অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Showing posts with label নব বরষে নবীন হরষে. Show all posts
Showing posts with label নব বরষে নবীন হরষে. Show all posts

Friday, May 6, 2022

গল্প- বৈঠকি- ব্রাত্য জীবন- মিঠুন মুখার্জী

 

গল্প- বৈঠকি

ব্রাত্য জীবন

মিঠুন মুখার্জী


Image Courtesy : Google Images

 

সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মালেই সবার কপালে সুখ থাকে না। ছয় ষষ্ঠীতে ভাগ্যদেবতা যা লেখার লিখে দেয়, তাকে কেউ খন্ডন করতে পারে না। কলকাতা শহরের মস্তবড় এক ব্যবসায়ী দীপঙ্কর রায়ের দুই ছেলের পরে এক মেয়ে। ছেলে পছন্দ হলেও মেয়ে সন্তান তার একদম পছন্দ নয়। বছর পাঁচেক আগে তাঁর সহধর্মিনী আরও এক সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু সেই সন্তানটি ছিল তৃতীয় লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। বাবা এই খবর পাওয়ার পর পন করেন এই সন্তানের মুখ সে জীবনে দেখবে না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন অনাথ আশ্রমে এই সন্তানটিকে চুপিচুপি দিয়ে আসবেন। কথায় যা, কাজেও তাই। সকলের অমত থাকা সত্বেও মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন নিয়ে যাওয়া হয়। সন্তান যেমনই হোক মায়ের কাছে সে  সন্তানই হয়। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা একজন মা ছাড়া কেউ বুঝতে পারেন না।

 

              আজ সেই তৃতীয় লিঙ্গের সন্তানটি পাঁচ বছরে পড়েছে। অনাথ ছেলেমেয়েদের মাঝখানে পিতা-মাতা থাকা সত্ত্বেও অনাথের মতো মানুষ হতে হয় তাকে। এই অপরাধ কার? এদিকে অনাথ আশ্রমে তার নাম হয় বৃন্দাবনী। তার দুই দাদা যথাক্রমে অরুময় ও রাধেময়, এবং দিদির নাম শ্যামা। অরুময় ও রাধেময় যমজ হওয়ায় তারা এখন একাদশ শ্রেণীতে পড়ে এবং শ্যামা নবম শ্রেণীতে পড়ে। ছেলে দুটি দীপঙ্কর বাবুর গর্বের হলেও শ্যামাকে সেভাবে ভালোবাসেন না। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে মেয়েরা এখনো যে ব্রাত্য সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছোট সন্তানের শোকে তাদের মা অসুস্থ দীর্ঘদিন। তাই তাদের দেখাশোনা করার জন্য দুজন কাজের লোক রেখেছেন দীপঙ্কর বাবু। এদিকে কোনরকমে অবহেলায় বেড়ে উঠতে থাকে বৃন্দাবনী।

 

            দশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। দীপঙ্কর বাবুর বয়স হওয়ায় তার কাজকর্ম অরুময় ও রাধেময় দেখাশোনা করতে শুরু করেছেন। এক উচ্চবংশের ব্যবসায়ীর ছেলের সাথে শ্যামার বিয়ে দিয়েছেন তিনি। মাঝেমধ্যে ছেলেদের দিয়ে খোঁজখবর নেন তিনি। পিতার এহেন আচরন শ্যামার চোখে বুক ফেটে জল এনে দেয়। হঠাৎ অসুস্থ কিছু গুরুতর হওয়ায় শ্যামার মা পরলোক গমন করেন। তার কাজ সম্পন্ন করে দীপঙ্কর বাবু তার ছেলেদের বলেন-“তোমাদের মার চলে যাওয়ায় আমার মনের শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে, আমি কিছুদিনের জন্য হরিদ্বারে তীর্থ করতে যাব। তোমরা বড় হয়েছ, ব্যবসা সামলানোর ক্ষমতা হয়েছে, আমার আর চিন্তা নেই। তোমাদের কাছে ছেড়ে দিয়ে আমি তীর্থে যেতে চাই”। ছেলেরা তাদের পিতাকে জানায় তারা পিতার বিশ্বাসের অমর্যাদা করবেন না।

 

          এদিকে বৃন্দাবনী এখন পনেরো বছরের যুবতী। তার যৌবন টলমল করছে বটে, কিন্তু সভ্য সমাজের থেকে সে অবহেলিত। নিজের জীবনের দুঃখ চিরসঙ্গী জেনেও নিজের মতো করে বাঁচার চেষ্টা করে সে। কেউ কেউ তাকে মাসি বলে ব্যঙ্গ করে। তাতে প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হতো বৃন্দাবনীর। কিন্তু যত দিন যায় ততই গা সওয়া  হয়ে যায় তার। হিজড়ে মাসিদের দলে নাম লেখায় সে।  পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে যা পাওয়া যায় তাতে তার ভাগে মাসে কুড়ি হাজার টাকার বেশি পড়ে। খাওয়া-পরার অভাব না থাকলেও জীবনের অধিকাংশ সুখ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মাঝে মাঝে খুব কষ্ট পায় সে। তার দলের বদন হিজড়ে, রূপসী হিজড়ে, ফাল্গুনী হিজড়ে তাকে খুব ভালবাসে। তার থেকে সকলেই বড় হওয়ায় তাকে স্নেহ করে সকলে।

 

         বৃন্দাবনী জন্মাবার পর যেহেতু তাকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে আসা হয়েছিল, সেহেতু নিজের বংশ পরিচয় কিছুই জানে না বৃন্দাবনী। পিতা-মাতার অভাব মাঝেমধ্যে অনুভব করে, কিন্তু অন্য মাসিরা তার সে অভাব ভুলিয়ে দেয়। একমাত্র শ্যামা ছোটবেলা থেকেই বৃন্দাবনীর খোঁজ নিত। যখন তার পিতা বৃন্দাবনীকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে এসেছিল, তখন শ্যামা পিছন পিছন গিয়ে সেটি দেখে ফেলেছিল। তাই বৃন্দাবনীকে একমাত্র শ্যামায় চেনে। মাসিদের সমাজে আসার পর শ্যামা তার স্বামীকে নিয়ে দুবার বৃন্দাবনীকে দেখতে এসেছিল। নিজের পরিচয় দেয় নি কষ্ট পাবে বলে। স্বামীকে বিয়ের পরে সব জানিয়েছিল শ্যামা।

 

       এদিকে দীপঙ্কর বাবু হরিদ্বারে তীর্থ করতে যাওয়ার সুযোগে অরুময় ও রাধেময় নিজেদের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করেন, এবং বোনদের ফাঁকি দিয়ে সম্পত্তি নিজেদের নামে করিয়ে নেন। এখানে বলার প্রয়োজন, দীপঙ্কর বাবু অশিক্ষিত থাকায়, একদিন খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে সরকারি স্ট্যাম্প পেপারে টিপ সই দিয়ে নিয়েছিলেন অরুময় ও রাধেময়। দীপঙ্কর রায় বাড়ি ফেরার পর সবকিছু জেনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে প্রচুর রক্ত বেরিয়ে যায়। খবর পেয়ে শ্যামা ও তার স্বামী আসেন তাদের বাড়িতে। এদিকে পাড়ার লোকে দীপঙ্কর বাবুকে হসপিটালে ভর্তি করেন। প্রচুর রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার ফলে 'ও নেগেটিভ' রক্তের প্রয়োজন হয়। শ্যামার ও তার স্বামীর রক্ত 'ও নেগেটিভ' না হওয়ায় খুব চিন্তায় পড়ে যায় তারা। ডাক্তার বলেছেন-এক ঘণ্টার মধ্যে রক্ত না দিলে সে তার পিতাকে বাঁচাতে পারবে না।এই কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে শ্যামা।

 

