অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label রম্যরচনা. Show all posts
Showing posts with label রম্যরচনা. Show all posts

Tuesday, October 9, 2018

রম্য রচনা-সম্পা দত্ত


ভালোবাসায় ভরপুর ভোলেবাবা- কৈলাশে



কৈলাস পর্বতে বরুণ দেব কেবলি চোখ খুলে চাইছেন। এদিকে পারো,মানে পার্বতি তার আজ দুচোখে ঘুম নেই।
পারো'কে অস্থির লাগছে দেখে বরুণ ব‍্যাপার বুঝতে পেরে সতর্ক করে দিলেন।

পারো আজ কিছু তেই শিবা, কে একলা ছাড়বি নে

সে তো জানি, অন‍্যবার হলে আলাদা কথা, এবার শিবরাত্রি ভ‍্যালেনটাইন একসাথে। কচি কচি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকবে হাঁ করে। আমার কথা ভুলেই​ যাবে আজ

না না যেভাবেই হোক, ওকে মর্তে নিয়ে পার্কে ঘুরে আসবি


দেখি কালী'কে ফোন করি। ওর আজ মর্তে পূজা আছে

ওদিকে শিবার আনন্দ ধরেনা।

যেহেতু ভালোবাসার ​দিন প্রেমিক প্রেমিকা জুটি জল ঢালতে এলে ,একটা গোলাপ ফুলের পাপড়ি জুটলে জুটতে ও পারে।

সবাই মাথায় ধুতুরা ফুল দেয়, গোলাপ দেয়না কেউ। বড় শখ  একটা গোলাপ ফুলের।

এর ই মধ‍্যে পারোর চিল চিৎকার।

এই যে মিনসে গাঁজা সেবন করলে হবে না, আমাকে নিয়ে মর্তে সারা দিন টোটো'তে করে ঘুরে বেড়াতে হবে।ডাচ রক্ত গোলাপ কিনে দিতে হবে

সব্বোনাশ পারো, তুমি জানো এই বসন্তে -ভ‍্যালেনটাইনে ডাচ গোলাপ ফুলের দাম কত চড়া ! আমি তোমায় বড়জোর ল‍্যাভেনডার ধুতুরা ফুল দিতে পারি।
 দোকানদার ঝোপবুঝে কোপ মারছে বুঝলে।রাতারাতি দশ টাকার একটি গোলাপ পঞ্চাশ টাকা য় বিকোচ্ছে। খদ্দের বুঝে দান মারছে। 
ভালোবাসা কি আর আগের মত সুন্দর আছে। এখন প্রেমিক প্রেমিকা কে যত দামী ডাচ গোলাপে ঢেকে দিতে পারবে, সেই প্রেমিক তত ডাচম্যান, সবথেকে দামী।

তুমি তো হাড় কিপটে, এখনো ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড তো নেই ই নিদেনপক্ষে পেটিএম পর্যন্ত করলে না, “আমার বান্ধবী দের বরের সবার আছে

আহা , মর্তে পূজা নিয়ে শপিং মল থেকে কত্ত সুন্দর সুন্দর শপিং করে।

আঃহা,পারো তোমাকে গোলাপ দিতে পারিনি তো কি,আমাদের প্রেম সারা কৈলাস পর্বতে এমনকি মর্তবাসীরা সবাই জানে। তাদের মুখে মুখে ফেরে দেখোনা , সুন্দর স্বামী স্ত্রী দেখলেই বলে - দেখো দেখো শিব-পার্বতীর জুটি যাচ্ছে দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়

পারো প্রেম ভালোবাসা দামী উপহার দিয়ে ধরে রাখা যায় না। এটা অনুভূতি র বিষয় দেখনদারি নয় বরং উপলব্ধি করতে হয়, আমি তোমায় এমনি তেই প্রচন্ড ভালবাসি 

কোন নির্দিষ্ট দিন তোমার জন্য নয়

শিবা দেখছে পারোর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে-আপ্রান বোঝাতে চেষ্টা করছে।

সারা বছর ছাই মাটি মেখে খেটে , পূজা পেয়ে যা ইনকাম সঙ্গের পোষ‍্য গুলো র আবদার মেটাতে পারোর জন্য কিছু করতে পারে নি।

