ভালোবাসায় ভরপুর ভোলেবাবা- কৈলাশে
কৈলাস পর্বতে
বরুণ দেব কেবলি চোখ খুলে চাইছেন। এদিকে পারো,মানে পার্বতি
তার আজ দুচোখে ঘুম নেই।
পারো'কে অস্থির লাগছে দেখে বরুণ ব্যাপার বুঝতে পেরে সতর্ক করে দিলেন।
“পারো আজ কিছু তেই শিবা, কে একলা ছাড়বি নে”।
“সে তো জানি, অন্যবার হলে
আলাদা কথা, এবার শিবরাত্রি ভ্যালেনটাইন একসাথে। কচি কচি
মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকবে হাঁ করে। আমার কথা ভুলেই যাবে আজ”।
“না না যেভাবেই হোক, ওকে মর্তে নিয়ে পার্কে ঘুরে আসবি”।
“দেখি কালী'কে ফোন করি। ওর
আজ মর্তে পূজা আছে”।
ওদিকে শিবার
আনন্দ ধরেনা।
যেহেতু
ভালোবাসার দিন প্রেমিক প্রেমিকা জুটি জল ঢালতে এলে ,একটা গোলাপ ফুলের পাপড়ি জুটলে জুটতে ও পারে।
সবাই মাথায়
ধুতুরা ফুল দেয়, গোলাপ দেয়না কেউ। বড় শখ একটা গোলাপ ফুলের।
এর ই মধ্যে
পারোর চিল চিৎকার।
“এই যে মিনসে গাঁজা সেবন করলে হবে না, আমাকে নিয়ে মর্তে সারা দিন টোটো'তে করে ঘুরে
বেড়াতে হবে।ডাচ রক্ত গোলাপ কিনে দিতে হবে”।
“সব্বোনাশ পারো, তুমি জানো এই বসন্তে -ভ্যালেনটাইনে
ডাচ গোলাপ ফুলের দাম কত চড়া ! আমি তোমায়
বড়জোর ল্যাভেনডার ধুতুরা ফুল দিতে পারি।
দোকানদার ঝোপবুঝে কোপ মারছে বুঝলে।রাতারাতি
দশ টাকার একটি গোলাপ পঞ্চাশ টাকা য় বিকোচ্ছে। খদ্দের বুঝে দান মারছে।
ভালোবাসা কি আর
আগের মত সুন্দর আছে। এখন প্রেমিক প্রেমিকা কে যত দামী ডাচ গোলাপে ঢেকে দিতে পারবে, সেই প্রেমিক তত ডাচম্যান,
সবথেকে দামী।
“তুমি তো হাড় কিপটে, এখনো ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড তো নেই ই নিদেনপক্ষে পেটিএম পর্যন্ত
করলে না”, “আমার বান্ধবী দের বরের সবার আছে”।
আহা , মর্তে পূজা
নিয়ে শপিং মল থেকে কত্ত সুন্দর সুন্দর শপিং করে।
“আঃহা,পারো তোমাকে গোলাপ দিতে পারিনি তো কি,আমাদের প্রেম
সারা কৈলাস পর্বতে এমনকি মর্তবাসীরা সবাই জানে। তাদের মুখে মুখে ফেরে দেখোনা , সুন্দর স্বামী স্ত্রী দেখলেই বলে - দেখো দেখো শিব-পার্বতীর জুটি যাচ্ছে
দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়”।
“পারো প্রেম ভালোবাসা দামী উপহার দিয়ে ধরে
রাখা যায় না। এটা অনুভূতি র বিষয় দেখনদারি নয় বরং উপলব্ধি করতে হয়, আমি তোমায় এমনি তেই প্রচন্ড ভালবাসি”।
“কোন নির্দিষ্ট দিন তোমার জন্য নয়”।
শিবা দেখছে
পারোর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে-আপ্রান বোঝাতে চেষ্টা করছে।
সারা বছর ছাই
মাটি মেখে খেটে , পূজা পেয়ে যা ইনকাম সঙ্গের পোষ্য গুলো র
আবদার মেটাতে পারোর জন্য কিছু করতে পারে নি।
ওদিকে শিবার
আনন্দ ধরে না, পারো লজ্জায় লাল হয়ে শিবার বুকে মুখ গুজে
দিয়ে আছে-শিবা তখন উপর থেকে দেখছে-
এক ফুল দোকানী
পস্রা সাজিয়ে বসেছে পাশাপাশি ধুতুরা-গোলাপ ফুল
নিয়ে।
ধুতুরা দশটাকা
দিয়ে দুই টি,
গোলাপ একটি
পঁচিশে, ডাচ গোলাপ একটি পঞ্চাশ।
একদিনে দুই পর্ব- ভালো স্বামী পাবার/ হবার আশায় উপোসী মেয়ে বৌরা, শিবের মাথায় জল ঢালবে বলে,
দেদার ধুতুরা
ফুল কিনছে।
গোলাপ গুলোতে
দোকানী জল ছিটিয়ে তাজা রাখার চেষ্টা করছে-
সত্যি কারের
একটি ভালো মনের ভালোবাসার খাঁটি মানুষের অপেক্ষায়!
কৈলাস পর্বতে
বসে শিবা আনন্দে চোখ বোঁজে।
মনে মনে ভাবে
বর্ণহীন গন্ধ হীন ধুতুরা তবুও দেবতার জন্য, কিন্তু সুন্দরী
সুগন্ধি ফুলের রানি
গোলাপ তার
মুগ্ধতার সৌন্দর্যের মর্যাদা তাকে কেউকি তাকে আদৌও দেয়?প্রশ্নটা থেকে যায়।