               হঠাৎ করে শ্যামার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। সত্বর হিজড়ে মাসিদের পল্লীতে গিয়ে বৃন্দাবনীর সঙ্গে দেখা করে সব বৃত্তান্ত খুলে বলল সে। বৃন্দাবনীর প্রথম পিতার প্রতি রাগ হয়েছিল, কিন্তু পরক্ষণেই ভেবে দেখল পিতাকে বাঁচাতে না পারলে কোনদিন সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।

 

               দীপঙ্কর বাবুর অজান্তে বৃন্দাবনীর রক্তে সেদিনের মত মরতে মরতে বেঁচে গেলেন তিনি। যখন জ্ঞান ফিরল তখন তার পায়ের কাছে দাঁড়ানো বৃন্দাবনী, শ্যামা ও শ্যামার স্বামী। শ্যামা তার পিতাকে বৃন্দাবনী সম্পর্কে সব খোলাখুলি বলে। এরপর দীপঙ্কর বাবু লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, বৃন্দাবনীর ওপর তিনি এত বড় অন্যায় করেছেন, সেই আজ তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছে। তাঁর এই অসময়ে ছেলেরা একবারের জন্যও আসেন নি। বৃন্দাবনী চলে যাওয়ার সময় পিতাকে উদ্দেশ্য করে সে শ্যামাকে বলে- তুমি বললে তাই আমি এখানে এলাম, নতুবা আমি কখনো এখানে আসতাম না। সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে, সে সন্তানই হয়। বাবা-মার প্রতি কর্তব্যই প্রমান দেয় সে সুসন্তান, না কুসন্তান। মেয়েরা পারে না এমন কিছু নেই। আর আমার মত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও তো পিতা-মাতাই জন্ম দেয়। তাহলে ঈশ্বরের সৃষ্ট সেই সন্তানের কি দোষ বল তো দিদি?” আমরাও তো মানুষ। এই কথা বলতে বলতে বৃন্দাবনীর চোখের কোনে জল দেখা যায়। বৃন্দাবনীর পিতা সকলের সামনে বৃন্দাবনীর কাছে তাঁর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বৃন্দাবনী তার পিতাকে ক্ষমা করেছিল কিনা জানি না, তবে তাঁর প্রতি অভিমান করে নৈশব্দ্যে হাসপাতাল থেকে হিজড়ে পল্লীর দিকে পা বাড়ায়।

| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |



গল্প- বৈঠকি -ছোঁ মেরে ভোঁ - ইন্দ্রাণী দত্ত

গল্প- বৈঠকি

ছোঁ মেরে ভোঁ

ইন্দ্রাণী দত্ত

Collage-Swarup Chakraborty


আরে ধর,ধর ! লম্পট, চোরটাকে কে আছিস একটু ধর বলে হুড়মুড়িয়ে কোন মতে ভুঁড়ি আগলে ভরা বাজারের মধ্যে দিয়ে কিছুটা দৌড়ে গেলেন বিশ্বলোচন বাবু ! 

রঘুনাথ পুরের ভূগোলের শিক্ষক বিশ্বলোচনবাবু মানুষটা মন্দ নয়,তবে বেশ কড়া গোছের, একগুঁয়ে, অন্যের সিদ্ধান্ত তার কাছে নিতান্তই মূল্যহীন ,মাথা ভর্তি টাক জ্বলজ্বল করছে সদর্পে, পরনে ধুতি পাঞ্জাবী, চোখে গোল গোল কালো মোটা ফ্রেমের চশমা ৷ এরকম একটা রাশভারী লোক এ চত্বরে খুব একটা চোখে পড়ে না ৷ তবে এ সকল বিবরণ শুধু বাইরের মানুষদের কাছে ,বাড়ির ভিতরের চিত্রটি বেমালুম উল্টো ! ঘড়ির কাঁটা সকাল ন-টার ঘরে গেলেই প্রতিদিন হাঁকডাক পড়ে যায় বিশ্ববাবুর বাড়ি,

 গিন্নি,অ গিন্নি আসনটা বিছালে নাকি?

গিন্নি ,অ গিন্নি জলটা  দিলে নাকি ?

গিন্নি শুনছো পোস্ত বাটার ওপর একটা সবুজ দেখে কাঁচা লঙ্কা গুঁজে দিও তো, চিবিয়ে, চিবিয়ে খাবো একটু !

ও গিন্নি মাছের বড়াটা একটু বেশি তেল দিয়ে ভাজতে ভুলো না যেন !

দশবার হাঁক দিলে একবার সাড়া দেন বাড়ির কর্ত্রী, আসলে স্ত্রী লোকের হাতে যে ক্ষমতা থাকে তার সম্পূর্ণ প্রয়োগ করে নিজের দম্ভ প্রকাশ করতে মেয়েমানুষরা ভালোই জানে বোধকরি ৷ ঘড়ির কাঁটা ঠিক নটা পনেরোর ঘরে গেলেই আর একটা আওয়াজ শোনা যায় যথারীতি,

ভাত পড়েছে পাতে, খেতে এসো, জলের বোতল নিয়ে এসো সঙ্গে করে, গেলাস দিচ্ছি !

বিশ্ববাবু এই সময়টার জন্যই ওঁৎ পেতে বসে থাকেন, কখন ডাক পড়বে, ব্যাস আয়েস করে দুটো খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পড়া ইস্কুলের উদ্দেশ্যে, আর যেটা বাড়িতে হয় না, না মানে ইস্কুলে গিয়ে যে হম্বিতম্বি দেখান তা তো আর বাড়িতে চলে না ! বউ এর কাছে তিনি অসম্ভব শান্ত নিরীহ গোবেচারা, ওই দিকে ইস্কুলে রঘুনাথ পুরের ভূগোলের সহকারী শিক্ষক বলে কথা ! সেখানে তো আর বউ থাকে না যে মেপে মেপে কথা বলতে হবে ! সেখানে কথা হয় ম্যাপে ম্যাপে, হিমালয়ের উৎস সন্ধান থেকে শুরু করে গুজরাটের কচ্ছের রণে গিয়ে থামেন, গিন্নি সেখানে থাকেন না, থাকে নিজের একটা আস্ত চেয়ার, দুপুরের মালপোয়া ভর্তি টিফিন বক্স, আহা সে যে কি শান্তি ! আর কিছু অনুগত ছাত্রছাত্রী,বাকি কিছু দুষ্টু ছেলেমেয়েও আছে তাদের অবশ্য তিনি হিসেবে ধরেন না বললেই চলে  ৷

সেদিন হয়েছে টা কি, ইস্কুলে তখন ছুটির ঘন্টা বাজলো বলে, বাইরে নেমেছে ঝিরঝির বৃষ্টি! ক্লাস নিয়ে বিশ্ববাবু স্টাফরুমে এসে বসেছেন, সবেমাত্র গল্প জমে উঠেছে, আজকের টপিক ছিল অলিম্পিকে  কি বাঙালির তাস খেলাটা ইনকুলুড করা যায় না? হট টপিক বটে! বাঙালি  তাস খেলায় কতটা এগিয়ে তা কি বিশ্ব দরবারে প্রকাশ পাবে না! সহকারী কম্পিউটার শিক্ষক পটলাবাবু তো বলেই ফেললেন, দেশ এগোচ্ছে বিশ্বদা, সব কিছু ডিজিটাল, অলিম্পিক এ ডিজিটাল গেম কেন রাখা হবে না বলুন তো প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে? বৃহত্তর আন্দোলন করতে হলে তাও করবো আমরা কিন্তু সুযোগ সবাইকেই দিতে হবে কি বলেন? পাশ দিয়ে পার্শ্বশিক্ষক দিপ্তবাবু তো বলেই উঠলেন কথাটা নেহাত  মন্দ বলেন নি। জানেন ছেলেটা আমার বাড়ি বসে এ কদিন  অনলাইন গেম এ বেশ ইমপ্রুভ করেছে, পাবজি ,ফ্রী ফায়ারে ছেলে আমার সিদ্ধহস্ত। ব্যাস কথার মাঝেই সেই একটা মধুর শব্দ, বিশ্ব বাবু পকেট দিয়ে সযত্নে  আনস্মার্ট ফোনটা বার করে দেখলেন, সেই বহু প্রতীক্ষিত টুং টাং মেসেজ আসার শব্দ, মাসের পয়লা তারিখ, মাইনে এসে গেছে , এবার আর আজকের হট টপিক আলোচনায় বিশ্ব বাবুকে  পায় কে? দেরি না করে  ছাতা হাতে বেড়িয়ে পড়লেন খোশমেজাজে।

হ্যালো,হ্যালো ,শুনছো গিন্নি

মাইনে এসে গেছে,

বৃষ্টি হচ্ছে,

খিচুড়ি বসাও,

বড় সাইজের এক ছাইয়া করে কাটা গঙ্গার  ইলিশ নিয়ে যাচ্ছি,

বুঝলে ? হ্যালো

শুনতে পাচ্ছো ?