ওদিকে শিবার আনন্দ ধরে না, পারো লজ্জায় লাল হয়ে শিবার বুকে মুখ গুজে দিয়ে আছে-শিবা তখন উপর থেকে দেখছে-

এক ফুল দোকানী পস্রা সাজিয়ে বসেছে পাশাপাশি ধুতুরা-গোলাপ ফুল নিয়ে।
ধুতুরা দশটাকা দিয়ে দুই টি,
গোলাপ একটি পঁচিশে, ডাচ গোলাপ একটি পঞ্চাশ।
একদিনে দুই পর্ব- ভালো স্বামী পাবার/ হবার আশায়  উপোসী মেয়ে বৌরা, শিবের মাথায় জল ঢালবে বলে, দেদার ধুতুরা ফুল কিনছে।

গোলাপ গুলোতে দোকানী জল ছিটিয়ে তাজা রাখার চেষ্টা করছে-

সত্যি কারের একটি ভালো মনের ভালোবাসার খাঁটি মানুষের অপেক্ষায়!

কৈলাস পর্বতে বসে শিবা আনন্দে চোখ বোঁজে।
    
মনে মনে ভাবে বর্ণহীন গন্ধ হীন ধুতুরা তবুও দেবতার জন্য, কিন্তু সুন্দরী সুগন্ধি ফুলের রানি

গোলাপ তার মুগ্ধতার সৌন্দর্যের মর্যাদা তাকে কেউকি তাকে আদৌও দেয়?প্রশ্নটা থেকে যায়।



চিত্রঋণঃগুগল ইমেজ  
পত্রসজ্জাঃস্বরূপ চক্রবর্তী




Sunday, August 26, 2018

যুগলবন্দী ১৭-রম্য রচনা -শম্পা সান্যালঃ সুরজিত মাহাত

    যুগলবন্দী- সংখ্যা # ১৭ 

কলমেঃ  শম্পা সান্যাল
ক্যামেরায়ঃ  সুরজিত মাহাত

রম্য রচনা

সম্পাদক উবাচঃ পাঠকের অবগতির জন্য জানাই যে এই লেখাটি তে আমার প্রিয় শিব-দুর্গার পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য গনেশ ঠাকুরের চৈত্র সেলে মর্ত্যে আগমন ও নিজের দেড় খানি দাঁত নিয়ে বিব্রত হবার গল্প " দন্ত্যস্থ"র উল্লেখ আমাকে বাধিত করেছে,লেখিকার কাছে আমার কৃতজ্ঞতা অশেষ।






ছবি দেখে লিখতে হবে। কি লিখি! অত কি ছাই পারি!"  
মাথায় কিছুই আসছে না, বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি যদি কিছু ভাবনা আসে, ওমা! ওটা কে?  যাইহোক, দেখা যখন পেয়েছি আলাপ তো করি! পায়ে,পায়ে এগিয়ে যাই। কি ব‍্যাপার! গোমড়া মুখে বসে আছো যে! এই সময় তাও আবার। তৎক্ষণাৎ তো মাথায় এসে গেল " প‍্যাঁচা কয় প‍্যাঁচানি, খাসা তোর চ‍্যাঁচানি "
  ও বাবা, এটা আর কে না জানে! আর সুকুকে নকল করার কোন‌ই দরকার‌ই  নেই আমার , হে হে আমি কি যাকগে দেখে যা মনে হচ্ছে পেঁচককুলের  হলেও তুমি বাপু লক্ষ্মী ন‌ও। ন‌ও তো ন‌ও,সবাইকে লক্ষ্মী হতে হবে এ দিব‍্যি তো কেউ দেয়নি! তোমার ড‍্যাবাড‍্যবা চোখ দুটো বড়ো সরল, একটু কি ভয়ার্ত! স্বাভাবিক। হতেই পারে। মনুষ‍্যুকুলকে ভয় তো পেতেই হবে। ও আসল কথাই তো জানা হয়নি, তুমি প‍্যাঁচা না পেঁচি গো? রাগ করলে পেঁচি বললাম বলে? আরে, তোমার কি ঘুমের সমস্যা নাকি ! কি ব‍্যাপার! দিনের বেলায় বেরিয়ে পড়েছো যে! পেঁচির সাথে-কি ঠিক ধরেছি তো! ঐজন্য গোমড়া মুখে বসে? আরে বলো না-কাউকে বলবো না, প্রমিস, কি হয়েছে গো? বললাম তো বলবো না কাউকে। ক্বিইইই! আমিও পেঁচি তাই আমাকে-বেশ হয়েছে, দিয়েছে তো বের করে! ঠিক হয়েছে। -নাআআ- না!!!  -তাহলে,ও বুঝে গেছি, বুঝে গেছি আর বলতে হবে না,  তোমারো আমার মতো দশা, তাই তো! অলীক পাতায় লিখবে কি তাই ভেবে ভেবে ঘুম নেই তো! আমারো গো। আরে,  একটাও কমন পড়েনি জানো ! রাতের ঘুম থুড়ি দিনের ঘুম গেছে তো ভোগে?-চুউউপ ।-চুপকরবো!! কেন ? কেন করবো শুনি?
-আমার কোন পেঁচি টেঁচি নেইইই!!
-তা অতো আস্তে আস্তে বলার কি আছে!  নিশাচর, নিশিকুটুম্ব তো ন‌ও ! জোরে কথা বলো। ঐ বিড়বিড়, মিনমিন করে যারা কথা
 বলে, বিরক্ত লাগে। হ‍্হ‍্যা, কি বলছিলে, পেঁচি নেই! তাই হুঁকোমুখো হয়ে বসে আছো!
-না আছে তবে -
-কি ছাই যে বলছো! খোলসা করো তো বাপু।
-আছে ,আবার নেই, মানে আমাকে সে চায় না। আমার ভালোবাসার কোন.....
-বুঝেছি, বুঝেছি । হুঃ, এ গল্প ঘরে ঘরে, তার জন্য তোমার হাসতে তো মানা নেই! ধুত্, যতো সময় নষ্ট।চললাম। আরে, একটা কথা মনে এলো। শিবালয়ের কাছেই থাকে স্বরূপ ,বেশ একটা হৃষ্টপুষ্ট নাদুসনুদুস ইঁদুর যদি দেখতে পাও তৎক্ষণাৎ পাকড়াও করে  স্বরূপকে  ধরে এনে দাও। ও শিবালয় থেকে এনে বাজারে ছেড়ে দিয়ে আর খুঁজে পাচ্ছে না, ফলে প্রেসার ট্রেসার বেড়ে একসা। খুব খুশী হবে, লেখা নিয়ে তোমাকে আর জ্বালাবে না। আরে, শিবালয়ে তো একজন থাকেন। তোমার কেউ তো হন নিশ্চয়ই, কাকীমা,বৌদি যাহোক সম্পর্ক তো একটা আছেই। বলেই জোরে জোরে পেঁচার পাঁচালী-

হুতোম প‍্যাঁচা, নিমপ‍্যাঁচা,কুটি প‍্যাঁচা, গাছ প‍্যাঁচা, শিকরে প‍্যাঁচা,লক্ষ্মী প‍্যাঁচা, কন্ঠি নিমপ‍্যাঁচা,পাহাড়ি নিমপ‍্যাঁচা,উদখী নিমপ‍্যাঁচা, মেটে হুতোমপ‍্যাঁচা,চিতিপেট হুতোমপ‍্যাঁচা,তামাটে মেছো প‍্যাঁচা,মেটে মেছোপ‍্যাঁচা,খয়রা মেছো প‍্যাঁচা,খয়রা গাছ প‍্যাঁচা,দাগিঘাড় কুটিপ‍্যাঁচা, এশীয় দাগিপ‍্যাঁচা,খুড়-লে প‍্যাঁচা, খয়রা শিকরে প‍্যাঁচা,ছোটকান প‍্যাঁচা-পরিযায়ী .....
-থামবে!! প‍্যাচাল পড়া বন্ধ করবে তুমি?
-কেন, কেন !জানো , একারণে খুশী হয়ে....কি বললে ?? আবার বলো, আবার বলো! শিবালয় থেকে ঐ কারণে তোমার বোন খবর পাঠিয়েছেন? স্বাভাবিক। , ঠিক ঠিক যাকগে যা বলছিলাম, বলে ভালো করেছো।  ঐ কারণে চিন্তা! ছোঃ,আরে আগে বলবে তো সেকথা। শোনো, সুন্দরবনের কাছে চলে যাও,ওখানেই মিলবে।  তাইলে আর তোমাকে কি বললাম! খুঁজে খুঁজে আর বাজার পেলো না! জংলি বাজারে নিয়ে যাওয়া কেন বাপু!  যার জন্য যাওয়া সে গুড়ে তো বালি, মাঝখান থেকে-আরে না না, অতো ধন্যবাদ-টাদ দিতে হবে না, এরকম উপকার আমি ফ্রিতেই করে থাকি। ভালো কথা ,তুমি কি জানো ইতিমধ‍্যে তুমি বন্দী? লেন্স আর লেখনীর যুগল মিলনে ।সেও ঐ স্বরূপের ফন্দি, বুঝলে!   তুমি সুন্দরবনে ভয় পেয়ো না, ওখানেই আছেন তিনি। আরে না, না রয়াল বেঙ্গল টাইগার-ছুঁচো সরি ইঁদুর মেরে কখনোই হাত গন্ধ করবে না। আর শিবালয় ছেড়ে তেনার‌ও কি আর ভালো লাগছে!আচ্ছা, চলি এবার। ওদিকে আবার আফটার নুন ডিউটি।
হাঃ,হাঃ,হাঃ কি বলছো ? সেটা আবার কি? আর জানার দরকার নেই গো! ঐ যারে কয় দিন-রাত এক করে খাটা এই আর কি!
যাও, যাও যা বললাম করে ফেলো দিকি! বন্ধন-মুক্ত হ‌ও, দেখে আনন্দ তো পাই! 




                                                                                                               অলঙ্করণঃ ফিরোজ আখতার, স্বরূপ চক্রবর্তী






















Monday, July 9, 2018

যখন তখন-ধারাবাহিক -দন্ত্যস্থ (পঞ্চম পর্ব)-স্বরূপ চক্রবর্তী

দন্ত্যস্থ


(পঞ্চম পর্ব তথা অন্তিম পর্ব)

স্বরূপ চক্রবর্তী


সংখ্যা,১৯ (৯ ই জুলাই,২০১৮)


(১৩)


রাত প্রায় এগারোটা,  আজ হলধর বাবুর মনটা বড় চঞ্চলসেই ছেলেটি কোথায় যে গেলআহাবেশ পরিবারটিঠিক যেন শিব দুর্গার পরিবারআজ দোকানের কাজের ভিড়ে ওদের আর খোঁজ করা গেলো নাকালকে একবার লোক পাঠিয়ে দেখব 'খন।

যদি ধানাই পানাই আর একবার আসততা হলে জানা যেত।

 আজকে উনি ঘরের ভেতরেই বসে ছিলেনমাঝারি সাইজের ঘরবড়সড় একটি জানালাএকটি দরজা অন্তঃপুরের দিকে খোলেআর তার উল্টো দিকে বাইরের দরজাযেটা বাইরের দাওয়াতে খোলেএকটি একজনের শোওয়ার উপযুক্ত খাটঘরের মাঝে একটি মার্বেল টপ টেবিলে পুজোর অর্থাৎ গাঁজার সাজ সরঞ্জাম সব সাজানোকিন্তু বেশ বোঝা যায় যে ও বস্তুর ব্যবহার এখনো হয়নি।

তাওরা এলোএসে জানালা দিয়ে উঁকি মারতে লাগলওদের দেখতে পেয়েই হলধর গিয়ে সদর দরজা খুলে ওদের সাদরে আপ্যায়ন করলেন-

এসো এসো ভায়ারাকোথায় ছিলে তোমরা? তোমাদের মা ঠাকুরণ আর ছেলে দুটি ঠিক ঠাক বাড়ি পৌঁছেছেন তোছোট ছেলেটি কোথায় যে ঘুরতে চলে গেলমা ঠাকুরণও দোকান থেকে কিছুই নিয়ে গেলেন না"।

“রোসোরোসোসব বলছি"হাত তুলে হলধর কে থামাল,"এখন আমরা তোমাকে যা বলতে চলেছিতার কথা যেন কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতে না পারেকথা দাও"।

“দিলামবললেন হলধর"।

"তুমি জান আজ যাঁরা তোমার দোকানে এসেছিলেন তাঁরা কে?"

"কেনোতোমরাই তো বললে যে ওনারা হেতাল গঞ্জের জমিদার পরিবারআহাকি সুন্দরঠিক যেন শিব ঠাকুরের সংসার"।

একদম ঠিকওঁরা তাঁরই পরিবার"গম্ভীর গলায় বলল নন্দী।

হা হা করে হেসে উঠলেন হলধর, "অর্থাৎ তোমারা ধানাই পানাই নও নন্দী ভৃঙ্গী"।

"একদম ঠিক!” বলল ওরা।

"এই; এটা কিন্তু বেশী হয়ে যাচ্ছেএই দেখ, আমি কিন্তু এখনো পুজোয় বসিনি"অবিশ্বাস জলধরের গলায়, “কি, কি  প্রমান আছেদেখি!"

"প্রমান?, হুমমআমরা তোমাকে সশরীরে দর্শন দিতে পারব নাতবে..., ," বলে এদিক ওদিকে দেখে পানাই বলল, " ওই লোহার আলমারিতে একটি লাল শালুতে মোড়া বাক্স আছে ঠিক?, যেটা  হরিপদ সরখেল আজ সন্ধ্যায় তোমার কাছে গচ্ছিত রেখে গেছে।

হলধর ভাবলেন ঠিকই তোআজ সন্ধ্যায় হরিপদ দারোগা এসেছিলমাঝে মাঝেই আসেএকটু অন্ধকার হলেআড্ডা দেয়চা খায়আর মুখ বাঁধা থলেবা বাক্স বন্দী কিছু গচ্ছিত রেখে যায়বলেথানার দস্তাবেজআপনি মান্যগণ্য মানুষতাই একটু সামলে রাখুনআবার পরে এসে নিয়েও যায়। হরিপদর সামনেই সেগুলি উনি লোহার আলমারী তে তুলে রাখেন আর দারোগা চাইলে ফেরৎ দিয়ে দেনঅন্যের ব্যাপারে উনি বেশি নাক গলান নাকিন্তু এসব তো এদের জানার কথা নয়কিন্তু তবু সন্দেহ তো যায় নাতাই বলেন ,"এতে কি প্রমান হয়না যে তোমরা চোরআড়ি পেতে আমার বৈঠক খানার ব্যাপার স্যাপার দেখেছ?"

"কি! আমরা চোর! যতবড় মুখনয় তত বড় চোপা!" ধমকে ওঠে ভৃঙ্গী।

ওকে শান্ত করে নন্দী বলে, "আচ্ছাআমরা না হয় উঁকি মেরেছিকিন্তু ওই পোঁটলায় কি আছে তা কি তুমি জান?"

"আমি পরের জিনিস বিনা অনুমতিতে ছুঁই না"

"ঠিক আছেআমরা বলছিওতে কোনো সরকারী জিনিস নেইআছে এক গোছা টাকাআর সোনার গয়না।"

হলধর দরজা বন্ধ করে ট্যাঁক থেকে চাবি নিয়ে আলমারি ও বাক্স টি খুলে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেললেন। টাকা ও একজোড়া বড় সাইজের ঝুমকো কানের দুল আছে বটে।

"ওই টাকা আর গয়না হল ঘুষের জিনিসআর ওটা ও নিয়েছে বড় সায়েব কে দিয়ে নিজের প্রমোশন নেবার জন্য"।

হলধর বাবুর চোখে অবিশ্বাস দেখে ওর বলল "তবে দেখো,"

ওদের দেখে চোখ উল্টে হলধর মূর্ছা গেলেনকারন আর কিছুই নয়ওরা দুজন জমি থেকে প্রায় ছয় ইঞ্চি ওপরে ভেসে রয়েছে







(১৪)


চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে হলধরের  জ্ঞান ফেরানো হোল, সব কিছু বোঝানোর পর হলধর কে উড়িয়ে নিয়ে ওরা থানায় পৌঁছে গেল।

থানায় গিয়ে হলধর নাইট ডিউটির হাবিলদার কে দিয়ে দারোগা কে ডেকে পাঠালেন।

 হলধর মানী লোক, ভবিষ্যতের প্রধান, দারোগা পাশের কোয়ার্টার থেকে চোখ 
কচলাতে কচলাতে থানায় এসে হলধর কে দেখে বসতে বলল।

 নন্দীরা অদৃশ্য অবস্থায় রয়েছে।

"বলুন স্যার, আপনি এত রাতে! কি ব্যাপার?"

হরিপদ সোজাসুজি লক আপের কাছে গিয়ে বললেন,"সরখেল, ওই ছেলেটিকে এক্ষুনি ছেড়ে দাও, ও নির্দোষ, আর তুমি জান যে ও কে? উনি সাক্ষাৎ শিব পুত্র 'গণেশ'"

সরখেল চোখ গুলি গোল্লা পাকিয়ে হলধরের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে বলল, " লোকে বলে আমি ঘুষ খাই, কিন্তু অতি বড় নিন্দুকেও বলবে না, যে, আমি গাঁজা খাই, এত রাতে সময় না নষ্ট করে কাল সকালে একবার আসুন, ঠান্ডা মাথায় কথা বলা যাবে এখন"।

সরখেল তাকে গাঁজা খাওয়ার খোঁটা দিচ্ছে দেখে জ্বলে উঠলেন হলধর পাঁজা

"সরখেল!" হুঙ্কার দিলেন হলধর।

"তোমার সমস্ত কালো কারবার আমি জানি, আমার কাছে অকাট্য প্রমান আছে,

ওঁকে ভালোয় ভালোয় ছাড়ো, না হলে সদরে রিপোর্ট যাবে, তাতে ফল ভালো হবেনা।
তখন তোমার ট্রান্সফার হবে সুন্দরবনের একেবারে ভেতরে, ওখানে তুমি ঘুষ খাবেনা, বাঘেরা তোমায় চিবিয়ে খাবে।"

সরখেলও হার মানার পাত্র নয়, " ও যদি দেবতা হবে তাহলে দৈব শক্তির সাহায্যে নিজেই বেরিয়ে আসুক।"

"তোমার পাপ চোখে ওঁদের দৈব শক্তি দেখা সম্ভব নয়","তবে...প্রমান চাও

আচ্ছা..", “তোমার একটি পুরোনো কোমরের ব্যাথা আছে না?"

"আছেই তো, উঁ হুঁ হুঁ, সোজা হয়ে বসতেও পারিনা", সরখেল ডুকরে উঠল।

ওই গরাদ ধরে এদিকে পেছন ফিরে একবার দাঁড়াও তো।"

মজা দেখতে সরখেল তাই করল।

"এইবার। বাবারা, আপনারা আছেন তো? যেমন কথা হয়ে ছিল.."


দুইজোড়া অদৃশ্য পায়ের ভীষণ জোরালো লাথি এসে পড়ল সরখেলের পশ্চাদ দেশে, একটা ভীষণ মট করে শব্দ হল আর সরখেল মুখ থুবড়ে পপাত চ।

হতবাক সরখেল বলল, " কে ? কে?"

"সে কথা ছাড়ো,” হলধর আর হাবিলদার মিলে সরখেল কে টেনে তুললেন।

বল, তোমার, কোমরের ব্যাথা আছে না গেছে?"

অদৃশ্য লাথি খেয়ে আর সদরে ঘুষের রিপোর্ট হবার শাসানিতে কাজ হল, সরখেল তালা খুলে দিয়ে বলল, বাবা গণেশ, আমরা পাপী তাপী মানুষ, মর্ত্যে এসেছেন ঠিক আছে, কিন্তু পরের বার দয়া করে এদিক পানে আসবেন না, আর আসলেও অমুল্য দাঁতগুলো বাড়ীতেই খুলে রেখে আসবেন, না হলে আমাদের মত গরীবদের বাঁচা দায় হবে।
(১৫)

ভোর হয়ে আসছে, মৃদু মন্দ শীতল হাওয়া ভেসে আসছে সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে।

থানার বাইরে এসে হলধর হাতজোড় করে গণেশ কে বললেন," বাবা, এত দূর যখন এসেছেন, তখন দুটি দিন আমার বাড়িতে অতিথি হয়ে আসুন, আমি আপনার পরিচয় কাউকে দেবোনা।"

স্মিত হেসে গণেশ বলল, " কথা দিচ্ছি, আসছে পয়লা বৈশাখ হাল খাতার দিনে তোমার কাপড়ের দোকানে আমি নিজে এসে তোমার পূজো গ্রহণ করব"।

এই বলে গণেশ, নন্দী-ভৃঙ্গী ধীরে ধীরে বাতাসে মিলিয়ে গেল।

আর গণেশের ইঁদুর? সে এক অন্য গল্প , তোমাদের শোনাবো অন্য কোন সময়।।


Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান