! কিন্তু শ্যামার কণ্ঠটাকে যেন কিছতেই ভুলতে পারেনা।
গাছগাছালির মধ্য থেকে,
নদীর স্রোতের মধ্য থেকে শুধু যেন একটা কথাই ভেসে আসে-অন্য কাউকে ভালো না, অন্য কাউকে-
সন্ধ্যের দিকে বৃষ্টিটা ঘনিয়ে
এল। একসময় মনে হয়েছিল বৃষ্টিটা বুঝি ছেড়ে যাবে। কিন্তু না। রাত যত বাড়তে থাকে, বৃষ্টিও
বাড়তে থাকে। কলকাতায় বর্ষণমুখর শ্রাবণসন্ধ্যাকে উপভোগ করা যায়না। চারদিকের
আধুনিকতার ছোঁয়ায় বৃষ্টির শব্দ সেখানে আবহ সৃষ্টি করতে পারেনা। ঝিঁঝিঁর একটানা ডাক, ভেকের গর্জন, বৃষ্টির
রিমঝিম, ঝমঝম-এগুলো
যেন এতকাল সাহিত্যের বিষয় ছিল। হঠাৎ সেগুলোকে উপলব্ধি করতে পেরে এক বিজাতীয় খুশিতে
উদ্বেল হয়ে ওঠে তার মন। যেন এক অদ্ভুত ভালো লাগা ছড়িয়ে পড়েছে তার দেহে মনে। যদিও
অবিরাম বর্ষণের মধ্যেও দুপুরের ভাবনাটা থেকেই গিয়েছিল। শ্যামা বুঝি তার মনের কোণে
একটু হলেও জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু ঠাকুমা কিছুতেই মেনে নিতে পারবেনা। বাবা মার
মৃত্যুর পর ঠাকুমা ছাড়া তার যে আর কেউ নেই। সেই ঠাকুরমাকে কাঁদিয়ে সে কখনো সুখী
হতে পারবেনা। বড্ড অবুঝ মেয়েটা।
পরদিন সকালে বৃষ্টি ছেড়ে
যেতেই আবার রোদ উঠল। বড্ড ভারাক্রান্ত মন ছিল অবুঝ মেয়েটার। সারারাত কেঁদেছে।
দুচোখে অনেক বর্ষণ হয়েছে। মনকে বোঝাতে চেয়েও পারেনি। শুধু কেঁদেছে। এখন নদীতীরে
এসে দাঁড়াল। এই নদীই তো তার সব। নদীর সঙ্গেই তার কথাবার্তা, সখ্যতা, ভালোমন্দের
বিনিময় সবকিছু। উথালপাথাল বইছে নদী। আজ আর মাছ ধরতে যাওয়া যাবেনা। তাই চুপ করে
সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। প্রায় তীর ঘেঁষে একটা মাছ ধরা ডিঙি নৌকো এগিয়ে আসছিল। ওপারের
শোভন মাঝির ছোট ছেলে রতন ছিল সেই নৌকোয়। হঠাৎ নৌকাটা পড়ল একটা দয়ের মাঝে। তীব্র
ঘুর্ণি স্রোত সেখানে। ঘুরতে থাকল নৌকাটা। রতন পারলনা নৌকাটাকে ঠিক রাখতে। চিৎকার
করল রতন, বাঁচাও
। নৌকাটা ক্রমশ মাঝ নদীর দিকে চলে যেতে থাকল। অনেকেই জলের কাছে এসে কলরব শুরু করল।
কিন্তু রতনকে সাহায্য করার জন্য কেউ জলে নামার সাহস দেখাতে পারলনা। উল্টে গেল
নৌকাটা। গভীর জল থেকে সাঁতরে তীরে আসার চেষ্টা করেও ক্রমশ গভীর জলে চলে যেতে থাকল
রতন। এতক্ষণ তীরে দাঁড়িয়ে দেখছিল শ্যামা। এবার আঁচলটাকে কোমরে জড়িয়ে পাশে পড়ে থাকা
একটা দড়ি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল জলে। ডাকাবুকো মেয়েটা লড়াই শুরু করল স্রোতের সঙ্গে।
প্রায় মাঝনদীতে রতন একবার ডুবছিল আবার ভাসছিল। প্রাণপণে চেষ্টা করছিল নিজেকে
ভাসিয়ে রাখতে। এবার ডুব সাঁতার দিল শ্যামা। সবাই মনে করল এবার বুঝি শ্যামাও জলের
তোড়ে হারিয়ে যাবে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে রতনের কাছে গিয়ে বলল, ধর এটা। রতন
দড়ির একপ্রান্ত ধরে রইল। শ্যামা অপর প্রান্ত বেঁধে নিল নিজের কোমরে । তারপর সে এক
অবিশ্বাস্য লড়াইয়ের শেষে রতনকে ঘাটে এনে তুলল শ্যামড়। লোকেরা ধন্য ধন্য করল। বলল, সাহস আছে
মেয়েটার। কিন্তু শ্যামা নিরুত্তর। চারদিকে খুঁজল শুধু একজনকেই। কিন্তু কোথাও তার
দেখা পেলনা।
বাড়িতে বসেই ওদের কাজের লোক
হারান কাকার কাছে ডাকাবুকো শ্যামার কথা শুনল স্বরূপ। মনে মনে খুশি হল। না, মেয়েটার
সাহস আছে! সেদিন বিকেলে নদীতীরের সেই পাকুড়গাছটার নিচে এসে বসল সে। শ্যামা নিশ্চয়
ওর সঙ্গে দেখা করতে আসবে। একটা গোলাপ এনেছে ওর জন্য। বেলা গড়িয়ে এল। বিদায় বেলার
লাল সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে পড়ল ভরা নদীর উথালি পাথালি ঢেউয়ের মাঝে। আশঙ্কা বাড়তে
থাকল। তাহলে কি? ক্রমে
অন্ধকার নেমে আসছিল দৃশ্যপটে। স্বরূপের চোখদুটোও জলে ঝাপসা হয়ে আসছিল। শ্রাবণী
চতুর্দশীর চাঁদ উঠল আকাশে। ফিরে আসবে এমন সময় দেখে শ্যামা এগিয়ে আসছে ।
-তোর জন্য একটা গোলাপ এনেছি ।
-দাও ।
-আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবিনা?
ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিল শ্যামা ।
দূরে কোনও গৃহস্থ বাড়িতে শাঁখ
বেজে ওঠে ।
| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |
| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |
| © All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |
| a DISHA-The Dreamer Initiative |