ধুর কি বলে ওপাশ দিয়ে বুঝিও না !

বেশ, বাজার এসে গেছি ফোন রাখলাম গো বলে নিজের থেকেই ধুম করে ফোনটা কেটে দিলেন ওদিকের উত্তরের অপেক্ষা না করেই  ৷

বিশ্ব বাবু বগলে ছাতাটা খুঁজে, বাজারে ঢুকেই হাতে একটা ইলিশ তুলে পেটটা বেশ টেপা টেপি করছেন,

ভাই ভালো হবে তো ?

এমতাবস্থায় মাছওয়ালা বেশ গম্ভীর ভাবেই একটু হাল্লা করেই রেগে বললেন দাদা পোয়াতি আছে, বেশি টিপবেন না, এখানেই ডেলিভারী হয়ে যাবে  !

বিশ্ববাবু আবার মাঝে মাঝে রসিকতা ভালোই বাসেন, তিনিও ওমনি বলে উঠলেন বলো কি  ভাই, তা তোমার ওই পোয়াতি গঙ্গা স্নান করে এসেছে তো ?

না দাদা ওটা পরের বার করার প্লান আছে, এইবার পদ্মা ঘুরে এসেছে ৷

এদিকে বৃষ্টির পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই রশিকতায় রাশ টেনে হাজার টাকা কেজি দরের ইলিশটা নেবেন বলে মনস্থির করে বললেন,

তাড়াতাড়ি কেটে দেও ভায়া, ছাতায় আর বৃষ্টি মানছে না যে তারপর পকেট থেকে কড়কড়ি শেষ দু হাজার টাকার নোটটা হাতে নিয়ে এগিয়ে দিতে যাবেন, অমনি এ কি অঘটন - মুখ বাঁধা, লম্বামত একটা বছর আঠাশের যুবক  হঠাৎ কোথা থেকে এসে ছোঁ মেরে চিলের মতো টাকাটা নিয়ে ভোঁ, দে দৌড় !

আরে ধর, ধর, আমার টাকা, ইলিশের টাকা ওটা, ধর, ধর।

মাছওয়ালা  মাছ বঁটি উঠিয়ে বেশ খানিকটা তেড়ে গেলো ছেলেটার পিছনে কিন্তু মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে অন্ধকারে মিশে গেল ছেলেটা, ঠিক যেন এরকমি এক অন্ধকার জীবনে।

বেশ কিছু বাজার করতে আসা মানুষজন ততক্ষনে জড়ো হয়ে গেছে বিশ্ব বাবুকে ঘিরে, বিশ্ববাবু এক নিঃশ্বাসে বাজারের মাঝখানে বসে লম্পট, চোর, পকেটমার যা নয় তাই বলে চিৎকার করে চলেছেন, সবাই প্রায় হতবাক ছিনতাইয়ের কান্ড দেখে, কেউ কেউ আবার খুব সাবধানে নিজের পকেটের মানিব্যাগটি একবার দেখে নিলো,

ধীরে ধীরে ভিড় কমে এলো, বিশ্ব বাবুও মুখ ভার করে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন 

আজ আর সাধের পোয়াতি ইলিশ দিয়ে খিচুড়ি খাওয়া হলো না, অগত্যা-

গিন্নি অ গিন্নি,

একটু ঝিরি ঝিরি আলু ভাজবে গো !

কটমট চোখে বিশ্ববাবুর গিন্নি বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে খিচুড়ি আর ঝিরি ঝিরি আলু ভাজার থালাটা এগিয়ে দিলেন বিশ্ব বাবুর দিকে,


রাত যত গভীর হচ্ছে, বিশ্ব বাবু একবার এপাশ, একবার ওপাশ,

হ্যাগো শুনছো গিন্নি, শুয়ে পড়লে ?

কই গো, মাছগুলো পোয়াতি ছিলো জানো,

গিন্নি, শুয়ে পড়লে !

গিন্নীর সাড়া না পেয়ে বিশ্ববাবু  ইলিশের মায়া ত্যাগ করে একপাশ ঘুরে শুয়ে পড়লেন ৷

পরের দিন সকালে আবার সেই চেনা দৃশ্য,


ঘড়ির কাঁটা নয়ের কাছাকাছি...

গিন্নি, অ গিন্নি আসনটা বিছালে নাকি ?

গিন্নি, অ গিন্নি জলটা  দিলে নাকি ?

গিন্নি শুনছো ডাল বাটার ওপর একটা সবুজ সরু দেখে কাঁচা লঙ্কা গুঁজে দিও, চিবিয়ে চিবিয়ে খাবো।

ও গিন্নি মাছের বড়াটায় আজ বেসন দিও না যেন...

এরপর এই চেনা দৃশ্য মোড়া জীবন কেটে গেছে প্রায় একমাস, আজ আকাশের মুখ সকাল দিয়েই ভার, তার উপরে বাঙালির রবিবার, ভরপেট খেয়ে সদর দরজায় তালা না দিয়েই দুপুরে ঘুমিয়ে পড়েছেন বিশ্ব বাবু, যাকে বলে ভাতঘুম! বয়স বাড়ছে, শরীর আজকাল আয়েস চাইছে বেশি, বৃষ্টি শুরু হয়েছে তুমুল, গাড়ি বারান্দায় বসে এই সময়টা বাড়ির কর্ত্রী “সঞ্চয়িতা” পড়তে বড্ড ভালোবাসেন, তাঁর আবার ভাতঘুমে সময় অপচয় মোটেই পছন্দ নয় !

হঠাৎ সন্ধ্যার নিভু আলোয় “সঞ্চয়িতার” নেশা কাটতে না কাটতেই বিশ্বলোচনবাবুর স্ত্রী দেখলেন একটি ছেলে কাকভেজা অবস্থায় ঘরের সামনে কিছু একটা রেখে সদর দরজা দিয়ে চলে যাচ্ছে বাইরে..

শুনছেন !

কোথায় যাচ্ছেন? কে আপনি? থামুন বলছি, সেকেন্ডের মধ্যেই ভ্যানিশ, তড়িঘড়ি করে বিশ্বলোচনবাবুর  গিন্নি গেলেন বিশ্ববাবুকে ডাকতে,

এই যে শুনছো ?

হুমম!

কি হলো শুনছো?

বলো শুনছি

কেউ একজন গেটের কাছে কিছু রেখে চলে গেল এইমাত্র,

কি! বলে লাফিয়ে উঠলেন বিছানা ছেড়ে বিশ্ববাবু, মানে তুমি তাকে আটকালে না, কি সর্বনাশ! কি সর্বনাশ! আমার তো শত্রুর অভাব নেই গিন্নি, বিস্ফোরক নাকি, কি হবে এবার!

আরে না, না বৃষ্টিতে বিস্ফোরক থাকলে  ভিজে গেছে তো, ভয় নেই, এখন চলো শিগগির !

হুম কথাটা খারাপ বলোনি, আচ্ছা চলো দেখি গিয়ে,


বাড়ির দরজার সামনে একটা ভারী প্যাকেট, ওজন নেহাত কম নয়,সঙ্গে একটা এনভেলপ প্লাস্টিকে মোড়া যাতে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট না হয়।

বিশ্ববাবু এনভেলপ ছিঁড়ে একটি সাদা কাগজে নীল কালি দিয়ে লেখা চিটিটি পড়তে শুরু করলেন এক নিঃশ্বাসে-

প্রণাম নেবেন মাস্টারমশাই,

আমি আপনার এক অধম, অসভ্য, লম্পট ছাত্র ৷

আজ থেকে সতেরো বছর আগে আমাদের ভূগোলের ক্লাস নিতে নিতে আপনি ভারতের বিস্তার পড়াতে গিয়ে আমাদের জীবনে মায়ের বিস্তার যে সবটা জুড়ে  খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে ছিলেন৷ আর বলেছিলেন নিজের  মা আর দেশ মায়ের জন্য জীবন দেওয়াটাও গর্বের, আনন্দের, এই কাজে কখনো যেন পিছপা না হই।

এই সব কথার অর্থ এখন অবধি বিশ্বলোচন বাবুর বোধগম্য হলো না , কিছুক্ষণ থমকে

রইলেন তারপর আবার বুক ভর্তি বায়ু নিয়ে পুনরায় চিঠির বাকি অংশ পড়তে শুরু করলেন,

সেদিন মায়ের শরীরটা খুব খারাপ হয়ে পড়েছিলো, আমার মা দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত, ডাক্তারবাবুর টাকাটা মিটিয়ে দেওয়ার পর জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন কেনার টাকা ছিলো না, প্রায় হাজার দুয়েক টাকা, বাজারে  মাল বইয়ে দেবো বলে অনেককে অনুরোধ করলাম তার বিনিময়ে যদি কিছু টাকা দেয় কিন্তু সেদিন কেউ আমাকে সাহায্য করলো না জানেন, মায়ের সময়ও কমে আসছিলো আমি বুঝতে পারছিলাম, আচমকাই আপনার হাতের টাকাটা,

তারপর চিঠির কিছু অংশ ফাঁকা,

 



পরের অংশে লেখা, আমি মায়ের জন্য জীবন দিই নি কিন্তু ছিনতাই করতে দুবার ভাবিনি, ক্ষমা করতে পারবেন না আপনার এই চোর, ছিনতাইবাজ ছাত্রটিকে? জানেন মাস্টারমশাই আপনার কথা সেদিন রেখাপাত করেছিলো জীবনে, মাকে বাঁচাতে তাই ছিনতাই করাটা আমার কাছে কঠিন ছিলো না একদম৷ কিন্তু  আপনার সব কথা সত্যি নয়, একদিন পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন না, এরকম রেজাল্ট করলে একদিন খুব বড় চাকরি করবি, আজ দেখুন না আমার দেওয়া শেষ ইন্টারভিউতে চাওয়া দু লাখ টাকা আমি দিতে পারিনি, আমার উচ্চ শিক্ষার সব ডিগ্রি এখন একটা সামান্য কাগজ, বাবা নেই, জানিনা মা এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও আর কতদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবো ,পারলে ক্ষমা করবেন আমাকে, এই একমাসে আপনার দু হাজার টাকা আমি জোগাড় করতে পেরেছি  দিনমুজুর খেটে, এটা ছিনতাইয়ের নয় কারন মা এখন একটু ভালো আছে সেদিনের ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর, সেদিন আপনার যে টাকাটি ছিনতাই করে ধার নিয়েছিলাম, পরে আপনাকে চিনতেও পারি মাস্টামশাই, টাকাটি আজ দিয়ে গেলাম আর সাথে একটা ইলিশ মাছ, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, আপনি  এসব কিছু নিলে আমার একটু হলেও প্রায়শ্চিত্ত হবে ৷ জানি, আপনার মতো অত বড়ো ইলিশ হয়তো আমি কিনতে পারিনি, তবুও স্বাদ একটু কম হলেও আপনি যদি খান আমার বুকের ভিতর দিয়ে একটা পাথর চাপা কষ্ট একটু হলেও কমবে৷ ভালো থাকবেন মাস্টারমশাই ! আর হ্যাঁ মাস্টারমশাই আপনারা পারেন না বিদ্যালয়ে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষায় জোর দিতে? তাতে অন্তত আমরা গরীব ঘরের ছেলেরা কিছু করে খাবারটুকু  জোগাড় করতে পারবো, কোর্স করার টাকা সবার যে থাকে না !

ইতি

আপনার গর্বিত চোর ছাত্র

ইলিশটি গিন্নির হাতে তুলে দিয়ে ততক্ষনে বিশ্ব বাবুর চোখ ছলছল করে উঠেছে তারপর একগাল হাসি নিয়ে বিড়বিড় করে বললেন পাগল ছেলে ! এই ইলিশের স্বাদ সেদিনের থেকে তিনগুন বেশি হবে ,তুই বুঝবি না !

তারপর...

তারপর...

সদর দরজায় তালা দিতে দিতে শোনা গেল সকালের সেই চেনা হাঁক ডাক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায়-


গিন্নি,অ গিন্নি বারোটা বাজাবে নাকি !

গিন্নিঅ গিন্নি কড়া করে ভাজবে আমার পিসটা ,

গিন্নি শুনছো সেদিনের মতো খিচুড়িতে তেজ পাতাটা দিতে ভুলো না যেন,

শুনছো তো না কিইইই...!

| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |


ভ্রমণ কাহিনী -পূর্বঘাটের ইয়ারকাদ -সুমি দত্তগুপ্ত

 

ভ্রমণ কাহিনী

পূর্বঘাটের ইয়ারকাদ

সুমি দত্তগুপ্ত

(সঙ্গের ছবিগুলি লেখিকার নিজের তোলা)



 

অনেক বছরের আসা যাওয়া তামিলনাড়ু রাজ্যে। আমার শহরের মতোই ঘুরে বেড়াই তামিলনাড়ুর বিভিন্ন শহরে। গতানুগতিক চেনা গতিপথ রামেশ্বরম, কন্যাকুমারিকা, পন্ডিচেরি, কাঞ্চিপুরম, মহাবলীপুরম ঘুরেও শেষ হয় নি আমার এই রাজ্য পরিক্রমা, ছুটে গিয়েছি ত্রিচি, থানজাভুর, য়েলাগিরি, কোটাগিরি, তুতিকোরিন আরও কতো জায়গায়। দ্রাবিড় সংস্কৃতির সাথে আমার আত্মিক বন্ধন আরও    নিবিড়,দৃঢ় হয়েছে।  স্বজনবন্ধুরা ঠাট্টা করে বলেন, হোমল্যান্ড, আবার কবে যাচ্ছো?

 

অক্টোবর এলেই আর বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করে না। শরতের ওই ঝকঝকে নীল আকাশ, সাদা পুঞ্জ মেঘ, হঠাৎ করে এক পশলা বৃষ্টি সবকিছুর মধ্যেই কেমন একটা পালাই পালাই ভাব, মোটামুটিভাবে সারা ভারতবর্ষের আবহাওয়া এইসময় ভালো থাকে।  এমনই  এক শরতের দুপুরে, ননদের বাড়ী বেঙ্গালুরু থেকে, ডাবল ডেকার উদয় এক্সপ্রেসে, সালেমের উদ্দেশে যখন রওয়ানা হলাম তখন ঘড়িতে সোয়া দুটো বাজে ।  সুন্দর ঝকঝকে ট্রেন, প্যান্ট্রি কার থেকে কফি, স্ন্যাক্স নিয়ে গল্প করতে করতে, একটু ন্যাপও নিয়ে, রাত নটার একটু আগেই নেমে পড়লাম সালেম স্টেশনে। ঝকঝকে স্টেশন, রিটায়ারিং রুমে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম, ততক্ষণে গাড়ী ঠিক হয়ে গিয়েছে, অতঃপর যাত্রাশুরু ইয়ারকাদের পথে।

  

আলো ঝলমলে স্টিল সিটি সালেম ছাড়িয়ে পাহাড়ে ওঠা শুরু হল।  দুধারে জঙ্গল, কখনও কখনও রাতের আঁধারে বুনো ভালুক, শেয়াল হরিণ গাড়ির সামনে এসে যেতে পারে, আমাদের ড্রাইভার  ইউসুফ ভাই সেই গল্পই বলছিলেন, যদিও অন্ধকারের মধ্যে কোনও জ্বলজ্বলে চোখ খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা করেও পেলাম না, জানেন। সবার ভাগ্যে কি শিকে ছেঁড়ে? পাহাড়ি পথ, যেতে যেতে বুনো ফুলের গন্ধ পাচ্ছি, সুন্দর রাস্তা, রাস্তার দুধারে ইউক্যালিপটাসের জঙ্গল, পুটুস ফুলের ঝাড় হয়ে আছে, উঠছি, মাঝে মাঝেই হেয়ারপিন বেন্ড। সালেম থেকে ইয়ারকাদ মাত্র 28 কিলোমিটার কিন্তু তাতেই কুড়িটা হেয়ার পিন বেন্ডতাই যাদের অলটিচুড সিকনেস আছে, তাদের এই ঘনঘন  হেয়ারপিন বেন্ডে একটু সমস্যা হতে পারে।

 

       ইয়ারকাদ জনপ্রিয় ভিড়ে ঠাসা শৈলশহর হিসেবে প্রসিদ্ধি পায় নি একথা ঠিক, কিন্তু আস্তে আস্তে সপ্তাহান্তের ভ্রমণে, গাড়ী নিয়ে বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, কাছেপিঠের শহরগুলো থেকে আসা মানুষের সংখ্যা কিন্তু এখন বাড়ছে।  শহরের জনকোলাহল, থেকে অনেক দূরে শান্ত, সমাহিত জনপদ ইয়ারকাদ, জীবন এখানে থমকে গিয়েছে। শান্ত, নিস্তরঙ্গ সেই জীবন।


 

শৈলশহর ইয়ারকাদের প্রতিষ্ঠা ১৮২০ সালে সালেম শহরের জেলা কালেক্টর ডেভিড ককবার্ণের হাতে। তিনি প্রথমেই ওখানে চা, কফি, কমলা,আপেল, ন্যাসপাতির চাষ শুরু করেন। তাকেই এই শৈলশহরের প্রাণপুরুষ বলা হয়। ১৮৪০ সালে পাহাড়ে কৃষিজমি বাড়তে থাকে, নতুন করে শুরু হয় এলাচ, দারু চিনির চাষ।  কফি বাগিচা বাড়তে থাকে, সম্পন্ন মানুষেরা কফি বাগান কিনতে শুরু করেন।  যদিও আধুনিক ইয়ারকাদ প্রাণ পায় ১৮৪২ সালে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির তদানীন্তন গভর্নর থমাস মনরোর হাতে।

 

কিন্তু ইয়ারকাদের ইতিহাস আরও প্রাচীন।  ইয়ারকাদের 5 কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত প্রাচীন মন্দির অন্তত সেই কথাই বলে।  প্রস্তুর যুগের নিদর্শন এখানে পাওয়া গিয়েছে।

 

ইয়েরি বা ইয়ের তামিল শব্দ, অর্থ লেক, আর  কাদু বা কাদ কথার অর্থ জঙ্গল।  ইয়ারকাদ শহরকে ঘিরে রেখেছে ইয়ারকাদ লেক, চারপাশে তার ঘন সবুজ বনানী, দূরে শেভারয় পাহাড়।  শহরের কোলাহলে যখন শরীর, মন ক্লান্ত, তখন এই দূষণহীন, শান্ত, নির্জন  এই শৈল শহরে আপনি নিশ্চিত অবসর পাবেন।

 

কড়া শীত পড়ে না ইয়ারকাদে, তবে যারা গরমের হাত থেকে নিস্তার পেতে চান, তারা অনায়াসেই চলে আসতে পারেন এখানে।  সারা বছর অল্প ঠান্ডা, ঝিরঝিরে বৃষ্টি, কফি বাগিচার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া, কমলার বাগান, দুপাশে ইউকালিপটাসের দীর্ঘ সারি, বাতাসে এলাচ, দারুচিনির সুবাস,  বাড়িগুলোর  আপেল বাগান, ফলন্ত ন্যাসপাতি গাছে, ঝুলে থাকা রসালো ন্যাসপাতি, অক্টোবর মাসে কফি বাগানে লাল টুকটুকে কফি ফলের ভারে ঝুলে থাকা গাছ, কফি ফুলের সুবাস।  একর, একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা এস্টেট, সম্পন্ন গৃহস্থের খামারবাড়ি,  লেক থেকে অনেকখানি আঁকাবাঁকা চড়াই ভেঙ্গে প্যাগোডা পয়েন্টে সূর্যাস্ত দেখতে যাওয়ার সময় দুপাশে পরিত্যক্ত সাহেব বাংলো, প্যাগোডা পয়েন্টে দাঁড়িয়ে অলস বিকেল কাটানো, কাছের কিয়োস্কে দাঁড়িয়ে কফি, ভুট্টাসেদ্ধ খাওয়া, গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে পাহাড়ের বুকে, কমলা সূর্যটা কমলা রঙের বলের মতো হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে নীল পাহাড়ের বুকে, আঁধার নামে পাহাড়ে, ফিরতি পথে, গ্রামের দক্ষিণী স্থাপত্যে গড়ে ওঠা শেভারয় মন্দির দেখে রিসোর্টে ফেরা। প্যাগোডা ছাড়িয়ে আরেকটু এগিয়ে এসে দেখি, ছেলেদের পায়ে তখনও ফুটবল। গুমফার গেট বন্ধ হয়ে গেছে, সন্ধ্যার প্রার্থনা সারা, গ্রামে সরকারী ভ্যান চাল, ডাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বিকিকিনি চলছে, সংসারী মুখের ভিড় গাড়ির চারপাশে, পাহাড়ি পথ বেয়ে হাঁটা উৎরাইয়ের পথে, দোকানি বাড়ীর মধ্যেই গাজর, শালগম, ফুলকপি বাঁধাকপি, সেলারি পাতা, পালংশাক, টোম্যাটোর পসরা সাজিয়ে বসেছে, ছোট চায়ের দোকানে আড্ডা চলছে, প্রতিদিনকার সুখ দুঃখের কথা, হাতে চায়ের কাপ, বেকারীর বিস্কুট, আরও এগিয়ে দেখতে পাই বাড়িতেই বেক করা কেক বিস্কুট নিয়ে ছোট্ট আয়োজন নিজেরই বাড়ীর বারান্দায়।  পেছনে ঘন্টা ধ্বনি শুনে দেখি একাকী অরণ্যে ছোট্ট ঘোড়া হেঁটে চলেছে, এগিয়ে চলি, দেখি মস্ত বড়ো ফার্ম হাউসের সামনের অংশ জুড়ে ক্যাফে, পুরোদস্তুর ইংরেজি খানা মিলবে আবার দক্ষিণী দোসা, উত্তাপম ও আছে বইকি। রিসোর্টে ফিরে রুটি, ডাল ফ্রাই, মিক্সড ভেজ, আর চিকেন কারী খেয়ে, সারারাত বৃষ্টির রিমঝিম শুনতে শুনতে কখন ঘুমের দেশে চলে গিয়েছি নিজেই জানিনা।  পরদিন সকালে গাড়ী বলা আছে, শৈলশহর পরিক্রমায় বেরোবো।

 


প্রথমেই লেক, সদ্য বর্ষা গিয়েছে, লেক জলে টইটুম্বুর, লেকের জলে দীর্ঘ ছায়া গাছের,জলে  অপেক্ষমাণ বোট, শান্ত, নির্জন ইয়েরকাদকে আরও গভীরভাবে প্রত্যক্ষণের জন্য কিছুক্ষণ লেকের জলে ভেসে বেড়ানো যায়। লেক থেকে এবার ইকো ট্যুরিজম পার্ক, ঘন জঙ্গল, কিচিরমিচির কত পাখির ডাক, গাছের আড়াল থেকে সুমধুর স্বরে শিস দিয়ে চলেছে অজানা পাখি, কুবোপাখির কুব কুব ডাক, এগিয়ে চলেছি ভিউ পয়েন্টের দিকে, যে ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে দূরে সেভ্রয় পাহাড়ের বিয়ার্স কেভ (দুটো শিলা প্রস্তুরের এমন অবস্থান দেখে মনে হয়, ভালুকের গুহা),  হঠাৎ কিচির মিচির শব্দ, না পাখির ছানার নয়, বিরাট জায়গা জুড়ে টেন্ট করা হয়েছে, স্কুলের ইলেভেন টুয়েলভের এর ছেলেমেয়েরা ক্যাম্প করে আছে, নিজের ছেলেবেলার কথা, স্কুলের সাথে বেড়াতে যাওয়ার কথা মনে পড়ে।  ওখান থেকে বেরিয়ে, পরের গন্তব্য লেডিস সিট, জেন্টস সিট।  অনেকটা চড়াই, সবুজ গাছে ঢাকা, রেইন ট্রি র জঙ্গল পেরিয়ে লেডিস সিট, দুটো পাথর এমনভাবে রাখা যেন মনে হয়, ব্যাক রেস্ট সহ একটা চেয়ার, চেয়ারে বসে আরেকটা পা সামনের পাথরে দিয়ে গল্প করুন দুজনে, কেউ তাড়া দেবে না, শুধু পাহাড়ি গাছেরা আপনাদের গল্পকথার নীরব সাক্ষী হয়ে থাকবে। দূরে দেখা যাবে সালেম শহরটা, ভাগ্য সদয় হলে, ঝকঝকে আকাশ থাকলে, মেট্টুর বাঁধ ও দেখা যাবে।  পাশাপাশি জেন্টস সিট দেখা শেষ হলেই, গেটের সামনে আইস ক্রিম, ম্যাগি, চা, কফি  দিয়ে গলা একটু ভিজিয়ে নিয়ে, এবার হোলি ট্রিনিটি চার্চ, কাছেই  মন্টফোর্ড স্কুল, বিরাট প্লে গ্রাউন্ড, ঘন সবুজ ঘাসে ঢাকা, লাল টুকটুকে বাস্কেট বল খেলার বাস্কেট, শিশু যীশুকে কোলে নিয়ে মা মেরি হাসিমুখে আপনাকে স্বাগত জানাবে, এরমধ্যেই হুড়মুড়িয়ে নেমে পড়া বৃষ্টি, স্কুলের ভেতরেই অনাথ আশ্রমের দাওয়ায় আশ্রয় নিলাম, একদম নিস্তব্ধ, একটা পিন পড়ার আওয়াজ ও শোনা যাবে, স্টেশনারি জিনিসপত্র নিয়ে স্কুলের সামনে এসে দাঁড়ালো একটা ভ্যান, তখন জিনিসপত্র নামানো চলছে বৃষ্টির মধ্যেই, ঘন সবুজ গালিচার মতো মখমলি ঘাসের ওপর ঠিক যেখানে আকাশটা নেমে এসেছে, সেখানেই নীল পাহাড়ের সারি।  বৃষ্টিটা একটু ধরলো, দেরী না করে চার্চের দরজায়।  ছোট্ট শহরের চার্চ, বৃষ্টি ধোয়া আঙিনা  পেরিয়ে  গির্জার প্রবেশদ্বারে সাদা ডেইসি ফুলের ঝাড়, ছিমছাম, শান্ত প্রার্থনা ঘর, গথিক স্ট্রাকচার, লাল, নীল, হলুদ কাঁচের জানলা, প্রার্থনা ঘরে দু দন্ড বসে থাকতে ইচ্ছে করে, কোথাও সময়ের ভ্রূকুটি নেই, স্পট দেখার হুড়োহুড়ি নেই, অখণ্ড অবসর, দূরে ভেসে আসছে, স্কুলের বাচ্চাদের কোলাহল, এবার উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটা শুরু, দল বেঁধে হেঁটে আসছে স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছেলেমেয়েদের দল, হাসতে হাসতে হাত নেড়ে যায়। স্কুল ছুটির পর, গল্প করতে করতে হাঁটা, ভালো লাগে দেখতে, আরও কিছুদূর হাঁটি হোমমেইড চকোলেটের সন্ধানে, বাড়ীর বারান্দায় ছোট্ট চকোলেটের দোকান,  বিক্রেতা বাড়িতে তৈরী চকোলেট টেস্ট করান, কিছু কিনি, এমন কিছু ভালো মানের নয়, লোক্যাল ডেলিকেসি হিসেবেই কিনি।  এবার পাহাড়ি পথে কিছুক্ষণ নিজের সাথে নিজেরই হারিয়ে যাওয়ার পালা।  সংবিত ফিরতেই, তাড়াতাড়ি রিসোর্টের পথে, কাল সকালেই চেন্নাই ফেরা।

 


নির্জনতায় দু দন্ড পরিবারের সাথে কাটাতে যারা ভালোবাসেন, তারা দুদিনের জন্য আসতেই পারেন ইয়ারকাদ। তবে, একটা কথা, এখানে এসে কেউ ধ্যানগম্ভীর হিমালয়ের সন্ধানে যাবেন না, কোনও জনপ্রিয় শৈলশহরের সাথে তুলনায় যাবেন না, পূর্বঘাট, পশ্চিমঘাট পর্বতমালার নিজস্ব বর্ণ, গন্ধ আছে, তাই নিয়েই তারা স্বতন্ত্র।  আপনি যদি স্বাতন্ত্রে বিশ্বাসী হন, বৈচিত্রের সন্ধানী হন, তাহলে একটুও দেরী না করে বেরিয়ে পড়ুন, নিরাশ হবেন না।

| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

A Venture to Adventure-A duel with death- Kaushik Chakraborty

 A Venture to Adventure


A duel with death

Kaushik Chakraborty

Image Courtesy: Google Images
 

A small two-seater Fokker plane was on its way from Whitehorse to Dawson city in north-west Canada. It’s about just an hour’s journey. Captain Dave Richardson and his friend and first officer Joseph Procter were quite anxious to reach home early as it was their last return flight before the Christmas holiday begins. Lots of plans with their families for Christmas bubbling inside them anticipating the upcoming Christmas parties. Dave had loads of gifts, presents for his family and friends and cakes and chocolates for his beloved five-year-old son, Daniel. After getting due clearance from the Air traffic control (ATC), their flight took off at the right time at 5:15pm from Whitehorse. Both pilots were enjoying the last rays of the golden sun as it slowly faded away behind the horizon. During that time of the year generally the landscape of Canada was blanketed with thick layer of snow and ice and temperature hovers around -10 to -20 deg. C.  As darkness fell, the pilots then solely depended on instrument flying as the natural landmarks were no more visible. The plane set on autopilot was cruising at an altitude of 30,000 ft above sea level. Not much of air traffic was there at that time. Both pilots were relaxed and were enjoying some light talks and cups of hot coffee. As the plane flew further away, the pilots had some last conversation with the Whitehorse ATC before they handed over the radio controls to the ATC of the next zone i.e., Dawson city on a new frequency. Dave set the new frequency on his radio transmitter to tune into the ATC of Dawson city but couldn’t connect them. He waited for some time anticipating that a reduction in distance will perhaps lead to a better reception of the signals. But even after another 20 mins had passed, they failed to connect Dawson city ATC after repeated trials. Then things started getting a bit awry. Since Dave was handing the controls, first officer Joseph then tried to contact the ATC again and again but there was no response, as if the entire universe had plunged in an ocean of silence. It was almost 6:15 pm and by then they should have at least sighted the runway, if not landed. But it was pitch dark outside and without ATC’s help it was almost impossible to land the plane at their desired destination. As both the pilots were busy in trying to handle the critical situation, to add to their challenge a sudden mechanical alarm started ringing in the cockpit. Dave froze to see it was the “fuel alarm”. It was the last thing that they wanted. They needed to land the plane at the earliest, else the inevitable was going to happen. Last minute desperate attempts to contact the ATC was going on, when suddenly the left engine blew off due to dearth of fuel. The plane was then flying only on one engine. It was a mountainous terrain below. Dave held on to his controls and desperately tried to find a flat land where he could land his crippled plane. As he brought down the plane to a lower altitude, in the faint moonlight he could spot a nearby snow covered flat area on his left side. Taking a sharp left turn he aligned the plane with the flat area and as he was desperately maneuvering his plane, it dived down as the last trace of fuel burnt away from its second engine. He tried to crash land the plane on the snowy blanket as both friends bade goodbye to each other in choked voices thinking about the inevitable. It was a terrible touchdown. As it hit the ground, the plane bounced up and down on the snowy terrain several times and grazed on the ground for several hundred meters before it eventually came to a halt breaking into several pieces. The last thing Dave remembered was smashing his head on something and there was total blackout…

As Dave came in and out of consciousness he could not decipher where he was lying. Though bone chilling cold winds made him realize that he was perhaps lying on an open area on snow. A tremendous pain gripped his entire body and made him almost immobile. How long he was lying there he didn’t know. He opened his eyes as the first morning rays of the sun touched them. Despite intense pain, he slowly crawled out of the debris of the fuselage. He slowly sat up and tried to assess himself. His head was paining. He could see blood clots on his hand as he wiped his forehead. But then he realized that perhaps he was lucky enough not to suffer from any broken bones. Also, there was no fire due to the crash as there was no fuel left in the fuel tanks. It was indeed a miracle to be alive. As the intensity of daylight increased, he could assess the entire situation. Metal parts, sheared wings, broken engines, landing gears and other thousand parts of his plane laid strewn over a large area. There was not a single soul anywhere nearby who could lend them a helping hand. It was a hilly area covered with thick blanket of snow and ice everywhere and every direction looked the same as far as his eyes could see. White was the only colour which nature had in her display. He suddenly remembered that he was not alone in the plane. Where was Joseph? “Joseph, Joseph....” he cried out as loud as he could. He even felt pain while calling out and realized that his voice was also choking due to a sore throat perhaps due to a long exposure to extreme cold over the last night. He ran among the strewn debris everywhere searching frantically for Joseph. But he could not locate him, neither was there any response from him. He kept calling and searching for him, in every broken part which came his way. Finally, he could trace a shade of blue amidst the debris. Yes, Joseph was wearing a navy-blue jacket. For a moment his heart leapt with joy. He ran over to him and tried to pull him out, only to realize that Joseph was sandwiched between two badly mangled metal pieces. His body was lifeless. Tears swelled up his eyes as he frantically tried to free his body. Calling him by his name repeatedly and trying to pull him out of the debris. But his voice simply echoed in the hills and came back to him. He sat helplessly on the snow and cried out loud looking at the sky…” Why? Why?” Never had he imagined a day when he would have to handle his best friend’s body.

Dave lied down on the ground in utter helplessness and shock over his friend’s untimely demise. He could not decide his future course of actions, what to do, where to go in this desolate landscape. For how long he laid there he didn’t know. But then he realized that expecting human aid in any form was a far-reaching proposition. Only his actions could decide his fate. He dug up an area with a broken metal piece with a sharp edge and slowly pulled Joseph’s body and laid him there for his eternal rest. Now what? He didn’t know his location of crash. His cell phone was badly damaged in the crash as he hit himself against something hard after the crash. It was of no use. He must try to contact his nearest ATC through his radio as that now seems to be his only lifeline. He entered the cockpit which was reduced to a mangled cylindrical piece as both the ends were broken away. He located the radio transmitter among the mangled heap of debris. He tried to fix the damaged pieces and knobs. Putting on the earpiece he could hear a faint blurring sound. “Hello. Hello, ATC Dawson city, can you hear me?” But his repeated requests went in vain. He tried to fix it, but the net result – even the blurring sound died out. Frustrated, he banged the remains of the radio on the ground and sat down helplessly. Will the rescue team come for his help? But how will they find him? For how long he would have to stay there? Will he also die there like Joseph? A thousand questions passed his mind, but there were no answers.

It was almost midday as the sun was up in the zenith. Dave was feeling hungry. He had his last cup of coffee more than 18 hours back. He had food in the form of cakes, chocolates etc. with him, but they were all for his family. How could he eat them without his family? What about water? He had only one bottle. He started searching the boxes of cakes and chocolates. He could find them under a rubble. Some boxes were broken, but luckily some were intact. But the bottle of water has frozen due to exposure to sub-zero temperature. He only took two slices of cakes from one of the broken boxes, as he didn’t know how long he had to stay there before he was being rescued. He needed to preserve his ration as long as he could. He was feeling thirsty. But he couldn’t drink ice. He had to melt them before he could quench his thirst. But there was no source of fire nearby. He was a non-smoker, so he didn’t have any matches or lighter. What an irony of destiny- ice-ice everywhere but not a drop to drink. He started licking some ice particles. His entire mouth started painting due to intense cold. Though he had a little food, but without water he couldn’t survive much. What to do? Suddenly he remembered that Joseph was a smoker. He even had a cigarette before boarding the flight. Did he have any lighter with him? Must be. He ran to the grave of Joseph and started digging out his body frantically. After removing the upper layer of ice, he was shocked to see Joseph’s face. Few hours of ice cover have turned his body into pale whitish colour. He started searching for every pocket of his clothing. Finally, he could trace a lighter in the left inner pocket of his jacket. Through its transparent body he could see it was still half filled with gas. He was relieved. At least this lighter could be his lifeline for the time being. He was about to close the grave but on second thought he stopped. He slowly took out Joseph’s jacket. Joseph won’t be needing them any further, but he would. “Sorry Joseph, forgive me for being so inhuman”- he pleaded to the Almighty with tearful eyes. He covered Joseph’s grave and came back to the broken fuselage- his now makeshift home. At least it provided some little relief from the chilling winds. He searched few small twigs from a nearby tree. Took a small metal sheet and bend it like a small bowl. Placing some ice on it he lighted the twigs with the lighter and held the metal bowl on the fire. Never had he felt so happy to see ice turn to water in a few minutes. He drank it to his heart’s content. His wounds on his forehead had dried up a bit. It was luckily not of serious nature. He fixed some cotton and medicine which he had found in his emergency medical kit. For the entire day he waited patiently looking at the sky to spot any rescue team. As evening fell, he was feeling very tired due to terrible mental and physical exhaustion. He laid down in a corner to avoid the path of cold winds, placing Joseph’s jacket on his body as a blanket and slept over.

The next morning, he started feeling the sting of hunger. He only had two slices of cakes the day before. He again had two more slices which was certainly not enough for him. But he had to curtail his intake and ration his demand to cater to an uncertain future. He came out of the fuselage and looking at the morning sun, he could at least make out which was the east, as there was no other way out to determine the directions. He was supposed to fly in a north westerly direction from Whitehorse to Dawson city. As far he knew, there was no such mountainous terrain in between Whitehorse and Dawson city. Then how come he had landed in such a desolate mountainous area?  Had he by any chance drifted in any other direction? Such terrain was common in Alaska, which was further to the west. Where was he now? Was there any fault in his plane’s navigational instrument? May be that was why he was unable to connect his radio transmitter to Dawson city as he was perhaps moving further away from it instead of going near it. A thousand speculations passed Dave’s mind, but he could not get any answer. Then there was only endless wait for the rescue team to arrive. But how would they track him down? In the mornings it will be difficult for planes to track the debris of a white plane at the background of ice-covered terrain, and that too because the ice gives a glaring reflection against the sunlight. But what was bothering Dave was that for more than 24 hours he was unable to see any plane in the sky. Was it not the conventional flight route? In that case the possibility of tracking him down would be even grimmer. Dave was continuously swaying between hope and despair. At times he felt like screaming on top of his voice and let the world know he was trapped there. But he could not afford to lose hope. He had to hold on and return home to his loved ones.

Three days passed away, but Dave could not spot a single plane in the sky. He tried to venture in some directions to check out his exact location or if he could find any help nearby. But the place was surrounded by icy, hilly terrain with no human civilization nearby. As if he was trapped amidst an ocean of snow and ice. He had slowly started to lose hope. Had they stopped looking for him? No, no they must be still searching for him, he had to hold on. Gradually Dave could feel that intense hunger and thirst was making him weak day by day. The gas in his lighter would last only for a day or two at the most. Then what? What lies ahead of him- a slow death by starvation and thirst? Had God kept him alive to see this sort of miserable death? Dave could not think anymore. He felt so weak that he just felt like lying down. He closed his eyes in despair. For how long he laid there he didn’t know, but suddenly some familiar sound reverberated in the atmosphere. He opened his eyes and looked up in the sky. He could see nothing. He kept looking here and there as the sound still haunted his ears. It must be a plane. Suddenly from the back of a cloud he could spot a plane. But it was a commercial airliner, way too high is the sky to spot him. He still stood up and started to scream at the top of his voice waving Joseph’s blue jacket. If only they could see him once. But alas! The plane slowly disappeared as it flew further away. Dave’s weak body fell on the ice like a stone. He felt that he was losing hope. But again, he stood up mustering all courage. “I have to hold on” was his only motto in life then. How could he die without seeing his beloved son Daniel? He must be waiting impatiently for his dad to return home who would be bringing him his favourite chocolates. The picture of Daniel’s smiling face breathed in a sudden burst of energy in Dave. “Oh! God give me strength to hold on, I can never afford to leave my family this way. Without me how will they live?”- Dave prayed with utmost belief in the Almighty.

The pangs of hunger were getting unbearable day by day. Reluctantly Dave had to slowly consume all the cakes and chocolates he had and by the sixth day they were almost exhausted. The lighter also ran out of gas.  Dave could not produce water any further. In case of extreme thirst, he reluctantly had to chew and suck some ice which he knew was a dangerous thing to do. Chewing ice would eventually dehydrate him even faster. He had started feeling a peculiar numbness in his fingers. As he opened his gloves, he could see some of his fingers turned bluish white. He froze in fear. Dave knew these were the signs of frost bite. This could turn to gangrene if not treated immediately and he could lose his fingers. He started rubbing his hands as hard as he could to provide little warmth to his almost frozen fingers and improve blood circulation through them. He searched for some cotton from his medical kit. He wrapped the cotton around the numb fingers and tied them with his handkerchief. Then again wore the gloves on them. He felt slightly better.  Sheer existence was becoming challenging for Dave day by day.

At night as he was trying to sleep in the broken fuselage, he could hear chilly winds roaring outside. It was a deafening blizzard raging over. It appeared as if the sheer power of the bone chilling winds sweeping across the terrain would lift entire broken fuselage and throw it away down the hill along with him. The fuselage was shuddering violently in the gusty winds. That night was the most nightmarish night in his entire life. He curled himself up amidst the rubble and kept on tossing from side to side in a desperate attempt to keep himself warm. But his efforts were futile. The bone chilling winds were like stabbing him with thousand knives all over his body. He felt perhaps that was his last day and he would not be alive to see the next sunrise. The picture of his wife, son, parents, and friends started flashing in his mind. He was unable to sleep the entire night. In the early morning hours as the blizzard subsided, he managed to take a nap. When he woke up it was afternoon. He tried to get up, but he could not. For last two days he was literally starving. His entire mouth had run dry. He licked a few ice crystals. He suddenly felt a few drops of water in his mouth. It was nothing but his tears running down his cheeks and entering his mouth. He would perhaps die here in that snowy terrain, and nobody would ever find his body. Dave slowly went in a trance. A picture flashed in his mind. It was Daniel. He was crying in his mother’s lap. They were a few people gathered in somebody’s funeral. Whose funeral it was? He saw it was Dave lying in the coffin and Daniel sobbing by his side calling him repeatedly to get up and play with him. Dave jumped up. Why did he see this? Was his end near? No way, he mustered all his strength and literally crawled out of the fuselage on the thick snow. He saw that due to the blizzard last night, the entire topography had changed. There were huge piles of snow all round. The fuselage was barely hanging at the edge of a rock face overlooking a deep ravine. It had literally shifted by several feet due to the blizzard. He looked around. By that time his eyes were tired of watching the colour white. The eternal colour of peace then appeared as a colour of death. But he could not afford to surrender. He had to live for Daniel. He had to live for his family. But how could he? Nature had virtually stripped him off basic amenities of life. As Dave crawled on the snow inching out of the broken fuselage, he suddenly heard a familiar sound. He thought it might be an illusion. But the sound was increasing. Dave looked up and could not believe his eyes. It was a helicopter flying over. Dave tried to stand up, but his extreme weakness held him back. He tried to scream but his voice was almost choked. He could barely raise one of his hands towards the sky in a bid to signal his presence. The helicopter flew away. Dave dropped his head in despair. How could God be so unkind to him? Perhaps this was his last chance to survive. He might not make it any further. He could hear the sound of the helicopter fading away. Dave dropped his face on the snow and tried to cry but could not, as if all his tears had also dried up like his strength. The fading sound should have stopped completely by now. But its intensity was again increasing. Dave looked up again and to his utter disbelief he could see the helicopter circling around. He could not believe his eyes or ears. Was he hallucinating? No, it was getting bigger and bigger as it was coming closer. Mustering all his strength Dave stood up. His feet were shaking due to extreme weakness, but he waived at the approaching helicopter frantically with his blue jacket. Had they seen him? Dave was ecstatic. This was perhaps his last chance and he had to make it. By this time the helicopter was hovering over his head. The copter landed a few meters away from him and a man jumped down and ran towards him.

-Are you Mr. Dave Richardson?

Dave smiled and said, “Yes, do you have a little space in your helicopter to accommodate me for a lift?”

- I must appreciate your sense of humour even at this condition. We had been searching for you for a week and had almost lost all hope to find you.

Dave knew he was saved. As the copter pulled up, in the fading sunlight Dave saw the remains of his plane’s fuselage and bade goodbye to his friend for the last time. His experience in the last six days was more like a duel with death. It was a duel well fought, but he did not dare to say that he had won it, as he knew that he was almost on the verge of tipping over. With teary eyes and folded hands, he looked up in the Heavens to thank the Almighty to give him another chance to relive and reunite with his family.


| বর্ষ বরণ সংখ্যা-১৪২৯ | aleekpata.com | 29th Edition |

| ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |

| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |

| Bengali New Year, 2022 | April-June 2022 | Fifth Year Third Issue |

© All Rights Reserved by The Editor and The Publisher |

| a DISHA-The Dreamer Initiative |

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান